মালদা, 14 ডিসেম্বর: ভোট বড় বালাই ৷ আর গ্রামীণ ভোট এলে শাসক-বিরোধীদের উৎকণ্ঠা যেন চরমে ওঠে ৷ নাভিশ্বাস ওঠে প্রশাসনেরও ৷ সেটাই দেখা গিয়েছে মঙ্গলবার ৷ রাতেও বসেছে দুয়ারে প্রশাসনের শিবির ৷ যে স্কুলে সেই শিবিরের আয়োজন হয়েছিল, সেখানে রাতে তৈরি হয়েছে মিড ডে মিল ৷ অন্তত গ্রামবাসীরা নাইট মিলের জায়গায় মিড ডে মিলই বলছেন (DM Reprimands Officers)৷ মাটিতে বসে নিজের টিম নিয়ে মানুষের কথা শুনেছেন জেলাশাসক (Malda DM)৷ সঙ্গে স্বয়ং মন্ত্রী ৷ এ ভাবেই ঘড়ির কাঁটা পেরিয়ে গিয়েছে রাত দশটার ঘর ৷ সেই শিবিরের রেশ রয়ে গিয়েছে আজও ৷ ঘটনাটি হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের ৷
গতকাল দুপুরে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকে প্রশাসনিক বৈঠক করতে যান জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া ৷ বৈঠক শেষ হতে সন্ধে গড়িয়ে যায় ৷ বৈঠক শেষেই তিনি চলে যান স্থানীয় গড়গড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৷ গতকাল ওই স্কুলে বসেছিল দুয়ারে প্রশাসনের শিবির ৷ জেলাশাসকের উপস্থিতিতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় সেই শিবির ৷ স্কুলে ঢুকে সটান মাটিতে বিছানো চাটাইয়ে বসে পড়েন জেলার প্রশাসনিক প্রধান ৷ তাঁর সঙ্গেই সেখানে বসে যান মন্ত্রী তজমুল হোসেন ৷ জেলাশাসককে নাগালে পেয়ে স্থানীয় সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন গ্রামবাসীরা (Tribals lands)৷
আদিবাসী অধ্যুষিত ওই এলাকায় একাধিক সমস্যার কথা উঠে আসে ৷ তার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল জমি সংক্রান্ত সমস্যা ৷ উপস্থিত আদিবাসীরা জেলাশাসককে জানান, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের একাংশের জন্য এলাকায় জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে ৷ আদিবাসীদের জমি তারা গ্রাস করছে ৷ এমনকী এলাকার ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠও দখল করতে শুরু করেছে তারা ৷ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলাশাসক প্রকাশ্যেই ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে ধমক দেন ৷ তিন মাসের মধ্যে জমি সংক্রান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলার জন্য তিনি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে নির্দেশ দেন ৷ যাঁদের এখনও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে নাম ওঠেনি, যাঁরা এখনও সরকারি পাট্টার জমি পাননি, তাঁদের আবেদন জানানোর পরামর্শ দেন তিনি ৷ শিবির শেষে সেখানেই তিনি স্কুলে তৈরি ‘নাইট মিল’ খেয়ে মালদা শহরের উদ্দেশে রওনা দেন ৷
আরও পড়ুন: ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে বাড়ল সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা
জেলাশাসক জানান, “এখন চাষিরা ধান কাটার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন ৷ তাই সন্ধেতেও দুয়ারে সরকার শিবির করা হচ্ছে ৷ গড়গড়ি স্কুলের ক্যাম্প দেখতে এসেছিলাম ৷ মন্ত্রী নিজেও এখানে আছেন ৷ জেলা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন ৷ মানুষের সমস্যা, অভিযোগের কথা শুনলাম ৷ তিন মাসের মধ্যে কিছু ছোটখাটো বিষয়ের সমাধান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ এখানে বীরসা মুণ্ডার মূর্তি, কমিউনিটি হল করার আবেদন এসেছে ৷ সেটা আমরা ব্যবস্থা করছি ৷ এছাড়াও সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, সরকারি বিভিন্ন সুযোগ পেতে মানুষ যেন আবেদন জমা দেন ৷ যাঁরা পাট্টা পাননি, সাদা কাগজে তাঁরা যেন সেই আবেদন জানান ৷”
মন্ত্রী তজমুল হোসেন বলেন, “রাত 10টার পর পর্যন্ত জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের গোটা টিম এখানে মানুষের কথা শুনেছেন ৷ আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য তাঁরা যে ব্যবস্থা নিলেন তার জন্য আমি তাঁদের সাধুবাদ জানাচ্ছি ৷ তিনি তিন মাসের মধ্যে মানুষের সমস্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷”
জেলাশাসকের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ নিয়ে আজ সকাল থেকেও এলাকায় চাঞ্চল্য রয়েছে ৷ স্থানীয় বাসিন্দা তথা জেলাশাসকের কাছে অভিযোগকারী হরতাল ওরাওঁ বলেন, “এখানে অনেক অভিযোগ ছিল ৷ তবে জমি নিয়ে আমাদের বেশি অভিযোগ ৷ গড়গড়ি মাঠ জমি মাফিয়ারা দখল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে ৷ আমাদের বাধায় তারা এই মাঠ দখল করতে পারেনি ৷ ওই মাঠ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ওদের সঙ্গে ঝামেলা চলে ৷ বিষয়টি কয়েকবার ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জানালেও জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷ জেলাশাসককে গতকাল বিষয়টি জানিয়েছি ৷ জেলাশাসক নিজে এসে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ৷ আমাদের সমস্যা মেটাতে বিএল অ্যান্ড এলআরওকে তিন মাসের সময় দিয়েছেন ৷ আমরা জেলাশাসকের এহেন কাজে খুশি ৷ এই মাঠে আমরা অনেক অনুষ্ঠান করি ৷ এই মাঠকে বাঁচাতেই হবে ৷”
আদিবাসীদের সমস্যা সমাধান ও সরকারি মাঠ রক্ষায় জেলাশাসকের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত ৷ তবে এ নিয়ে আশঙ্কাও রয়েছে তাঁর ৷ তাঁর বক্তব্য, “জেলাশাসক আদিবাসীদের জমি রক্ষার বিষয়ে যে কথা বলেছেন তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই ৷ জমি মাফিায়াদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি ৷ কিন্তু এই মাফিয়াদের সঙ্গে তৃণমূল ও ভূমি সংস্কার দফতরের একাংশ জড়িত ৷ জেলাশাসক কি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন ? তবে আমরা আশাবাদী, জেলাশাসক যে কথা দিয়েছেন, সেই কথা তিনি রাখবেন ৷”