মালদা, 19 অক্টোবর: নেপথ্যে অতিবৃষ্টি ৷ তার জেরে এবার পুজোয় মালদা জেলায় আকাল হতে পারে পদ্মের ৷ যা প্রয়োজন, এখনও পর্যন্ত তার এক তৃতীয়াংশই মজুত হয়েছে ৷ বাকি পদ্মের খোঁজে ভিনজেলায় ছুটেছেন স্থানীয় পদ্ম ব্যবসায়ীরা ৷ আশঙ্কা, ব্যবসায়ীরা ব্যর্থ হলে এবার মা দুর্গাকে পদ্মের বদলে শালুক ফুলের সঙ্গেই অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে না তো!
ইংরেজবাজারের কৃষ্ণপুর গ্রামের পদ্মচাষি সেলিম শেখ বলেন, "15 দিন আগে থেকেই আমরা পদ্ম হিমঘরে মজুত করতে শুরু করেছি ৷ কিন্তু এবার ফলন খুব কম ৷ এখনও পর্যন্ত হাজার পাঁচেক পদ্ম হিমঘরে মজুত করতে পেরেছি ৷ গত বছর প্রায় 15 হাজার পদ্ম মজুত করেছিলাম ৷ এবার পুজোয় কী হবে জানি না ৷ আমাদের অনেকে পাশের রাজ্যগুলিতে পদ্মের খোঁজে গিয়েছে ৷"
পদ্ম ব্যবসায়ী মোজাম্মেল শেখ বলেন, "আমরা ইংরেজবাজারের ইন্দো-বাংলা সীমান্তের মোসলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ৷ এলাকার অনেক জলাশয়ে আগে নিজে থেকেই পদ্মের গাছ জন্মাত ৷ ভালো ফুলও হত৷ পুজোর সময় সেই ফুলই বাজারে বিক্রি করতাম ৷ কিন্তু এখন পদ্ম পুকুরের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে৷ জলাশয়ের মালিকরা এখন মাছ চাষের দিকে ঝুঁকেছেন ৷ তার উপর এবার আশ্বিনের টানা বৃষ্টিতে পদ্মের চাষ পিছিয়ে গিয়েছে ৷ দেরি করে কুঁড়ি এসেছে ৷ লক্ষ্মীপুজোর সময় সেই ফুল ফুটবে ৷ দুর্গাপুজোয় এবার পদ্ম সেভাবে পাওয়া যাবে না ৷ গতবার আমি 15 হাজার পদ্ম হিমঘরে মজুত করেছিলাম ৷ এবার সেই সংখ্যাটি পাঁচ হাজারও হয়নি ৷"
মালদা কোল্ড স্টোরেজ ইন্ডাসট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, "পদ্মচাষিরা মূলত আমার হিমঘরেই ফুল মজুত রাখেন ৷ কিন্তু এবার তাঁদের সমস্যা বেড়েছে ৷ এবার পদ্মের উৎপাদন নেই বললেই চলে ৷ এখনও পর্যন্ত আমার হিমঘরে হাজার পঞ্চাশ পদ্ম মজুত করা হয়েছে ৷ কিন্তু দুর্গাপুজোয় জেলায় অন্তত দেড় লাখ পদ্মের প্রয়োজন ৷ তাই পদ্মচাষি ও ব্যবসায়ীদের অনেকে বিহার, অনেকে আবার ঝাড়খণ্ড কিংবা অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন ৷ তাঁদের একটাই উদ্দেশ্য, যে কোনও উপায়ে জেলার প্রতিটি দুর্গাপুজোয় পর্যাপ্ত পদ্ম সরবরাহ করা ৷"
মালদা শহরের পুজো উদ্যোক্তা অনির্বাণ বসু জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় জোগান এত কম থাকলে এবার পদ্মফুলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে ৷ তাতে অনেক পুজো কমিটিই সমস্যায় পড়বে ৷ আশা করছি, চাষি ও ব্যবসায়ীরা ভিনরাজ্য থেকে পর্যাপ্ত পদ্মের সংস্থান করতে পারবেন ৷
মূলত, মালদা জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় 1100 দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয় ৷ পুজোর প্রতিদিনই প্রয়োজন পড়ে পদ্মের ৷ সব মিলিয়ে পুজো মরশুমে চাহিদা অন্তত দেড় লাখ ফুলের ৷ কিন্তু এবার অতিবৃষ্টির জেরে জলাশয়গুলিতে পদ্মের কুঁড়ি এসেছে দেরিতে ৷ ফুল ফুটতে আরও 10-12 দিন সময় লাগবে ৷ জেলায় মূলত ইংরেজবাজার, হবিবপুর, বামনগোলা, চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুরে পদ্মের চাষ হয় ৷ উৎসব মরশুমে ফুলের উৎপাদনও ভালো হয় ৷ কিন্তু এবার সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ৷ বেশিরভাগ জলাশয়ে পদ্মগাছে কুঁড়ি দেখা দিয়েছে অনেক দেরিতে ৷ এই মুহূর্তে গাছে কুঁড়ি থাকলেও তার অধিকাংশই পরিণত হয়নি ৷ তাই সময় থাকতেই ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন অধিকাংশ পদ্মচাষি৷
আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোর কারণে সাময়িক বন্ধ থাকছে বাজা কদমতলা ঘাটের গঙ্গা আরতি