মালদা, 20 মে: তিনটি ছোট্ট ঘর ৷ ঘর না-বলে খুপরি বলাই ভালো ৷ মাথায় শুধু ছাদটুকু রয়েছে ৷ এই বাড়িতেই ছ'জনের বাস ৷ গৃহকর্তা গ্রামে গ্রামে পেঁয়াজ-রসুন ফেরি করেন ৷ গৃহকর্ত্রী বিড়ি বাঁধেন ৷ দিনে পরিবারের আয় খুব বেশি হলে 400 টাকা ৷ সেই বাড়ি থেকেই এবারের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় রাজ্যে তৃতীয় হয়েছে মহম্মদ মুকতাদুর রহমান ৷ তার সাফল্যে উজ্জীবিত কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের কুশাবাড়ি গ্রাম ৷ উল্লসিত ফতেখানি বিএমএস হাই মাদ্রাসা ৷
মুকতাদুরের বাবা মহম্মদ সাহাদাত হোসেন একসময় দিনমজুরি করতেন ৷ এখন গ্রামে গ্রামে পেঁয়াজ-রসুন ফেরি করেন ৷ নিজে শিক্ষিত নন ৷ কিন্তু চার ছেলেমেয়ে যাতে শিক্ষিত হতে পারে তার জন্য চেষ্টার কসুর করেননি তিনি ৷ আধপেটা খেয়েও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ বড় মেয়ে স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন ৷ তারপরেই মুকতাদুর ৷ দ্বিতীয় ছেলে অষ্টম আর ছোট মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে ৷ ছেলের সাফল্যে এই মুহূর্তে তাঁর বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের ভিড় ৷ কিন্তু আড়ষ্টতার জন্য সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হননি তিনি ৷ তাঁর স্ত্রী সাবিনা খাতুন বলেন, "খুব কষ্টে সংসার চলে আমাদের ৷ ছেলেটাও খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে ৷ খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করত সে ৷ আজ তারই ফল পেল ৷ আমি খুব খুশি ৷ স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে গৃহশিক্ষকরাও ওকে খুব সহযোগিতা করেছেন ৷ তবে বড় হয়ে ও কী করবে এখনই বলতে পারব না ৷"
ছাত্রের সাফল্যে গর্বিত মাদ্রাসার শিক্ষিকা রুণা লায়লা এবং শম্ভু চৌধুরী ৷ রুনা জানান, তাঁরা আশা করেছিলেন মুকতাদুর পরীক্ষায় ভালো ফল করবে ৷ কিন্তু সে যে এতটা ভালো ফল করবে, সেটা ভাবেননি ৷ তার জন্য শিক্ষকরা গর্বিত ৷ মুকতাদুরের ভবিষ্যতের সাফল্য কামনা করছেন তাঁরা ৷ কুশাবাড়ি গ্রামের মহম্মদ তাসলিম আলি বলেন, "মুকতাদুরের ফলাফলে আমরা প্রচণ্ড খুশি ৷ ও খুব গরিব পরিবারের ছেলে ৷ এমন একটি পরিবারে থেকে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে ও যে ফল করেছে, তা এলাকায় উদাহরণ হয়ে থাকবে ৷ অর্থের অভাবে ছেলেটি কোনও মিশন কিংবা বড় প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি ৷ বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করেছে ৷ গ্রামের একটি টিউশন সেন্টারে কোচিং নিয়েছে ৷ আমাদের গ্রামে এর আগে এমন সাফল্য কেউ আনতে পারেনি ৷"
আরও পড়ুন: দারিদ্রতাকে সঙ্গী করেই অটোচালকের ছেলে মাধ্যমিকে দশম
উল্লেখ্য, এবারের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় 800 নম্বরের মধ্যে 774 পেয়েছে মুকতাদুর ৷ তার প্রাপ্ত মান বাংলায় 98, ইংরেজিতে 92, অংকে 100, ভৌত বিজ্ঞানে 98, জীবন বিজ্ঞানে 99, ইতিহাসে 95, ভূগোলে 95, ইসলাম পরিচয়ে 97 এবং দুই ঐচ্ছিক বিষয়ের মধ্যে আরবিতে 97 এবং ওয়ার্ক-ফিজিক্যাল এডুকেশনে 95 ৷ মুকতাদুরের বক্তব্য, "গরিবির সঙ্গে লড়াই করেই পড়াশোনা করেছি ৷ স্কুলের শিক্ষকরা, বিশেষ করে অংকের শিক্ষক আমাকে ভীষণ সাহায্য করেছেন ৷ বাড়ি থেকেও ভালো সাপোর্ট পেয়েছি ৷ বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই আমার লক্ষ্য ৷ হাই মাদ্রাসার ফলে আমি খুব খুশি ৷"