মালদা, 24 নভেম্বর: শেখ ইয়াসিন ৷ মালদার রতুয়ার রাজনীতিতে 2021 বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে এই নামটি বেশ আলোচিত ৷ তাঁর স্ত্রী জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হলেও তৃণমূলের হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পাওয়ায় নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ নির্বাচনে গোহারা হেরেছিলেন ৷ মনে করা হয় স্ত্রীকে নির্দল হিসেবে দাঁড় করানোর পিছনে শেখ ইয়াসিনের ভূমিকা ছিল ৷ তবে শেখ ইয়াসিন বিজেপিতে যোগ দিলেও, তাঁর স্ত্রী যাননি ৷ কিন্তু ঘাসফুল নেতৃত্বের বিরাগভজন হতে হয়েছিল তাঁকে ৷ শুধু কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারিত করা নয়, তাঁকেও তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল ৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে সেই শেখ ইয়াসিন ফের তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়েছেন (local leader of Ratua returns to TMC from BJP) ৷ বুধবার কলতাকায় তাঁর হাতে ঘাসফুলের ঝান্ডা তুলে দিয়েছেন আরেক বিজেপি ফেরত তৃণমূল নেতা মুকুল রায় ৷ বিষয়টি নিয়ে বিজেপির থেকেও বেশি আক্রমণাত্মক মালদা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ শেখ ইয়াসিনকে দলে ফেরত নিতে অস্বীকার করেছেন খোদ তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ এ নিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাও বলেছেন বলে তাঁর দাবি ৷ রাজ্যের শাসকদলের অন্দরমহলের এই তর্জা জমিয়ে উপভোগ করছে পদ্ম শিবির ৷ তাও আবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে (political controversy sparks in Ratua Malda)৷
আরও পড়ুন: 'কয়লা চুরি বন্ধ করতে হবে রাজ্য সরকারকেই', দাবি প্রহ্লাদ জোশির
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শেখ ইয়াসিনকে দলের সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি পদে বসায় পদ্ম শিবির ৷ তারপরেও এই দলবদল প্রসঙ্গে কলকাতা থেকে তিনি ফোনে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করেছি ৷ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির এক নেতা আমাকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভয় দেখাতে শুরু করেন ৷ আমাকে দু’বার নোটিশও ধরানো হয় ৷ ভয়ে বাধ্য হয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম ৷ কিন্তু বিজেপিকে মন থেকে কোনওদিনই মানতে পারিনি ৷ তাই আমি এবং আমার স্ত্রী পায়েল খাতুন মুকুল রায়ের হাত ধরে ফের তৃণমূলে যোগ দিলাম ৷”
ইয়াসিন কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভয়ের কথা বলছেন বটে, কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি একাই পদ্ম শিবিরে যোগ দেননি ৷ গেরুয়া দলে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রায় তিন ডজন তৃণমূল নেতা-নেত্রীকে ৷ জেলার রাজনৈতিক মহল বলছে, ক্ষমতালোভী ইয়াসিন পঞ্চায়েত ভোটে স্ত্রীকে জোড়াফুলের প্রার্থী করতেই ফের শাসক শিবিরে ভিড়েছেন ৷ বরাবর বিতর্কিত এই নেতা আরও একবার ঘাসফুলের ঝান্ডা হাতে নিলেও তাঁকে আর দলে ফেরত নিতে রাজি নয় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ দলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি সাফ বলেছেন, “রাজ্য কমিটির সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, এখানে কাউকে দলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি ৷ ইয়াসিনকেও দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, ইয়াসিনকে দলে ফেরানোর ব্যাপারে তাঁরা কোনও অনুমোদন দেননি ৷ তাই ইয়াসিন আমাদের দলের কেউ নয় ৷”
আরও পড়ুন: 5 লাখ দিয়ে এক কোটি জেতা লটারির টিকিট ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূলের লোকজন !
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে শাসকদলের অন্দরের এই তর্জা তারিয়ে উপভোগ করছে বিজেপি শিবির ৷ দলের উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উজ্জ্বল দত্তের বক্তব্য, “কে কোন দলে যাবেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত৷ কেউ কাউকে আটকে রাখতে পারে না ৷ কিন্তু কেউ একটি সর্বভারতীয় দল ছেড়ে আঞ্চলিক দলে গেলে বুঝে নিতে হবে, এর পিছনে কী কী কারণ রয়েছে ৷ তবে ইয়াসিনের স্ত্রী কোনওদিনই আমাদের দলে ছিলেন না ৷ আর ইয়াসিনকে নিয়ে তো তৃণমূলের ভিতরেই ঝামেলা শুরু হয়েছে ৷ এতে আমাদের দলে কোনও প্রভাব পড়বে না ৷ দল নিজের গতিতেই চলে ৷ মুকুল রায়ও বিজেপিতে ছিলেন ৷ চলে গিয়েছেন ৷ দলে তার কোনও প্রভাব পড়েনি ৷ বিজেপি একটি সর্বভারতীয় দল ৷ এই দল থেকে কেউ বেরিয়ে গেলে দলে তার কোনও প্রভাব পড়ে না ৷”