ETV Bharat / state

Behula River : এক কোদাল মাটিও তোলা হয়নি, কাগজে কলমে নদী সংস্কারের 100 শতাংশ কাজ শেষ - Behula River

দীর্ঘদিন ধরে বেহুলা নদী ধীরে ধীরে চুরি হয়ে গিয়েছে (Behula River) । নদীর বুকে গজিয়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা ৷ নদী সংস্কারের দাবিতে সরব হন নদীপাড়ের মানুষজন ।

Behula River news
নদী সংস্কারের দাবিতে সরব হন নদীপাড়ের মানুষজন
author img

By

Published : May 27, 2022, 10:35 PM IST

মালদা, 27 মে : মনসা মঙ্গল থেকে এই নদীর নামের উৎপত্তি (Behula River)। কথিত রয়েছে, এই নদী দিয়েই সর্পাহত স্বামীর মৃতদেহ ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বেহুলা । তখন থেকে এই নদীও বেহুলা নামে পরিচিত । মহানন্দা থেকে উৎপত্তি হয়ে এই নদী মিশেছে টাঙনে । নদীর বেশিরভাগ অংশই পুরাতন মালদা ব্লকের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেই নদী ধীরে ধীরে চুরি হয়ে গিয়েছে । নদীর বুকে গজিয়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা ।

যেখান থেকে নদীর উৎপত্তি, সেই মহানন্দার মুখও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে নদী চোরের দল । ফলে শুধুমাত্র বর্ষাকাল ছাড়া বেহুলা নদীতে এখন তেমন আর জল থাকে না । প্রায় 35 বছর ধরে এই নদী সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছিলেন নদীপাড়ের মানুষজন । তাঁদের দাবি মেনে নিয়ে রাজ্য সরকার 2019-20 অর্থবর্ষে বেহুলা নদী সংস্কারের উদ্যোগ নেয় । প্রাথমিক পর্যায়ে বরাদ্দ করা হয় প্রায় 54 লক্ষ টাকা । পরবর্তীতে আরও অর্থ বরাদ্দ হয় । সব মিলিয়ে বরাদ্দকৃত টাকার অঙ্কটা প্রায় এক কোটি । ওই ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে নদী সংস্কারের কাজে হাত পড়ে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায় । স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী থেকে এক কোদাল মাটিও কখনও কাটা হয়নি । অথচ এই কাজে প্রথম পর্যায়ের সমস্ত টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে ।

সাহাপুর পঞ্চায়েত এলাকারই বাসিন্দা সনাতন ঘোষ । বেহুলার ধারে তাঁর কৃষিজমি রয়েছে । তিনি বলেন, "নদীর অবস্থা খুব খারাপ । পাঁচ বছর ধরে শুনছি নদীর সংস্কার হবে । নদী সাফ করা হবে, মাটি তোলা হবে । কিছুই হয়নি । অনেকদিন ধরেই শুনছি, নদী সংস্কারের টাকা আসছে । কিন্তু সব টাকা খেয়ে নিচ্ছে । এই নদীর সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে । কিন্তু নদীটাই আর নেই ।" এনিয়ে এলাকার বাসিন্দা তথা শিবসেনার জেলা সভাপতি উত্তম নন্দী বলেন, "আমরা আজ বেহুলা নদীর ধারে শ্মশানে দাঁড়িয়ে রয়েছি । এই নদীর কোথাও সংস্কারের ছিটেফোঁটাও দেখতে পাওয়া যাবে না । প্রশাসনও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিলিজুলি কারসাজিতে বেহুলা সংস্কারের সব কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । গোটা নদী এখন কচুরিপানায় ভর্তি । এই নদী সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে । বেহুলা নদীর সংস্কার হলে এই শ্মশানে যাঁরা শবদেহ সৎকারের জন্য আসেন, তাঁরা নদীর জল ব্যবহার করতে পারবেন । এনিয়ে পুরাতন মালদার বিডিওর কাছে একাধিকবার ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে । ঘটা করে বেহুলা সংস্কারের কাজের উদ্বোধন করা হয়েছিল । লাখ লাখ টাকা বরাদ্দও করা হয়েছিল । সেই টাকা কোথায় গেল ? এ নিয়ে বিডিও কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রীর কোনও জবাব নেই । আমাদের ধারণা, এই টাকা নিয়ে বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে । আমরা সেই দুর্নীতির তদন্ত এবং অবিলম্বে নদী সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি ।"

নদী সংস্কারের দাবিতে সরব হন নদীপাড়ের মানুষজন

আরও পড়ুন : মমতা-সাক্ষাতে মালদা থেকে সাইকেলে কলকাতায় আসবে আট বছরের সায়ন্তিকা

সরকারি কাগজপত্রে বেহুলা নদী সংস্কারের কাজ শেষ হলে গেলেও আদপে যে তা কিছুই হয়নি, তা মেনে নিচ্ছেন সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান অনেককুমার ঘোষ । তিনি বলেন, "এই পঞ্চায়েতের পূর্বতন প্রধান উকিল তিন বছর আগে বেহুলা সংস্কারের একটি স্কিম 100 দিনের কাজ প্রকল্পে জমা দিয়েছিলেন । জেলা প্রশাসনের তরফে সেই স্কিম পাসও হয়েছে । এই স্কিমের কাজ প্রায় 100 শতাংশই হয়ে গিয়েছে । তবে সেটা খাতায় কলমে । সরেজমিনে সেই কাজের 50 শতাংশই বাকি রয়েছে । বেহুলা একটি ঐতিহাসিক নদী । এই নদীর সংস্কার হলে শুধু নিত্যদিনের কাজকর্ম নয়, প্রচুর কৃষকও উপকৃত হবেন । কারণ, এই নদীর জলেই হাজার দুয়েক বিঘা জমির চাষ হয় । এখন নদীতে জল থাকায় মাটি তোলা যাচ্ছে না । তাছাড়া আগের প্রধান কীভাবে কাজ করেছেন, আমি কীভাবে কাজ করব, সেটাও প্রশাসনকে জানাতে হবে । তবে এই কাজের জন্য প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল । এখনও পর্যন্ত প্রায় 57 লাখ টাকার বিল মেটানো হয়েছে ।"

মালদা, 27 মে : মনসা মঙ্গল থেকে এই নদীর নামের উৎপত্তি (Behula River)। কথিত রয়েছে, এই নদী দিয়েই সর্পাহত স্বামীর মৃতদেহ ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বেহুলা । তখন থেকে এই নদীও বেহুলা নামে পরিচিত । মহানন্দা থেকে উৎপত্তি হয়ে এই নদী মিশেছে টাঙনে । নদীর বেশিরভাগ অংশই পুরাতন মালদা ব্লকের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেই নদী ধীরে ধীরে চুরি হয়ে গিয়েছে । নদীর বুকে গজিয়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা ।

যেখান থেকে নদীর উৎপত্তি, সেই মহানন্দার মুখও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে নদী চোরের দল । ফলে শুধুমাত্র বর্ষাকাল ছাড়া বেহুলা নদীতে এখন তেমন আর জল থাকে না । প্রায় 35 বছর ধরে এই নদী সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছিলেন নদীপাড়ের মানুষজন । তাঁদের দাবি মেনে নিয়ে রাজ্য সরকার 2019-20 অর্থবর্ষে বেহুলা নদী সংস্কারের উদ্যোগ নেয় । প্রাথমিক পর্যায়ে বরাদ্দ করা হয় প্রায় 54 লক্ষ টাকা । পরবর্তীতে আরও অর্থ বরাদ্দ হয় । সব মিলিয়ে বরাদ্দকৃত টাকার অঙ্কটা প্রায় এক কোটি । ওই ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে নদী সংস্কারের কাজে হাত পড়ে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায় । স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী থেকে এক কোদাল মাটিও কখনও কাটা হয়নি । অথচ এই কাজে প্রথম পর্যায়ের সমস্ত টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে ।

সাহাপুর পঞ্চায়েত এলাকারই বাসিন্দা সনাতন ঘোষ । বেহুলার ধারে তাঁর কৃষিজমি রয়েছে । তিনি বলেন, "নদীর অবস্থা খুব খারাপ । পাঁচ বছর ধরে শুনছি নদীর সংস্কার হবে । নদী সাফ করা হবে, মাটি তোলা হবে । কিছুই হয়নি । অনেকদিন ধরেই শুনছি, নদী সংস্কারের টাকা আসছে । কিন্তু সব টাকা খেয়ে নিচ্ছে । এই নদীর সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে । কিন্তু নদীটাই আর নেই ।" এনিয়ে এলাকার বাসিন্দা তথা শিবসেনার জেলা সভাপতি উত্তম নন্দী বলেন, "আমরা আজ বেহুলা নদীর ধারে শ্মশানে দাঁড়িয়ে রয়েছি । এই নদীর কোথাও সংস্কারের ছিটেফোঁটাও দেখতে পাওয়া যাবে না । প্রশাসনও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিলিজুলি কারসাজিতে বেহুলা সংস্কারের সব কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । গোটা নদী এখন কচুরিপানায় ভর্তি । এই নদী সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে । বেহুলা নদীর সংস্কার হলে এই শ্মশানে যাঁরা শবদেহ সৎকারের জন্য আসেন, তাঁরা নদীর জল ব্যবহার করতে পারবেন । এনিয়ে পুরাতন মালদার বিডিওর কাছে একাধিকবার ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে । ঘটা করে বেহুলা সংস্কারের কাজের উদ্বোধন করা হয়েছিল । লাখ লাখ টাকা বরাদ্দও করা হয়েছিল । সেই টাকা কোথায় গেল ? এ নিয়ে বিডিও কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রীর কোনও জবাব নেই । আমাদের ধারণা, এই টাকা নিয়ে বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে । আমরা সেই দুর্নীতির তদন্ত এবং অবিলম্বে নদী সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি ।"

নদী সংস্কারের দাবিতে সরব হন নদীপাড়ের মানুষজন

আরও পড়ুন : মমতা-সাক্ষাতে মালদা থেকে সাইকেলে কলকাতায় আসবে আট বছরের সায়ন্তিকা

সরকারি কাগজপত্রে বেহুলা নদী সংস্কারের কাজ শেষ হলে গেলেও আদপে যে তা কিছুই হয়নি, তা মেনে নিচ্ছেন সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান অনেককুমার ঘোষ । তিনি বলেন, "এই পঞ্চায়েতের পূর্বতন প্রধান উকিল তিন বছর আগে বেহুলা সংস্কারের একটি স্কিম 100 দিনের কাজ প্রকল্পে জমা দিয়েছিলেন । জেলা প্রশাসনের তরফে সেই স্কিম পাসও হয়েছে । এই স্কিমের কাজ প্রায় 100 শতাংশই হয়ে গিয়েছে । তবে সেটা খাতায় কলমে । সরেজমিনে সেই কাজের 50 শতাংশই বাকি রয়েছে । বেহুলা একটি ঐতিহাসিক নদী । এই নদীর সংস্কার হলে শুধু নিত্যদিনের কাজকর্ম নয়, প্রচুর কৃষকও উপকৃত হবেন । কারণ, এই নদীর জলেই হাজার দুয়েক বিঘা জমির চাষ হয় । এখন নদীতে জল থাকায় মাটি তোলা যাচ্ছে না । তাছাড়া আগের প্রধান কীভাবে কাজ করেছেন, আমি কীভাবে কাজ করব, সেটাও প্রশাসনকে জানাতে হবে । তবে এই কাজের জন্য প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল । এখনও পর্যন্ত প্রায় 57 লাখ টাকার বিল মেটানো হয়েছে ।"

For All Latest Updates

TAGGED:

Behula River
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.