মালদা, ১০ অগস্ট : এবার অপহরণ চক্রের হদিশ মিলল পুরাতন মালদায় । গত শনিবার পুরাতন মালদার কিছু দুষ্কৃতী ভিন জেলার এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে বলে অভিযোগ করে অপহৃতের পরিবার । সেই অভিযোগ পেয়ে গতকাল রাতে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে মালদা থানার পুলিশ । তবে অপহরণকারীদের গ্রেফতার করা যায়নি ৷ তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ।
অপহৃত ওই ব্যবসায়ীর নাম সুজিত হালদার । বয়স ৪০ বছর । বাড়ি মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানার রামকৃষ্ণপুরে । সুজিতবাবু ভাঙাচোরা জিনিসপত্রের ব্যবসা করেন । ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে হরিয়ানার গুরগাঁওয়ে থাকতেন । তাঁর বাড়ি ফেরার প্রয়োজন ছিল । কিন্তু করোনা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় তিনি ট্রেনের টিকিট পাননি । শেষ পর্যন্ত দিল্লি থেকে বাসে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন । দিল্লি থেকে মালদার গাজোল পর্যন্ত সেই বাসেই আসেন তিনি ।
শনিবার সকালে বাসটি গাজোলের দেওতলা পৌঁছনোর পর তিনি বহরমপুর যাওয়ার জন্য গাড়ির খোঁজ করছিলেন । সেখান থেকেই তাঁকে অপহরণ করে পাঁচ-ছ'জন দুষ্কৃতী ৷ রবিবার দুপুরে সুজিতবাবু ফোন করে অপহরণের বিষয়টি পরিবারের লোকজনকে জানান ৷ সেই সঙ্গে মুক্তিপণ হিসাবে দেড় লাখ টাকা দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন ৷ কিন্তু কোথায় রয়েছেন বা টাকা কোথায় পাঠাতে হবে তা পরিবারের লোকজনকে বলতে পারেননি সুজিতবাবু ।
আরও পড়ুন : Malda Smuggling : বাংলাদেশ-মালদা সীমান্তে চোরাচালানে ধৃত 2 যুবক
এদিকে অপহরণের বিষয়টি জানতে পেরেই রবিবার মালদা থানায় যোগাযোগ করেন সুজিতবাবুর পরিবার ৷ অপহৃত সুজিতবাবুকে উদ্ধারের জন্য শুরু হয় পুলিশি তৎপরতা ৷ শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের মেহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা মুকদ্দর আলির বাড়ি থেকে সুজিতবাবুকে উদ্ধার করে পুলিশ । বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আজ তাঁকে মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হয় । সেখান থেকেই তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন ।
সুজিতবাবু আজ বলেন, "গাজোল থেকে পাঁচ-ছ'জন মিলে অপহরণ করে ওরা আমাকে একটি বাড়িতে নিয়ে যায় । সেখানে আমাকে মারধরও করে । গ্রামটার নাম আমি জানি না । এরপর ওরা আমাকে নির্দেশ দেয়, বাড়িতে ফোন করে দেড় লাখ টাকা আনতে হবে । টাকা না পেলে আমাকে ওরা খুন করবে বলেও হুমকি দেয় । ওদের কথামতো আমি জামাইকে ফোন করি । আমার কাছে 28-30 হাজার টাকা ছিল । সেই টাকা ওরা নিয়েছে । আমি ওদের কাউকেই চিনি না । কেন আমাকে অপহরণ করল তাও বুঝতে পারছি না । আমাকে মারধরের সময় দু’জনের নাম জানতে পেরেছি । একজনের নাম মুকদ্দর, আরেকজনের নাম বাবু । নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় ওরা এই দুটি নাম ধরেই ডাকছিল । অবশেষে আমার জামাই থানায় খবর দেওয়ায় পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে ৷”
অন্যদিকে সুজিতবাবুর জামাই নিমাই হালদার বলেন, "কর্মসূত্রে শ্বশুর দিল্লিতে থাকেন । সেখান থেকে আমাকে ফোন করে তিনি বাড়ি ফিরছেন বলে জানান । করোনার ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ট্রেনের টিকিট না পেয়ে তিনি বাসে আসছিলেন । এরপর দু’দিন তাঁর কোনও ফোন পাইনি । ডালখোলা পৌঁছে তিনি আমাকে একবার ফোন করেছিলেন । পরদিন বেলা 12টা নাগাদ আমাকে ফোন করে জানান, তাঁর দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন । কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে । এরপর তিনি শুধু বলেন, মালদায় রয়েছেন । কিন্তু মালদার কোথায় আছেন তা জানেন না । এরপরেই আমি মালদা থানায় চলে আসি । পুলিশকে সব কথা বলি । সোমবার রাতে পুলিশ আমার শ্বশুরকে উদ্ধার করেছে । অপহরণকারীদের আমি কোনও টাকা দিইনি । তবে শ্বশুরের সঙ্গে থাকা 28-29 হাজার টাকা ওরা নিয়ে গিয়েছে ।"
আরও পড়ুন : Malda Rape : অভিযোগ না তুললে খুন হবে বাবা, তৃণমূলের নাম করে ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি