মালদা, 30 নভেম্বর: ব্লকের সদর এলাকায় সরকারি প্রাথমিক স্কুল ৷ পড়ুয়ার সংখ্যাও বেশ ভালো ৷ কিন্তু এখানে ক্লাস নেন মিড-ডে মিলের রাঁধুনি(Midday Meal Cook Taking Class in Govt Primary School)৷ এই ছবি ধরা পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের ভজমোহন নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি ৷ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে তৃণমূল ৷ কিন্তু স্কুলের পরিস্থিতি যে মোটেই ভালো নয়, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ৷
এই প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া রয়েছে 210 জন ৷ স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন তিনজন ৷ তার মধ্যে একজন ছুটিতে ৷ একজন পার্শ্বশিক্ষক থাকলেও তিনি নিজের মর্জিমতো স্কুলে আসেন বলে অভিযোগ ৷ এই পরিস্থিতিতে মিড-ডে মিলের রাঁধুনি শান্ত্বনা দাস পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়ার অন্যতম ভরসা ৷ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অশোককুমার দাস প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে বিষয়টি মেনে নিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : নেই পর্যাপ্ত শিক্ষিকা, 5 বছর ধরে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের ভার একজনের কাঁধে
তাঁর কথায়,"স্কুলে তিনজন স্থায়ী আর একজন পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন ৷ আজ আমরা দু'জন শিক্ষক স্কুলে আছি ৷ একজন ছুটিতে রয়েছেন ৷ আর পার্শ্বশিক্ষক পলাশ দাস স্কুলে খুব কমই আসেন ৷ এদিকে স্কুলে ছ'টি ক্লাস ৷ দু’জন শিক্ষকের পক্ষে অত ক্লাস সামাল দেওয়া সমস্যার ৷ উনি আমাদের মিড-ডে মিল তৈরিতে থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেত্রী ৷ বাচ্চারা যাতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে না যায়, তার জন্যই তাঁকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি ৷ তিনি অল্পস্বল্প ক্লাসও নিচ্ছেন ৷ পলাশবাবু নিয়মিত স্কুলে না আসার বিষয়টি আমি অনেক জায়গায় জানিয়েছি ৷ পার্শ্বশিক্ষক সংগঠনের সম্পাদককেও বিষয়টি জানানো হয়েছে ৷ তবু তিনি স্কুলে আসছেন না ৷ প্রয়োজনে বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব ৷ মিড-ডে মিলের রাঁধুনিকে দিয়ে ক্লাস করানো ঠিক নয় তা জানি ৷ কিন্তু শিক্ষকের অভাবে তাঁকে দিয়ে সেই কাজ করাতে বাধ্য হচ্ছি ৷ তবে স্কুলে সব শিক্ষক না আসলেই তিনি ক্লাস নেন ৷ আর স্কুলে ফাটলের বিষয়টি উপরমহলের নজরে এনেছি ৷"
আরও পড়ুন : স্থায়ী শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে সরকারি স্কুল, স্বল্প বেতনে পাঠ দিচ্ছেন গ্রামেরই যুবক-যুবতি
এই বিষয়ে দলের জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলেন, "ভজমোহন প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিলের রাঁধুনি ক্লাস নিচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি ৷ ওই স্কুলের শিক্ষকরা শাসকদলের সঙ্গে জড়িত থাকায় স্কুলে আসছেন না ৷ শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় প্রশাসনও নীরব ৷ শুধু হরিশ্চন্দ্রপুর নয়, গোটা রাজ্যেই এমন ঘটনা চলছে ৷"
এই নিয়ে তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা বলেন,"ঘটনাটি জানতে পেরে খোঁজখবর নিয়েছি ৷ ওই স্কুলের রাঁধুনি যে ক্লাস নিচ্ছেন, তা বাস্তব ৷ স্কুলের শিক্ষকরা নিয়মিত না আসলে এসআইকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি ৷ শিক্ষকরা স্কুলে না গেলে আইন তার নিজের পথেই চলবে ৷ আর স্কুলের দেওয়ালে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, তা ঠিক করার জন্য প্রশাসনকে জানাব ৷ তবে এসব নিয়ে বিজেপির কোনও কথা না বলাই ভালো ৷ ওরা প্রচারে আসতে এসব ভুলভাল কথা বলে ৷ এখন এ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত ৷ বিরোধীরা কে কী বলল, তাতে আমাদের যায় আসে না ৷"
আরও পড়ুন : শিক্ষকের দেখা না-পেয়ে ঘরে ফিরছে স্কুল পড়ুয়ারা, দেখলেন বিডিও