মালদা, 26 জুলাই: শুরু হয়ে গিয়েছে সুব্রত কাপ ৷ আপাতত মেয়েদের প্রি-সুব্রত কাপ ক্লাস্টারের খেলা চলছে ৷ মালদা শহরের বৃন্দাবনি ময়দানে শুরু হয়েছে মেয়েদের অনুর্ধ্ব-17 বিভাগের এই প্রতিযোগিতা ৷ উত্তরের ন’টি জেলার প্রতিযোগীরা মাঠ দাপাচ্ছে ৷ কিন্তু, আয়োজকরা জানাচ্ছেন, আগে এই জেলায় ফুটবল খেলায় যেমন উৎসাহ দেখা যেত, এখন আর তা দেখা যায় না ৷ কারণ কী? তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করল ইটিভি ভারত ৷
একটা সময় বাংলা ছিল ভারতীয় ফুটবলের পীঠস্থান ৷ আর বাংলা ফুটবলের আঁতুড়ঘর ছিল সুব্রত কাপ ৷ এই প্রতিযোগিতা থেকেই সবার চোখে পড়েছিলেন অনেক বড় বড় ফুটবলার ৷ পরবর্তীতে তাঁরা যেমন ক্লাব ফুটবলে সোনার ফসল ফলিয়েছেন, তেমনই দেশের পতাকাও উঁচুতে তুলে ধরেছেন ৷ কিন্তু, এখন সে সবই সোনালী অতীত মাত্র ৷ এখন ছেলেমেয়েদের উন্মাদনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট ৷ অন্যান্য সব খেলাতেও তাদের উৎসাহ লক্ষ্য করা যায় ৷ কিন্তু বাংলার ফুটবল ! কলকাতার ক্লাবগুলির দিকে তাকালেই তার দৈন্যদশা বোঝা যাবে ৷ বেশিরভাগ ক্লাবেই বিদেশি আর ভিনরাজ্যের খেলোয়াড়দের ছড়াছড়ি ৷ এভাবে চললে সেদিন আর খুব বেশি দূরে নেই, যেদিন বাংলার ফুটবল থেকে যাবে শুধু বইয়ের পাতাতেই ৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতেই পারবে না বাংলার ফুটবলের সোনালী ইতিহাস ৷
আজ থেকে শুরু হয়েছে প্রি সুব্রত কাপ টুর্নামেন্ট ৷ উত্তরবঙ্গের 9টি জেলা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলেও দার্জিলিং ও শিলিগুড়ির দল মালদায় আসেনি ৷ কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদা জেলার দল নিয়ে আপাতত এই প্রতিযোগিতা চলছে ৷ ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল ফর স্কুল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টসের সম্পাদক পুষ্পেন্দু কুমার মিশ্র বলেন, “অনূর্ধ্ব-17 মহিলাদের প্রি-সুব্রত কাপ ক্লাস্টারের খেলা আজ থেকে শুরু হয়েছে ৷ মালদা জেলায় মহিলাদের ফুটবলে অংশগ্রহণ খুবই কম ৷ তবে, গত দু’বছর ধরে মালদায় মেয়েরা বাংলা জয় করেছে ৷ সেই কারণে হাতিমারি হাইস্কুলের মেয়েরা এবার সোজা রাজ্যস্তরে খেলবে ৷’’
আরও পড়ুন: সন্তোষে ভাল খেলার পুরস্কার, মনোতোষ-দিলীপকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি
তিনি এও বলেন, ‘‘মেয়েদের ফুটবলের প্রতি আকর্ষিত করতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে ৷ প্রথমেই যেমন স্থায়ী কোচিং ক্যাম্প প্রয়োজন ৷ আমাদের হাতিমারি হাইস্কুলে কোচ রেখে নিয়মিত ট্রেনিং করার ফল পাওয়া যাচ্ছে ৷ জেলাতেও এই ধরনের কোচিং ক্যাম্পের প্রয়োজন রয়েছে ৷ জেলা প্রশাসন কিট দিয়ে কিছু সাহায্য করেছে ৷ তবে, আমরা প্রশাসনের কাছে কোচিং ক্যাম্পের দাবি করছি ৷”
আরও পড়ুন: ভারতীয় স্ট্রাইকারের খোঁজে ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশি খেলোয়াড়ে নিষেধাজ্ঞা ফেডারেশনের
মালদা বিভূতিভূষণ হাইস্কুলের স্পোর্টস টিচার তথা সংস্থার সহকারী সম্পাদক সুদামচন্দ্র ঘোষ বলেন, “একসময় আমাদের স্কুলের মধ্যেও সুব্রত কাপ নিয়ে ব্যাপক উন্মাদনা ছিল ৷ জেলাস্তরে ম্যাচ চলাকালীন বহু ছাত্র স্কুল ছুটি নিয়ে দলকে সাপোর্ট করতে আসত ৷ আগে বাঙালির ফুটবলের প্রতি যে উন্মাদনা ছিল, তা অনেকাংশে কমে গিয়েছে ৷ কারণ, এখন ফুটবলমুখী খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনেক কম ৷ মালদায় সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ একদমই নেই ৷’’
তাঁর আক্ষেপ শুধু মালদা নয় ৷ সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে একই ছবি বর্তমানে ৷ কারণ, বেশিরভাগ অভিভাবকরা এখন ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার এই সমস্ত খেলার দিকে ছেলেমেয়েদের এগিয়ে দিচ্ছেন ৷ তাছাড়া অনেক ভালো খেলোয়াড় দেশের হয়ে খেলার পরেও, আর্থিক দিক দিয়ে উন্নতি করতে পারেননি ৷ সেই কারণে অনেক ফুটবলার ফুটবল খেলা ছেড়ে আর্থিক উপার্জনে মনসংযোগ করছেন বলে জানান তিনি ৷