মালদা, 19 অক্টোবর : সাইকেল চোর সন্দেহে শিক্ষককে দলবল নিয়ে মারধর, তাঁর পিছনে কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এখনও অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিল না পুলিশ । শুধু তাই নয়, এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ নাকি এলাকাতে তদন্তে যায়নি । যদিও পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে । তবে এ নিয়ে শোরগোল ছড়িয়ে পড়েছে মালদা শহরজুড়ে ।
এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে মালদা শহরের মালঞ্চপল্লি এলাকায় । রবিবার ওই এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন হবিবপুর ব্লকের মানিকোড়া হাইস্কুলের শিক্ষক সুদীপ টুডু (31) । তাঁর বাড়ি গাজোলের বিবেকানন্দ পল্লিতে । তাঁর বাবা লক্ষ্মণ টুডু ব্যাঙ্ক আধিকারিক । ঘটনা প্রসঙ্গে শিক্ষক সুদীপ বলেন, "আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে ইংরেজবাজার পৌরসভার 3 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরী সাইকেল চোর সন্দেহে হঠাৎ আমাকে মারধর শুরু করেন । তাঁর কয়েকজন অনুগামীও মারধরে হাত লাগায় ।" তিনি জানান, মারতে মারতে তাঁকে পরিতোষবাবুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় । তাঁর শিক্ষক পরিচয় দেওয়ার পরেও থামেননি স্থানীয় কাউন্সিলর পরিতোষ ৷ সুদীর বলেন, "আমি একজন স্কুল শিক্ষক । আমার চারচাকার গাড়ি রয়েছে । সেই গাড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছি । চাবিও দেখাই ৷ কিন্তু তিনি আমার কোনও কথা শোনেননি ।" বরং উল্টে কাউন্সিলর তাঁর বাড়ির পোষা কুকুরটিকে লেলিয়ে দেন সুদীপের উপর । তাই শুধু মারধর নয়, কুকুরের কামড়ও খেতে হয়েছে শিক্ষককে । স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, "প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলরই আমার উপর অত্যাচার করেছেন ।"
আরও পড়ুন : BJP Protest : বাংলাদেশের মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে মালদায় বিজেপির ধিক্কার মিছিল
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার পরিতোষবাবুর বাড়ি থেকে একটি সাইকেল চুরি হয় । তা দেখতে পেয়ে কাউন্সিলর নিজেই চোরের পিছনে তাড়া করেন । কিন্তু চোরকে তিনি ধরতে পারেননি । উদ্ধার হয়নি সাইকেল । ঠিক সেই সময় মালঞ্চপল্লি সাবওয়ের কাছে সুদীপবাবুকে দেখতে পেয়ে অপরিচিত শিক্ষককে চোরাই চক্রের সদস্য মনে করেন পরিতোষ চৌধুরী । তাঁকে মারধর করেন, কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয় । দীর্ঘক্ষণ নির্যাতন চালানোর পর সুদীপবাবুকে মালদা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।
ঘটনার কথা চাউর হলে কাউন্সিলর বুঝতে পারেন হাওয়া সুবিধের নয় । গোটা বিষয়টি মিটমাটের জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মেডিক্যালে যান পরিতোষবাবু । সুদীপ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন । কাউন্সিলরের দাবি, "আমার বাড়ি থেকে একটি সাইকেল খোয়া গিয়েছিল । সেই ঘটনা নিয়ে একটি সমস্যা হয়েছিল । সাবওয়ে গেটের কাছে কিছু মানুষ ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে । খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি । শুনতে পেলাম, গাজোলের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি একজন শিক্ষক ।" তাঁর আরও দাবি, শিক্ষকের পরিচয় পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় । তিনি জানান, সুদীপ টুডুর সামান্য আঘাত লেগেছে । তিনি বলেন, "তাঁকে দেখতে হাসপাতালেও গিয়েছিলাম । তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি । আমার বাড়িতে চুরিকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটায় আমি অনুতপ্ত । ক্ষমা চাইছি ।"
তবে কাউন্সিলরকে এত সহজে ছেড়ে দিতে নারাজ সুদীপবাবুর বাবা লক্ষ্মণ টুডু । তিনি বলেন, "কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরী চোর সন্দেহে আমার ছেলেকে মারধর করে হাসপাতাল পাঠিয়ে দিয়েছেন । ছেলের উপর বাড়ির কুকুর লেলিয়ে দিয়েছেন । ছেলে ওই এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল । ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটে ।" হাসপাতালে পরিতোষ চৌধুরী তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা জানান আহত সুদীপ টুডুর বাবা । তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "কিন্তু আমরা এত সহজে ছেড়ে দেব না । পরিতোষ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমি ইংরেজবাজার থানায় এফআইআর দায়ের করেছি ।"
আরও পড়ুন : Police Injured : জালনোট কারবারিকে ধরতে গিয়ে কালিয়াচকে আক্রান্ত পুলিশ, জখম 8
শুধু পরিতোষ চৌধুরী নয়, এই ঘটনায় মোট 10 জনের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন লক্ষ্মণ টুডু । কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা, পুলিশ এখনও এলাকাতেও যায়নি বলে অভিযোগ । এ নিয়ে ইংরেজবাজার থানার আইসি কিংবা অন্য কোনও অফিসার মুখ খুলতে নারাজ । তবে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া আশ্বাস দিয়েছেন, অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে । ওই শিক্ষক অবশ্যই সুবিচার পাবেন ।