মালদা, 18 অগাস্ট: এগিয়ে আসছে লোকসভা নির্বাচন ৷ ইতিমধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূল-বিজেপির ৷ প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ থেমে নেই নরেন্দ্র মোদিও ৷ তিনিও কথায় কথায় তুলোধনা করছেন রাজ্য সরকারকে ৷ সুতরাং 24-এর ভোট পশ্চিমবঙ্গে যে পদ্ম আর ঘাসফুলেরই লড়াই তা একরকম নিশ্চিত ৷ ঠিক সেই সময় মালদা জেলায় অন্য ছবি ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জেলাবাসী দেখেছে কালিয়াচক তিন নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড কীভাবে তৃণমূল-বিজেপি একসঙ্গে গঠন করেছে ৷ এমনকী, কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকের ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ডেও তৃণমূল-বিজেপি জোট দেখা গিয়েছে ৷ এনিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জনমানসে ৷ বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, বিজেপি-তৃণমূল আদতে একসঙ্গেই আছে ৷ তার জেরেই কি কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকে এই ছবি?
এ নিয়ে বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ বলেন, “বাম ও কংগ্রেস সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাত করে ভোটে লড়বে বলে ঠিক করেছে ৷ এটা দুই দলের রাজনৈতিক সংযোগ ৷ গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও দলীয় নীতি বা আদর্শের ব্যাপার থাকে না ৷ সেখানে স্থানীয় স্তরে উন্নয়নের বিষয় থাকে ৷ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের যেসব জায়গায় ত্রিশঙ্কু ফলাফল হয়, সেখানে মানুষেরই দায়িত্ব হল একটি সুষ্ঠু বোর্ড গঠন করে উন্নয়নের কাজ অব্যাহত রাখা ৷ এই জেলায় এমনও পঞ্চায়েত বোর্ড তৈরি হয়েছে যেখানে সমস্ত দলই রয়েছে ৷ স্থানীয় স্তরে এমন মিলিজুলি বোর্ড উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভালো ৷ কিন্তু নীতিগত ক্ষেত্রে জোটের বিষয়ে এসব জিনিস খাটে না ৷ এই রাজ্যে তৃণমূল সরকার যেভাবে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস চালিয়েছে, তাতে তারা যেমন আমাদের শত্রু ৷ একইভাবে কংগ্রেস ও সিপিএমও আমাদের শত্রু ৷ প্রথম থেকেই বিজেপি সব দলের সঙ্গে সম দূরত্ব বজায় রেখেছে ৷”
প্রায় একই বক্তব্য তৃণমূলের মালদা জেলার মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর ৷ তিনি বলেন, “গোটা দেশে তৃণমূল ও বিজেপি মূল শত্রু হিসাবে পরিচিত ৷ দেশের সব বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে যে ফ্রন্ট গঠিত হয়েছে, তার ইন্ডিয়া নামকরণও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া ৷ সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময় এই রাজ্যকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছেন ৷ বিভিন্নভাবে রাজ্যকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন ৷ সেখানে তৃণমূল-বিজেপি জোটের সম্ভাবনা ছিল না, থাকবেও না ৷ কিন্তু মালদা জেলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কয়েকটি জায়গায় বিজেপির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হতে চান ৷ তাঁরা ইতিমধ্যে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন বা আগামীতে লেখাবেন ৷ এভাবেই তাঁদের নিয়ে কিছু বোর্ড গঠিত হয়েছে ৷ তবে আগামীতে ত্রিশঙ্কু থাকা সব পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলেরই হতে চলেছে ৷”
আরও পড়ুন: ডিএসপি কারখানার জমি থেকে উচ্ছেদের নোটিশ ঘিরে দড়ি টানাটানি বিজেপি-তৃণমূলের
যদিও তৃণমূল-বিজেপি সখ্য নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বামফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক তথা সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র ৷ তিনি বলেন, “গোটা রাজ্যেই তৃণমূল আর বিজেপি জোট করে বোর্ড গড়েছে ৷ মালদার বহু গ্রাম পঞ্চায়েতেও তাদের জোট হয়েছে ৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে এখন দুই দলের মধ্যে যে কথার লড়াই চলছে, তা আসলে ছায়াযুদ্ধ ৷ গোটা ব্যাপারটাই গট আপ ৷ মমতা তো আগেই বলেছেন, বিজেপি তাঁদের স্বাভাবিক মিত্র ৷ এরাজ্যে বামপন্থীদের ঠেকাতেই এই রাজনীতির সূত্রপাত ৷ তাই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে অবশ্যই দুই দল হাত ধরে চলবে ৷ সেটাই স্বাভাবিক ৷”
বিজেপি-তৃণমূলের জোট নিয়ে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেসও ৷ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মোত্তাকিন আলমের বক্তব্য, “আমরা বারবারই বলে এসেছি, বিজেপি-তৃণমূলের সেটিং রয়েছে ৷ আমরা দেখেছি, পার্লামেন্টে যতগুলি বিজেপি বিরোধী বিল হয়েছে, প্রতিবারই বিজেপিকে সহযোগিতা করেছে তৃণমূল ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বাংলায় দুর্নীতি করেছেন তাতে ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতে তাঁকে মোদির হাত ধরতেই হবে ৷ সময়মতো তিনি ইন্ডিয়া জোট ভেঙে বেরিয়ে আসবেন ৷”