মালদা, 25 জুলাই : অনুত্তীর্ণ উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্রীদের পথ অবরোধ তুলতে লাঠি চার্জ করতে উদ্যত হল পুলিশ ৷ শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে হবিবপুর থানার বুলবুলচণ্ডী এলাকার মালদা-নালাগোলা রাজ্যসড়কে । এদিনের বিক্ষোভে এক ছাত্রী, আরেকজন ছাত্রীর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ তাঁরা স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন । যদিও লাঠিচার্জের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ । তবে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । এদিকে, কাউন্সিলের ভুলেই স্কুলের ছাত্রীদের রেজাল্ট খারাপ হয়েছে বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের ।
উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশে পর দেখা যায় বুলবুলচণ্ডী আরএনরায় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের 50 শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করেছেন । স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের মোট পরীক্ষার্থী ছিল 176 জন । তাঁর মধ্যে পাশ করেছে 88 জন । এই ফল দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্রীরা । শুক্রবার শংসাপত্র বিতরণের সময় স্কুলে বিক্ষোভ দেখান অনুত্তীর্ণ দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা ।
আরও পড়ুন : HS Result : উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে অসন্তুষ্ট, বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ পরীক্ষার্থীদের
স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকেরা সে কথা শোনেননি । প্রথমে স্কুলের মধ্যে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে পড়ুয়ারা । পরে মালদা নালাগোলা রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা । ওই সময় ঘটনাস্থল দিয়ে যাচ্ছিলেন হবিবপুরের বিধায়ক জুয়েল মুর্মু । বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি । বিধায়ক বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন । এদিকে, অবরোধের জেরে এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হলে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হবিবপুর থানার পুলিশ । দফায় দফায় বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে । কিন্তু বিক্ষোভকারীরা নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে রাজি হননি । অভিযোগ, এর পরে অবরোধ তুলতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকের উপর । যদিও লাঠিচার্জের বিষয়টি অস্বীকার করেছে হবিবপুর থানার পুলিশ ।
এক বিক্ষোভকারী ছাত্রী বলেন, "আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পথ অবরোধ করেছিলাম । পরে পুলিশ এসে আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে । সেই সময় হুড়োহুড়িতে এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার নিজেই পড়ে যান । আমি ওনাকে রাস্তার ওপারে রেখে আসি ।" এরপর পুলিশ তার উপরেও লাঠিচার্জ করে । দু'জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছ বলে জানায় ছাত্রীটি । তাঁদের মধ্যে একজনের স্যালাইন চলছে । পড়ুয়া আরও জানায় যে, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মঙ্গলবার স্কুলে এসে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে বলেছেন । তবে বিষয়টি সমাধান হতে 2-4 মাস লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পড়ুয়ারা । প্রধান শিক্ষিকা আশ্বস্ত করেছেন তাঁদের সকলকে পাশ করিয়ে দেওয়া হবে । আরেক বিক্ষোভকারী ছাত্রী সোনালি সরকার বলেন, "আমরা তো কোনও অন্যায় করিনি, পুলিশ কেন লাঠিচার্জ করবে । আমরা নিজেদের ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম ।" তাঁর অভিযোগ, পুলিশ স্কুলের শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করেছে । গতকাল যদি শিক্ষিকারা বলে দিতেন যে তাঁরা চেষ্টা করছেন, তাহলে তাঁরা এভাবে রাস্তায় নামতেন না, বলে জানিয়েছেন সোনালি ৷
আরও পড়ুন : HS Result : পাশ করাতে হবে ! অবরোধের পাশাপাশি স্কুলে চলল চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর
অন্যদিকে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ঝুম্পা মজুমদার বলেন, "আমাদের স্কুলের ছাত্রীদের রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। আমার যতদূর মনে হচ্ছে আমরা যে মার্কস পাঠিয়েছি, তার সঙ্গে ছাত্রীদের যে মার্কস এসেছে, তাতে কিছু টেকনিক্যাল ভুল রয়েছে ।" তাই স্কুলের ছাত্রীদের এমন ফল এসেছে । তিনি আশ্বস্ত করে বলেছেন, "আমি কাউন্সিলে যোগাযোগ করেছি । কাউন্সিল থেকে ছাত্রীদের মার্কশিট ও খাতা নিয়ে যেতে বলা হয়েছে । আগামীকাল আমি যাব ।" ছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি জানিয়েছেন যে, মেয়েরা অবরোধ করেছে । কিন্তু এতে কোনও লাভ নেই । বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ডিওয়াই, বিডিও অফিসে যোগাযোগ করলে স্কুলের শিক্ষিকারা তাঁদের বোঝান যে, সেখানে গিয়ে কী হবে ? শিক্ষিকারা বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছেন ৷