মালদা, 17 জুন : ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে সারা দেশে 66তম স্থান অধিকার করে মালদার মুখ উজ্জ্বল করলেন এই শহরের ছেলে অর্ণব । তাঁর এই সাফল্যে উচ্ছ্বাসে ভাসছে জেলাবাসী (NDA exams merit list 66th ranked Arnab Das) ।
মালদা শহরের বাঁশুলিতলার বাসিন্দা অর্ণব । তাঁদের আদি বাড়ি পুখুরিয়া থানার পরানপুর গ্রামে । বাবা অশোক দাস ছিলেন স্কুল শিক্ষক । ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছেন অর্ণব । মা বিপাশা তালুকদার দাস ইংরেজবাজার ব্লকের জহুরাতলা হাইস্কুলের অশিক্ষক কর্মী । একমাত্র বোন অর্পিতা একাদশ শ্রেণিতে পড়ে । অর্ণবের পড়াশোনা মালদা শহরের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে । 2019 সালে মাধ্যমিকে 95 শতাংশ এবং 2021 সালে উচ্চমাধ্যমিকে 82 শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেন । রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাতেও তিনি সফল হন । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন । কিন্তু ছোট থেকে তিনি গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখতেন, সেখানকার অনেকেই সেনায় চাকরি করেন । তা দেখে ছোট থেকে সেনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছে মনে বাসা বেঁধে থাকে তাঁর । তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেও তিনি এনডিএ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে যেতে থাকেন । অবশ্য তার আগেই দু'বার সর্বভারতীয় সেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি । সফল হননি । কিন্তু হাল ছাড়েননি । শেষ পর্যন্ত 2021 সালে নভেম্বরে তিনি ফের সেই পরীক্ষায় বসেন । এবার একেবারে 66তম স্থান অধিকার করেন ।
আরও পড়ুন : জয়েন্টে প্রথম ও দ্বিতীয় হিমাংশু শেখর, দেখে নিন সম্পূর্ণ মেধাতালিকা
অর্ণব জানান, স্কুলে পড়াশোনা করার সময়ই এক বন্ধু এই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল । তার কাছ থেকেই আমি এই পরীক্ষার বিষয়ে জানতে পারি । তারপর বিভিন্ন ওয়েবসাইট আর ইউটিউব দেখে এই পরীক্ষার ব্যাপারে পুরোটা জানতে পারি । পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি । দু'বার লিখিত পরীক্ষায় অসফল হওয়ার পর তৃতীয়বার লিখিত পরীক্ষায় সফল হই । এরপর বিভিন্ন ইন্টারভিউ ও মেডিক্যাল টেস্টের পর আমি মেরিট লিস্টে জায়গা পেয়েছি । সেখানে আমার নাম 66তম স্থানে রয়েছে । এবার লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিল প্রায় ছ'লাখ ছেলেমেয়ে ।
তিনি আরও জানান, এবার মেয়েদেরও এই পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে । ফলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল । লিখিত পরীক্ষায় প্রায় আট হাজার জন পাশ করেছিলেন । ফাইনাল ইন্টারভিউয়ের পর 472 জনের মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হয়েছে । এখানে ট্রেনিংয়ের সিট রয়েছে 400 জনের । রাজ্যের মাত্র দু'জনের নাম মেরিট লিস্টে রয়েছে । আরেকজনের নাম রয়েছে 175 নম্বরে । তিন বছর এনডিএ ট্রেনিং, এক বছর এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমির ট্রেনিং শেষ করে আমি ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সে কমিশনড হতে চাই । নিজের 100 শতাংশ দেশকে দেওয়া আমার লক্ষ্য । এই সাফল্যের পিছনে আমার মা, বন্ধুবান্ধব আর অনলাইনে যিনি আমাকে সাহায্য করেছেন, তাঁদের হাত রয়েছে।
আরও পড়ুন : WBJEE Result 2022: প্রকাশিত জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল, ব়্যাংক পেয়েছে 98.5%
ছেলের সাফল্যে মায়ের চোখে শুধুই আনন্দাশ্রু । ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না বিপাশাদেবী । কোনওরকমে জানালেন, আমার যে আজ কতটা আনন্দ, তা বলে বোঝাতে পারব না । ওর বাবা বেঁচে থাকলে তিনি আরও খুশি হতেন । আমার ছেলে এত বড় জায়গায় যেতে পারে, কখনও ভাবিনি । ও নিজের পরিশ্রমেই এই সাফল্য অর্জন করেছে । ও আরও বড় হোক । দেশের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করুক ।