মালদা, 30 মে : ভাড়ায় দেওয়া হয়েছে সরকারি স্কুলঘর ৷ এমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের ৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক গ্রামের এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদকে প্রাইমারি স্কুলের একটি ঘর ভাড়া দিয়েছেন ৷ যদিও এখন গোটা স্কুল ভবনটিই সেই ভাড়াটের দখলে ৷ ওই রাজনীতিবিদ গ্রামে না থাকলেও তাঁর স্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক তাঁদের স্কুলের ঘর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন ৷ যদিও স্কুল ভাড়া দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক ৷ একই বক্তব্য সার্কেল প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শকেরও ৷ এদিকে খবর পেয়ে আজ সংবাদমাধ্যম ঘটনাস্থলে গেলে ভাড়াটের পরিবারের সদস্যরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন ৷ ঘটনাটি মানিকচক সার্কেলের সাহেবরামটোলা প্রাথমিক স্কুলের ৷
করোনার জেরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল ৷ তারই সুযোগ নিয়ে প্রধান শিক্ষক কণক সাহা এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লালমোহন মণ্ডলকে স্কুলের একটি হলঘর ভাড়া দেন বলে অভিযোগ ৷ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রায় ন’মাস ধরে স্কুলটি ব্যবহার করেছেন লালমোহনবাবু ৷ তিনি নতুন বাড়ি তৈরি করার জন্য পুরোনো ঘর ভেঙে দিয়েছিলেন ৷ তখন থেকেই তিনি ভাড়া করা স্কুলঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন ৷ সম্প্রতি বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ায় তিনি নতুন বাড়িতে চলে গিয়েছেন ৷ কিন্তু স্কুল ঘর ছাড়েননি ৷ এখনও সেখানে রয়েছে তাঁর গবাদি পশু ৷ রয়েছে গোখাদ্যও ৷
এক গ্রামবাসী অতুল মণ্ডল বলেন,“প্রধান শিক্ষক স্কুলের ঘর ন’মাসের জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন ৷ এনিয়ে আমরা প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলাম ৷ তিনি জানিয়েছিলেন, ভাড়াটে সরে যাবে ৷ কিন্তু এখান থেকে বাড়ি চলে গেলেও ওই ব্যক্তি এখনও স্কুলকে নিজের সম্পত্তি হিসাবে ব্যবহার করছেন ৷ স্কুলের ছেলেমেয়েরা আসলে তাদের বকাবকি করেন ৷ ভাড়াটের নাম লালমোহন ৷ এই এলাকার দালাল ৷ আগে তৃণমূল করত, এখন বিজেপি করে ৷ সব ধরনের কাটমানি খেতে অভ্যস্ত ৷ তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা চলছে ৷ লকডাউনে প্রধান শিক্ষকের বোধহয় টাকার অভাব ৷ তাই তিনি স্কুল ভাড়া দিয়েছেন ৷”
প্রধান শিক্ষক কণক সাহার বক্তব্য, “গ্রামবাসীরা মিথ্যে অভিযোগ করছে ৷ আমি শুনলাম, স্কুলে খড় রেখেছে ৷ আমি ওকে খড় সরাতে বলেছি ৷ ও জানিয়েছে, আগামীকালই খড় সরিয়ে নেবে ৷ আর স্কুলঘর ভাড়া দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তা ফালতু ৷ স্কুলের ঘর কাউকে ভাড়া দেওয়া হয়নি ৷ সম্প্রতি ও ঘর ভেঙেছিল ৷ স্কুলের দুই প্যারাটিচার আমাকে জানিয়েছিল, নতুন ঘর না হওয়া পর্যন্ত ও স্কুলের একটা ঘরে থাকতে চাইছে ৷ স্কুল বন্ধ থাকায় কিছুদিনের জন্য মালপত্র রাখতে ওকে একটা ঘর দেওয়া হয়েছিল ৷ এমনিতে স্কুলের ঘর কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া যায় না ৷ গ্রামবাসীদের কথায় আমি ওকে একটা ঘর দিয়েছিলাম ৷”
যদিও প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যের সঙ্গে লালমোহনবাবুর স্ত্রী রিংকু মণ্ডলের বক্তব্যে কোনও মিল নেই ৷ রিংকুদেবী বলেন,“সরকারি জায়গা আমি কি ব্যবহার করতে পারি না? ন’মাস নয়, লকডাউনে আমরা 10 মাস স্কুল ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম ৷ সরকারি অনুমতি নিয়ে আমি স্কুলের ঘর ব্যবহার করেছি ৷ দু’মাস ওখানে ছিলাম ৷ তারপরেই বাড়ি চলে এসেছি ৷ প্রধান শিক্ষক আমাদের স্কুল ঘর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন ৷”
আরও পড়ুন : কাঁচা রাস্তায় ভাঙছে বিয়ে, বাধা উচ্চশিক্ষায়; মালদায় বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের
মানিকচক সার্কেলের প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক মহম্মদ পারভেজের বক্তব্য আবার পুরোটাই অন্য ৷ তিনি বলেন,“গ্রামবাসীদের অভিযোগ পেয়ে আমি ওই স্কুলে লোক পাঠিয়েছিলাম ৷ জানতে পেরেছি, ওই স্কুলে কেউ থাকে না ৷ তবে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, যশের জন্য গ্রামের এক ব্যক্তি কয়েকদিনের জন্য স্কুলঘরে থাকার আবেদন করেন ৷ বিপর্যয়ের কথা ভেবে প্রধান শিক্ষক তাঁকে সেই অনুমতি দেন ৷”