ETV Bharat / state

2047 কিমি পথ, পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরায় পায়ে পচন

বেঙ্গালুরু থেকে ফিরেছেন মানিকচক ৷ 2047 কিমি পথ হেঁটে ৷ এতটা পথ হেঁটে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বছর 19-র এক যুবক ৷ তারই খবরাখবর নিতে বাড়িতে আসেন মানিকচকের BDO জয় আহম্মদ, BMOH হেমনারায়ণ ঝাঁ ও থানার OC গৌতম চৌধুরি ৷

author img

By

Published : Sep 11, 2020, 3:58 PM IST

migrant-labourers-injured-in-malda
2047 কিমি পথ, পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরায় পায়ে পচন ধর্মরাজের

মালদা, 11 সেপ্টেম্বর : কোরোনা তখন দেশে থাবা বসিয়েছে ৷ সংক্রমণ রোধে 24 মার্চ দেশ জুড়ে ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউন ৷ সবকিছু স্তব্ধ ৷ বন্ধ সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যম ৷ সেই সময় বেঙ্গালুরুতে আটকে পড়েছিল মালদার বেশ কিছু শ্রমিক ৷ তারা সবাই মানিকচকের মথুরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ৷ 7-8 দিন তারা সেখানে অপেক্ষা করেছিল ৷ আশা ছিল, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই কোনও ব্যবস্থা নেবে ৷ কিন্তু তা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা বাড়ির পথে হাঁটা দেয় ৷ 28 দিন একটানা হাঁটতে হাঁটতে ঘরে এসে পৌঁছোয় সবাই ৷ পথের দূরত্বটা ছিল 2047 কিলোমিটার ৷ এতটা পথ হেঁটে অসুস্থ হয়ে পড়ে 19 বছরের এক শ্রমিক ৷ নাম ধর্মরাজ মণ্ডল ৷ তার ডান পায়ে পচন শুরু হয়ে যায় ৷ চিকিৎসা চললেও ঠিক হচ্ছে না পা ৷ কাজ করা তো দূরের কথা, নিজের পায়ে ভর দিয়েও দাঁড়াতে পারছে না সে ৷ প্রায় পাঁচ মাস ধরে এভাবেই দিন কাটছিল তার ৷ খবর পেয়ে আজ ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে তার বাড়ি যান মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল ৷ ধর্মরাজের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি ৷ আজ তিনি ধর্মরাজের পরিবারকে কিছু খাদ্যসামগ্রী ও আর্থিক সাহায্যও করেন ৷

ধর্মরাজের বয়স যখন মাত্র 5 বছর, তখনই মারা যান তার বাবা পশুপতি মণ্ডল ৷ তিনিও শ্রমিকের কাজ করতেন ৷ স্বামীর অবর্তমানে একমাত্র ছেলেকে মানুষ করেন মা জ্যোৎস্নাদেবী ৷ নিজে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে ছেলেকে মানুষ করতে থাকেন ৷ ছেলেকে স্কুলে ভরতি করেন ৷ 2016 সালে মাধ্যমিক দেন ধর্মরাজ ৷ কিন্তু দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে পড়াশোনায় সেখানেই ইতি টানে তিনি ৷ এরপর এলাকাতেই এক রাজমিস্ত্রির জোগানদার হিসাবে কাজ শুরু করেন৷ প্রতিদিন কাজ করেন 150-170 টাকা উপার্জন করত ৷ এভাবে চলে আরও 3 বছর ৷ সে শুনতে পায়, ভিনরাজ্যে কাজ করলে বেশি টাকা পাওয়া যায় ৷ তাই এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে লকডাউনের আগে সে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেয় ৷ কাজও চলছিল ভাল ৷ প্রতিদিন 350 টাকা আয় হচ্ছিল ৷ তখনই হানা দেয় কোরোনা ৷ শুরু হয় লকডাউন ৷ একইসঙ্গে শুরু হয় ধর্মরাজের দুর্দশা ৷

এলাকার আরও শ্রমিকদের সঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফেরার পরেই ধর্মরাজ দেখে, তার ডান পা দিয়ে রস বেরোচ্ছে ৷ প্রথমে ভেবেছিল, এতটা পথ হাঁটার জন্যই এমনটা হয়েছে ৷ কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে ৷ কিন্তু পা থেকে রস বেরোনোর মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে ৷ একসময় ওই রস থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করে ৷ রুগ্ন হতে শুরু করে তার ডান পা ৷ জ্যোৎস্নাদেবী প্রথমে ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় এক গুণিনের কাছে যান ৷ গুণিন নিদান দেয়, ঝাড়ফুঁক করতে হবে ৷ কয়েকদিন ধরে ঝাড়ফুঁক চালিয়ে রণে ভঙ্গ দেয় গুণিন ৷ শেষ পর্যন্ত এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় ছেলেকে মালদা শহরে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন জ্যোৎস্নাদেবী ৷ শুরু হয় চিকিৎসা ৷ কিন্তু কিছুদিন পর টাকাপয়সা শেষ হয়ে যায় ৷ ফলে চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে যায় ধর্মরাজের ৷ ডান পায়ের অবস্থা আরও সংকটজনক হতে শুরু করে ৷

পায়ে হেঁটে সুদূর বেঙ্গালুরু থেকে মানিকচক, ধরেছে পায়ে পচন ৷ দেখুন ভিডিয়ো...

এই খবর পেয়ে গতকাল মথুরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উৎসবটোলায় ধর্মরাজের বাড়িতে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল ৷ সঙ্গে ছিলেন মানিকচকের BDO জয় আহম্মদ, BMOH হেমনারায়ণ ঝাঁ ও থানার OC গৌতম চৌধুরি ৷ গৌরবাবু জ্যোৎস্নাদেবীর হাতে কিছু টাকা ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন ৷ ধর্মরাজের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন ৷ তাঁর চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন ৷ তিনি বলেন, “ধর্মরাজের খবর পেয়ে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে তার বাড়িতে এসেছি ৷ বেঙ্গালুরুতে কাজ করার সময় একটি ট্র্যাক্টর ধর্মরাজকে ধাক্কা মেরেছিল ৷ সেখানে চিকিৎসার পর সে খানিকটা সুস্থও হয়ে যায় ৷ সেই অবস্থাতেও সে সেখান থেকে হেঁটে বাড়ি ফেরে ৷ এরপরেই তার পায়ে সমস্যা দেখা দেয় ৷ বিভিন্ন কারণে সে পায়ের চিকিৎসা করাতে পারেনি৷ আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর জানতে পারি ৷ আমরা ধর্মরাজের চিকিৎসা ও তার পরিবারের ন্যূনতম চাহিদাগুলি পূরণ করব ৷ তবে এখানেই ধর্মরাজের চিকিৎসা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন BMOH ৷” হঠাৎ এত সহযোগিতার হাত পেয়ে আপ্লুত ধর্মরাজ ৷ সভাধিপতিসহ প্রশাসনিক কর্তাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি ৷ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জ্যোৎস্নাদেবীও৷

মালদা, 11 সেপ্টেম্বর : কোরোনা তখন দেশে থাবা বসিয়েছে ৷ সংক্রমণ রোধে 24 মার্চ দেশ জুড়ে ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউন ৷ সবকিছু স্তব্ধ ৷ বন্ধ সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যম ৷ সেই সময় বেঙ্গালুরুতে আটকে পড়েছিল মালদার বেশ কিছু শ্রমিক ৷ তারা সবাই মানিকচকের মথুরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ৷ 7-8 দিন তারা সেখানে অপেক্ষা করেছিল ৷ আশা ছিল, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই কোনও ব্যবস্থা নেবে ৷ কিন্তু তা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা বাড়ির পথে হাঁটা দেয় ৷ 28 দিন একটানা হাঁটতে হাঁটতে ঘরে এসে পৌঁছোয় সবাই ৷ পথের দূরত্বটা ছিল 2047 কিলোমিটার ৷ এতটা পথ হেঁটে অসুস্থ হয়ে পড়ে 19 বছরের এক শ্রমিক ৷ নাম ধর্মরাজ মণ্ডল ৷ তার ডান পায়ে পচন শুরু হয়ে যায় ৷ চিকিৎসা চললেও ঠিক হচ্ছে না পা ৷ কাজ করা তো দূরের কথা, নিজের পায়ে ভর দিয়েও দাঁড়াতে পারছে না সে ৷ প্রায় পাঁচ মাস ধরে এভাবেই দিন কাটছিল তার ৷ খবর পেয়ে আজ ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে তার বাড়ি যান মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল ৷ ধর্মরাজের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি ৷ আজ তিনি ধর্মরাজের পরিবারকে কিছু খাদ্যসামগ্রী ও আর্থিক সাহায্যও করেন ৷

ধর্মরাজের বয়স যখন মাত্র 5 বছর, তখনই মারা যান তার বাবা পশুপতি মণ্ডল ৷ তিনিও শ্রমিকের কাজ করতেন ৷ স্বামীর অবর্তমানে একমাত্র ছেলেকে মানুষ করেন মা জ্যোৎস্নাদেবী ৷ নিজে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে ছেলেকে মানুষ করতে থাকেন ৷ ছেলেকে স্কুলে ভরতি করেন ৷ 2016 সালে মাধ্যমিক দেন ধর্মরাজ ৷ কিন্তু দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে পড়াশোনায় সেখানেই ইতি টানে তিনি ৷ এরপর এলাকাতেই এক রাজমিস্ত্রির জোগানদার হিসাবে কাজ শুরু করেন৷ প্রতিদিন কাজ করেন 150-170 টাকা উপার্জন করত ৷ এভাবে চলে আরও 3 বছর ৷ সে শুনতে পায়, ভিনরাজ্যে কাজ করলে বেশি টাকা পাওয়া যায় ৷ তাই এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে লকডাউনের আগে সে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেয় ৷ কাজও চলছিল ভাল ৷ প্রতিদিন 350 টাকা আয় হচ্ছিল ৷ তখনই হানা দেয় কোরোনা ৷ শুরু হয় লকডাউন ৷ একইসঙ্গে শুরু হয় ধর্মরাজের দুর্দশা ৷

এলাকার আরও শ্রমিকদের সঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফেরার পরেই ধর্মরাজ দেখে, তার ডান পা দিয়ে রস বেরোচ্ছে ৷ প্রথমে ভেবেছিল, এতটা পথ হাঁটার জন্যই এমনটা হয়েছে ৷ কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে ৷ কিন্তু পা থেকে রস বেরোনোর মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে ৷ একসময় ওই রস থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করে ৷ রুগ্ন হতে শুরু করে তার ডান পা ৷ জ্যোৎস্নাদেবী প্রথমে ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় এক গুণিনের কাছে যান ৷ গুণিন নিদান দেয়, ঝাড়ফুঁক করতে হবে ৷ কয়েকদিন ধরে ঝাড়ফুঁক চালিয়ে রণে ভঙ্গ দেয় গুণিন ৷ শেষ পর্যন্ত এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় ছেলেকে মালদা শহরে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন জ্যোৎস্নাদেবী ৷ শুরু হয় চিকিৎসা ৷ কিন্তু কিছুদিন পর টাকাপয়সা শেষ হয়ে যায় ৷ ফলে চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে যায় ধর্মরাজের ৷ ডান পায়ের অবস্থা আরও সংকটজনক হতে শুরু করে ৷

পায়ে হেঁটে সুদূর বেঙ্গালুরু থেকে মানিকচক, ধরেছে পায়ে পচন ৷ দেখুন ভিডিয়ো...

এই খবর পেয়ে গতকাল মথুরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উৎসবটোলায় ধর্মরাজের বাড়িতে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল ৷ সঙ্গে ছিলেন মানিকচকের BDO জয় আহম্মদ, BMOH হেমনারায়ণ ঝাঁ ও থানার OC গৌতম চৌধুরি ৷ গৌরবাবু জ্যোৎস্নাদেবীর হাতে কিছু টাকা ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন ৷ ধর্মরাজের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন ৷ তাঁর চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন ৷ তিনি বলেন, “ধর্মরাজের খবর পেয়ে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে তার বাড়িতে এসেছি ৷ বেঙ্গালুরুতে কাজ করার সময় একটি ট্র্যাক্টর ধর্মরাজকে ধাক্কা মেরেছিল ৷ সেখানে চিকিৎসার পর সে খানিকটা সুস্থও হয়ে যায় ৷ সেই অবস্থাতেও সে সেখান থেকে হেঁটে বাড়ি ফেরে ৷ এরপরেই তার পায়ে সমস্যা দেখা দেয় ৷ বিভিন্ন কারণে সে পায়ের চিকিৎসা করাতে পারেনি৷ আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর জানতে পারি ৷ আমরা ধর্মরাজের চিকিৎসা ও তার পরিবারের ন্যূনতম চাহিদাগুলি পূরণ করব ৷ তবে এখানেই ধর্মরাজের চিকিৎসা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন BMOH ৷” হঠাৎ এত সহযোগিতার হাত পেয়ে আপ্লুত ধর্মরাজ ৷ সভাধিপতিসহ প্রশাসনিক কর্তাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি ৷ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জ্যোৎস্নাদেবীও৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.