মালদা, 21 জুন: সৈয়দ শামিম, দিলবার হোসেনরা এখন কেরলে ৷ মহম্মদ রব্বানি, অখতারুল শেখ, আসবার আলিরা সবাই চেন্নাইয়ে ৷ আবার সন্তোষ ঘোষের মতো অনেকে ওডিশায় ৷ তাঁরা সবাই মালদার বাসিন্দা ৷ পরিযায়ী শ্রমিক ৷ পেটের টানে ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছেন ৷ মালদার এই শ্রমিকরা এখন ছেয়ে রয়েছেন সারা দেশে ৷ দেশের নির্মাণ কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছে মালদা জেলা যেন পরিযায়ী শ্রমিকের হাব ৷ প্রশাসন সূত্রেই জানা যাচ্ছে, এই জেলার অন্তত তিন লাখ শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজ করছেন ৷
যে কোনও নির্বাচনে সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে এই শ্রমিকরা বড় সম্পদ ৷ তাই ভোট এলেই এই শ্রমিকদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিতে দেখা যায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৷ আগামী 8 জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন এ রাজ্যে ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিযায়ীদের মধ্যে ভোট দিতে বাড়ি ফিরে আসার তেমন উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না ৷ তবে এ বারের ঈদুজ্জোহা রাজনৈতিক দলগুলিকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে ৷ প্রতিটি দলের নেতৃত্ব আশা করছে, ঈদে প্রচুর শ্রমিক ঘরে ফিরে আসবেন ৷ তাঁরা নিশ্চয়ই ভোট দিয়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরবেন ৷ যদিও এমনটাও হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৷
কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে কর্মরত রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের পরিযায়ী শ্রমিক সৈয়দ শামিম জানাচ্ছেন, “29 জুন ঈদ, 8 জুলাই ভোট ৷ ঠিকাদারকে জানিয়ে রেখেছি, এ বার বড় ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি ৷ ঈদুজ্জোহায় বাড়ি যাব ৷ ঠিকাদার এখনও কিছু জানাননি ৷ তবে এখানে কাজের ভীষণ চাপ ৷ ঈদে বাড়ি যেতে পারলেও কিছুতেই 5-6 দিনের বেশি বাড়িতে থাকতে পারব না ৷”
এই ব্লকেরই দেবীপুর এলাকার সন্তোষ ঘোষ বর্তমানে ওডিশায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় কর্মরত ৷ সেখান থেকে তিনি জানান, “এতদূর থেকে শুধুমাত্র ভোট দিতে বাড়ি ফেরা সম্ভব নয় ৷ আমরা গরিব মানুষ ৷ এখানে খেটে টাকা পাঠালে ঘরে সবার খাবার জোটে ৷ এখন আর কাছ ছেড়ে বাড়ি যাব না ৷ আর ভোট দিতে বাড়ি ফিরতেই হবে, সেটা কোথায় লেখা রয়েছে !”
পরিযায়ীদের এই নির্বাচন নিস্পৃহতা ভাবিয়ে তুলছে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৷ যদিও এখনও হাতে অনেকটা সময় রয়েছে বলে ভাবছে সবাই ৷ তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলছেন, “এই নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষ আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন ৷ যে প্রতিনিধিরা আগামী পাঁচ বছর এলাকার কাজ করবেন ৷ মানুষের পাশে থাকবেন ৷ শুধু পরিযায়ী শ্রমিকরাই নন, কর্মসূত্রে বহু সরকারি কর্মী, অন্য পেশার মানুষ, এমনকী পড়ুয়ারাও বাইরে রয়েছেন ৷ সবার কাছে আমাদের আবেদন, তাঁরা যেন এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে নিজেদের মতামত প্রদান করেন ৷ এলাকার উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে তাঁরা যেন তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করেন ৷ তবে কেউ যেন বিরোধীদের টাকার কাছে মাথা বিক্রি না করেন ৷”
আরও পড়ুন: অ্যাম্বুলেন্সে করে প্লাস্টিকে মুড়ে ছুটিতে বাড়ি ফিরলেন পরিযায়ী শ্রমিক সাগর
সিপিএমের রতুয়া 1 নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক নজরুল ইসলামের বক্তব্য, “এটা নিশ্চিত, পরিযায়ী শ্রমিকরা পকেটের টাকা খরচ করে শুধুমাত্র ভোট দিতে আসবে না ৷ শ্রমিকদের অনেকে ঈদে বাড়ি আসবে ৷ কিন্তু ভোট পর্যন্ত তাঁরা বাড়িতে থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৷ যাঁরা আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের অনেকে দলের টানে ভোট দিতে বাড়ি ফেরেন ৷ পরিযায়ীদের ভোট পেতে তৃণমূল এ বার টাকার লোভ দেখাচ্ছে ৷ কিন্তু সবাই প্রাণের ভয়ে রয়েছে ৷ গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের ধারণা, এ বারও তৃণমূল ভোটে সন্ত্রাস, লুটপাট চালাবে ৷ এই শ্রমিকদের কাছে টাকার থেকে প্রাণ বাঁচানোটাই আগে ৷”
বিজেপির রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের আহ্বায়ক অর্ধেন্দুশেখর সিংহের মতে, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যে উৎসাহ থাকত, এ বার তা নেই ৷ তবে সবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ হল ৷ নির্বাচন এখনও দেরি রয়েছে ৷ তাই এ নিয়ে এখনও আমরা কোনও চিন্তাভাবনা করিনি ৷ আমাদের একটাই দাবি, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক ৷ তার জন্য আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ৷”