মালদা, 7 এপ্রিল : লকডাউনে যৌনকর্মীদের পাশে দাঁড়াল মালদা রামকৃষ্ণ মিশন ৷ আজ মিশনের পক্ষ থেকে মালদা শহরের যৌনপল্লিতে বসবাস করা 303 টি পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয় ৷ এর জন্য মিশন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দুর্বার মহিলা সমণ্বয় কমিটি ৷ সংকটের এই মুহুর্তে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোয় মিশন কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন যৌনকর্মীরাও ৷
দেশে কোরোনার সংক্রমণের শুরুর পরেই 20 মার্চ মালদা শহরের যৌনকর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই মারণ ভাইরাসকে রুখতে তাঁরা তিনদিনের জন্য যৌনপল্লি বন্ধ রাখবেন ৷ 23 মার্চ পর্যন্ত বহিরাগত কাউকে পল্লিতে ঢুকতে দেননি তাঁরা ৷ নিজেরাও কেউ এলাকা ছেড়ে বাইরে যাননি ৷ এরপরেই দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয় ৷ নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে যৌনকর্মীরা আগামী 14 এপ্রিল পর্যন্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন ৷ কিন্তু এর ফলে পেটে টান পড়তে শুরু করে তাঁদের ৷ বর্তমানে তাঁদের অনেকের ঘরেই খাবার বাড়ন্ত ৷ এই পরিস্থিতিতে লকডাউনের বাকি দিনগুলি কীভাবে কাটাবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না তাঁরা ৷ অবশেষে আজ তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে রামকৃষ্ণ মিশন ৷
মিশনের তরফে এক স্বেচ্ছাসেবী কৌশিক রাউথ বলেন, “মালদা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ত্যাগরূপানন্দজি মহারাজের নির্দেশে আজ আমরা এখানে খাদ্যসামগ্রী বিলি করতে এসেছি ৷ এখানে মোট 303 জন যৌনকর্মীর পরিবার রয়েছে ৷ তাঁদের প্রত্যেকের হাতে আজ পাঁচ কিলো চাল, এক কিলো ডাল, এক কিলো আটা, ৫০০ গ্রাম সয়াবিন, এক কিলো লবণ, এক কিলো সরষের তেল, ৫০০ গ্রাম সাদা তেল, চারটি করে সাবান, একটি মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের শিশি দেওয়া হয়েছে ৷ প্রয়োজনে পরবর্তীতে ফের এই পরিবারগুলিকে সাহায্য করা হবে৷”
যৌনকর্মীদের পাশে এভাবে দাঁড়ানোয় রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দুর্বার মহিলা সমণ্বয় কমিটির ফিল্ড ওয়ার্কার আমবারি খাতুন ৷ তিনি বলেন, “দেশে কোরোনার প্রকোপ শুরু হতেই আমাদের মেয়েরা প্রথমে তিনদিনের জন্য কাজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷ পরবর্তীতে লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় ব্যবসা এখন পুরোপুরি বন্ধ ৷ আমরা বহিরাগত কাউকে যৌনপল্লিতে আসতে দিচ্ছি না ৷ কাউকে এখান থেকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ কারণ, মানুষের স্বাস্থ্য সবার আগে ৷ 20 মার্চ থেকে মেয়েরা ব্যবসা করতে পারছেন না ৷ বেশিরভাগ মেয়ে খাদ্যের অভাবে ভুগছিলেন ৷ অবশেষে আজ রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোয় তাঁদের কিছুটা সুবিধে হল ৷ মিশন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, প্রয়োজনে তাঁরা আবার মেয়েদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন ৷ আমরা রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ ৷” যৌনকর্মীরাও এই সাহায্যের জন্য রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষকে নিজেদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ৷