মালদা, 12 সেপ্টেম্বর : "বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, ছাঁকনি সুচের ছিদ্র খোঁজে ৷ কিন্তু ছাঁকনির নিজেরই যে অনেক ছিদ্র, সেটা দেখে না ৷ ইংরেজবাজার পৌরসভাতেও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে ৷ উনি কারোর কথা শোনেন না ৷ মুখ্যমন্ত্রী কিংবা পৌরমন্ত্রীর কথাও শোনেন না ৷ পৌরসভাকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বলে মনে করেন ৷ আজ চিদম্বরমের মতো লোককেও তিহার জেলে থাকতে হচ্ছে ৷ ওঁর রাস্তাও বহরমপুর জেলে যাবে ৷ এটা লিখে রাখুন ৷" আজ নাম না করে ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষের উদ্দেশে এই মন্তব্য করলেন পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান, প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি ৷ যদিও তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নীহারবাবু জানান, তিনি দলের বাইরে কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না ৷ কে কী বললেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় ৷
মালদা জেলার রাজনীতিতে কৃষ্ণেন্দু-নীহার দ্বৈরথ কারোর অজানা নয় ৷ দু'জনের ব্যক্তিগত ঝামেলা পৌঁছে গেছিল তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও ৷ সম্প্রতি নীহারবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন পৌরসভার 15 জন দলীয় কাউন্সিলর ৷ তার মধ্যে ছিলেন কৃষ্ণেন্দুবাবুও ৷ গতকালই সেই প্রস্তাব পেশের 15 দিন উত্তীর্ণ হয়েছে ৷ কথা ছিল, পৌরমন্ত্রীর নির্দেশে আজ সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেবেন অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসা কাউন্সিলররা ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা প্রত্যাহার করা হয়নি ৷ এর মধ্যেই কৃষ্ণেন্দুর আক্রমণ নীহারকে ।
কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, "অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আইনগত প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ৷ পৌরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তিনটি স্তর রয়েছে ৷ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং 3 জন কাউন্সিলর ৷ চেয়ারম্যানের স্তরটা ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত ৷ 10 জন একজোট হলেই কোনও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসা যেতে পারে ৷ এক্ষেত্রে 15 জন কাউন্সিলর বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন ৷ আমরা এই চেয়ারম্যানকে তাঁর চেয়ার থেকে সরাতে অনড় ৷ কাউন্সিলরের পাশাপাশি আমি একজন আইনজীবী ৷ কোনও মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে যাওয়ার পর সাক্ষী কি বিচারকের কাছে গিয়ে নিজের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করতে পারে? এটা কি বিচারক মেনে নেবেন? আজ খবরের কাগজে দেখলাম, বর্তমান পৌরপ্রধান বলেছেন, আমাদের সবার ভিজিলেন্স হওয়া উচিত৷ আমি নিজে 4 দফায় পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলাম ৷ 5 দফায় বিধায়ক ছিলাম ৷ আমার দাদু ও ঠাকুরদা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন ৷ আমি ওঁকে চ্যালেঞ্জ করছি, দম থাকলে আমার বিরুদ্ধে FIR করে দেখান ৷ আমি পৌর আইনের 51 ধারায় বৈঠক ছাড়া কোনও কাজ করেছি কি না কিংবা 81 ধারায় বাজেট ছাড়া কোনও আয়-ব্যয়ের কাজ করেছি কি না দেখুন ৷ যদি তা করে থাকি, তবে আমার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল অ্যাক্টে মামলা করা হোক ৷ বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ছাঁকনি সুচের ছিদ্র খোঁজে ৷ কিন্তু ছাঁকনির নিজেরই যে অনেক ছিদ্র, সেটা দেখে না ৷ ইংরেজবাজার পৌরসভাতেও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে ৷ উনি কারোর কথা শোনেন না ৷ উনি মুখ্যমন্ত্রী কিংবা পৌরমন্ত্রীর কথাও শোনেন না ৷ পৌরসভাকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বলে মনে করেন ৷ আজ চিদম্বরমের মতো লোককেও তিহার জেলে থাকতে হচ্ছে ৷ ওঁর রাস্তাও বহরমপুর জেলে যাবে ৷ এটা লিখে রাখুন ৷ উনি তো দলটাই কোনওদিন করেননি ৷ মন্ত্রী হওয়ার জন্য মুকুল রায়ের হাত ধরে এসেছিলেন ৷ কংগ্রেস-CPI(M)-র জোট প্রার্থী হিসেবে ভোটে জিতেছিলেন ৷ দল সম্পর্কে ওঁর মুখ থেকে কিছু শুনতে চাই না ৷"
এর জবাবে নীহারবাবু আজ বলেন, "অনাস্থা প্রত্যাহার নিয়ে আমার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই ৷ এটা জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের বিষয় ৷ তবে আমি যতদূর জানি, আগামীকালের মধ্যে হয়তো অনাস্থা উঠে যাবে ৷ তবে আমার বিরুদ্ধে কে কী বললেন তা নিয়ে আমার কিছু যায় আসে না ৷ এটা তাঁর নিজের বিষয়৷ আমি দলের বাইরে কোনও মন্তব্য করতে পারব না ৷"