মালদা, 20 জানুয়ারি : একুশের ভোটে ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা শহর এলাকায় বিরোধী প্রচারে ইশু হতে পারে প্লাস্টিক থেকে দূষণ। দীর্ঘদিন ধরেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ সমস্যায় জেরবার জেলার দুই শহর। এবার এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন ইংরেজবাজার ব্লকের কোতওয়ালি এলাকার এক ব্যক্তি। নিজস্ব উদ্যোগে সম্প্রতি তিনি থেকে ভুট্টার খোসা থেকে ক্যারিব্যাগ উৎপাদন শুরু করেছেন। তিনি চাইছেন, জেলার দুই পৌরসভাও তাঁর মতো এমন দূষণমুক্ত ক্যারিব্যাগ উৎপাদনে এগিয়ে আসুক। তাহলেই দুই শহরের নিকাশি-সহ একাধিক সমস্যার সমাধান হবে। তাঁর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই পৌরসভার প্রশাসকও।
মালদা জেলার দুই পৌর এলাকাতেই দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। এর আগে দুই পৌর কর্তৃপক্ষ দুই শহর থেকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও সফল হয়নি। তা স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি দুই পৌর প্রশাসক। এদিকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের জন্য শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমছে দুই শহরে। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। ইংরেজবাজারের মালঞ্চপল্লি, কৃষ্ণপল্লি প্রভৃতি এলাকায় এবার ছ'মাসের বেশি সময় ধরে জল জমে ছিল। এনিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষের সাফ কথা, প্লাস্টিক ব্যবহারে রাশ না টানা গেলে এই সমস্যা মিটবে না।
আরও পড়ুন : একুশের নির্বাচন মমতা বনাম শুভেন্দু ?
এই পরিস্থিতিতে দুই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে যেন আলোকবার্তা নিয়ে এসেছেন কোতওয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের আরাপুর এলাকার বাসিন্দা হ্যাপি চৌধুরি। নিজস্ব উদ্যোগে তিনি ওই এলাকায় ভুট্টার খোসা থেকে ক্যারিব্যাগ উৎপাদন শুরু করেছেন। তাঁর দাবি, এই প্লাস্টিক বর্জিত ক্যারিব্যাগ রাজ্যে তিনিই প্রথম উৎপাদন করছেন। এর দামও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের তুলনায় অনেক কম।
হ্যাপিবাবু বলেন, "প্লাস্টিক সমস্যা নিয়ে শুধু আমরা নই, গোটা পৃথিবীই চিন্তিত। তাই আমরা এর বিকল্প খোঁজা শুরু করেছিলাম। ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে ভুট্টার খোসা থেকে ক্যারিব্যাগ উৎপাদনের বিষয়টি জানতে পারি। কয়েক বছরের চেষ্টায় আমরা এখানে এই ক্যারিব্যাগের উৎপাদন শুরু করেছি। এই ক্যারিব্যাগ এক থেকে ছ'মাসের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। তবে এখনও পর্যন্ত এতে আমরা কোনও সরকারি সহায়তা পাইনি।"
ইটিভি ভারতের কাছে বিষয়টি জানতে পেরে উচ্ছ্বসিত ইংরেজবাজারের পৌর প্রশাসক নীহাররঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, "এই শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। জেলা প্রশাসনও আমাদের সহযোগিতা করতে এনিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। আমরা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কাছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু শহরবাসী কিংবা ব্যবসায়ীরা আমাদের সমর্থন করেননি। তাই এই সমস্যা দুই শহরেই থেকে গিয়েছে। শুনলাম, কোতওয়ালিতে ভুট্টার খোসা দিয়ে ক্যারিব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। তারা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তবে আমরা আরও একবার মালদা শহরকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগমুক্ত করার চেষ্টা করব। কারণ, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের জন্য এই শহর প্রচুর সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। আমরা এই দূষণমুক্ত ক্যারিব্যাগ সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। যদি সম্ভব হয়, তবে আমরা ওই উৎপাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পৌরসভার পক্ষে একটি ইউনিটে পরিণত করে সেই ক্যারিব্যাগ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।"
আরও পড়ুন : নন্দীগ্রামে প্রার্থী মমতা, হাফ লাখ ভোটে হারানোর চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর
পুরাতন মালদা পৌরসভার প্রশাসক কার্তিক ঘোষ বলেন, "প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রচার চালাচ্ছি। এনিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রশাসনের সঙ্গে আমরা আলোচনাতেও বসেছিলাম। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ আমাদের শহরে নানাবিধ ক্ষতি করছে। রোগজীবাণু বাড়ছে। মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আমরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগমুক্ত শহর গড়তে পারিনি। আপনার কাছেই শুনলাম, এখানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে দূষণমুক্ত ক্যার ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। ওই উৎপাদক যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তবে আমরা সেই পদ্ধতি পুরাতন মালদা পৌরসভায় চালু করব। মানুষ ও সমাজের মঙ্গলে জন্য আমরা সবসময়ই তৈরি রয়েছি।"