মালদা, 18 অক্টোবর: বর্ষা চলে গিয়েছে ৷ ক্ষত থেকে গিয়েছে এলাকায় ৷ কালীপুজোর মুখেও গ্রামের রাস্তার কাদা শুকোয়নি ৷ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, 20 বছর ধরে এভাবেই গ্রামে হাঁটাচলা করতে হয় ৷ বর্ষার ক'মাস রাস্তায় জল জমে থাকে ৷ সেই জল ঢোকে ঘরে ঘরে ৷ শুধু রাস্তা নয়, গ্রামে এখনও কোনও নিকাশি নালা তৈরি হয়নি ৷ রাতের রাস্তায় আলো জ্বলে না ৷ এমনকী সরকারিভাবে পানীয় জলেরও (Drinking water problem) কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি ৷ অথচ গ্রামে অনেক ভোটার রয়েছেন ৷ তাঁদের ভোট পেতে যে কোনও নির্বাচনের আগে গ্রামে নেতাদের পা পড়ে ৷ গ্রামবাসীদের আর্জি শুনে তাঁরা এলাকা ছাড়েন ৷ ভোট মিটে যায় ৷ তাঁরাও মিলিয়ে যান ৷ শুধু বলে যান, তাঁরা টাকা দিয়ে ভোট কিনে নিয়েছেন ৷ আবার আসছে পঞ্চায়েত ভোট ৷ অপেক্ষা করছেন গ্রামবাসীরা (Malda Road Problem)৷
পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রশিলাদহ গ্রামের বেহুলা কলোনি ৷ গ্রামের পাশ দিয়ে 12 নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস ৷ সেই মাহাত্ম্যে গ্রামে জমির দাম আকাশছোঁয়া ৷ কিন্তু উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও নেই এখানে ৷ নীচু জমিতে গড়ে ওঠা গ্রামে কোনও নিকাশি নালা নেই ৷ বৃষ্টি হলেই সেই জল নামতে রোদের ভরসায় থাকতে হয় ৷ আর বর্ষা শুরু হলে ভগবান ভরসা ৷ ছেলেমেয়েদের কোলে তুলে নিয়ে যেতে হয় বাইপাসের রাস্তায় ৷ সেখানে জুতো-মোজা পরিয়ে, কখনও বা পোশাক পরিয়ে স্কুল পাঠাতে হয় ৷ নলকূপের লাল জল পান করে যেতে বাধ্য হন গ্রামের সবাই ৷ রাতের অন্ধকারে রাস্তায় চলাচল বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপদ্রবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে ৷ এভাবে আর কতদিন ? প্রশ্নটা কিন্তু উঠে গিয়েছে ৷
গ্রামবাসী বাসিন্দা অঞ্জনা দাস বলছেন, "আমার বিয়ে পাঁচ বছর হল ৷ বিয়ের পর থেকেই গ্রামের এই অবস্থা দেখছি ৷ এখানে অনেক সমস্যা ৷ মূল সমস্যা রাস্তা ৷ পঞ্চায়েত সদস্যকে অনেকবার দরখাস্ত দিয়েও কোনও কাজ হয়নি ৷ তাই গ্রামের সবাই টাকা দিয়ে রাস্তাটা একটু উঁচু করা হয়েছে ৷ বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাঁটু সমান জল হয়ে যায় ৷ গ্রামের রাস্তায় কোনও আলো নেই ৷ পানীয় জলের সরকারি ব্যবস্থা নেই ৷ নলকূপের জলই খেতে হয় ৷ নইলে পানীয় জল কিনতে হয় ৷ যাদের পয়সা আছে, তারা সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে নিচ্ছে ৷ আমরাও সেই জল কখনও কখনও খাই ৷"
আরও পড়ুন: 10 বছর ধরে বেহাল রাস্তা, চারা গাছ পুঁতে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের
আরেক গ্রামবাসী সন্ধ্যা দাসের বক্তব্য, "আমাদের মূল সমস্যা রাস্তা, পানীয় জল আর নিকাশি নালার ৷ বাইপাসের ধারে বাড়ি হলেও আমরা এই তিনটি বিষয় নিয়ে চরম সমস্যায় আছি ৷ সমস্যা সমাধানের জন্য সবাইকে বলেছি ৷ এদের ভোটের সময় দেখা মেলে ৷ সব করে দেওয়ার কথা বলে ৷ ভোট মিটে গেলে কাউকে দেখা যায় না ৷ কিছু বললে উত্তর দেয়, ওরা নাকি টাকা দিয়ে ভোট কিনে নিয়েছে ৷ আমরা খাবার কিংবা টাকা চাই না ৷ শুধু এই সমস্যাগুলোর সমাধান চাই ৷"
গোটা ঘটনার দায় পূর্বসূরির উপর চাপিয়ে দিয়েছেন সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অনেককুমার ঘোষ ৷ তাঁর বক্তব্য, "এ সব নিয়ে গ্রামের কেউ আমাকে কোনও লিখিত অভিযোগ জানায়নি ৷ তবে আমি বিষয়টি শুনেছি ৷ ওই এলাকায় গিয়েও রাস্তা, পানীয় জল আর আলোর সমস্যা দেখেছি ৷ আমি এক বছর হল প্রধানের চেয়ারে বসেছি ৷ গ্রামবাসীরা নাকি আগের প্রধানের কাছে অনেকবার অভিযোগ করেছেন ৷ পঞ্চায়েত সদস্যকে জানিয়েছেন ৷ কাজগুলো হয়ে যাওয়া উচিত ছিল ৷ আমরা ইতিমধ্যে এর জন্য বাজেট পাশ করে স্কিম তৈরি করেছি ৷ কিন্তু বোর্ডে দলগত কিছু সমস্যায় টেন্ডার করা যায়নি ৷ কালীপুজোর পরেই সেই কাজ হয়ে যাবে আশা করছি ৷ তারপরেই ওই এলাকার সমস্যার সমাধান করা হবে ৷"