মালদা, 2 সেপ্টেম্বর: চার সিভিক ভলান্টিয়ার ও এক পঞ্চায়েত সদস্যকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠল BSF জওয়ানদের বিরুদ্ধে ৷ হবিবপুর থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বিজইল এলাকার ঘটনা৷ BSF-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে হবিবপুর থানার পুলিশ৷ তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত BSF-র তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ ইতিমধ্যেই ঘটনাটি সংগঠনের শীর্ঘ নেতাদের জানানো হয়েছে জেলা BJP-র তরফে ৷
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গতরাতে সীমান্ত সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন হবিবপুর থানায় কর্মরত চার সিভিক ভলান্টিয়ার৷ অভিযোগ, কেরানিপাড়া এলাকায় তাঁদের পথ আটকান কর্তব্যরত BSF জওয়ানরা ৷ সেখানে ছিলেন দাড়িপাড়া BOP-র কম্পানি কম্যান্ডান্ট দলজিৎ সিং৷ অভিযোগ, সেই সময় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের মারধর করতে শুরু করেন৷ ওই এলাকায় বাড়ি ওই গ্রামের BJP পঞ্চায়েত সদস্য সন্তোষ সরেনের৷ গোলমাল শুনে তিনি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন৷ অভিযোগ, তাঁকেও মারধর শুরু করেন BSF জওয়ানরা৷ সন্তোষবাবু নিজের পরিচয় দিলে তাঁকে বলা হয়, তিনি পঞ্চায়েত সদস্য, এবার তাঁকে সাংসদ বানিয়ে দেওয়া হবে৷ গোলমালের মধ্যে গ্রামের কেউ ফোন মারফত হবিবপুর থানায় খবর দেয়৷ এদিকে জওয়ানদের মারের জেরে ঘটনাস্থান ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন চার সিভিক ভলান্টিয়ার ও সন্তোষবাবু৷ শেষ পর্যন্ত হবিবপুর থানার IC পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান৷ সেখানেই পাঁচজন চিকিৎসাধীন৷
হবিবপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য স্মৃতি বিশ্বাসের স্বামী দিলীপ রায় হবিবপুর থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কর্মরত৷ গতকাল রাতে তাঁকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে ৷ আজ স্মৃতি বলেন, "গতকাল রাত 10টায় স্বামীর ডিউটি শেষ হয়েছিল৷ 10টা 17 মিনিট নাগাদ আমি তাকে ফোন করি৷ সে জানায়, বাড়ির কাছে চলে এসেছে৷ কিন্তু সে বাড়িতে না আসায় আবার 10টা 24 মিনিটে ফের তাকে ফোন করি৷ সে তখন জানায়, রাস্তায় BSF জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলছে৷ প্রথমে এনিয়ে ভাবিনি৷ কিন্তু তার ফোনে শুনতে পাই, BSF জওয়ানরা স্বামীকে অকথ্য ভাষায় কথা বলছে৷ তা শুনে আমি দিদি আর জামাইবাবুকে নিয়ে ঘটনাস্থানের উদ্দেশে রওনা দিই৷ সেই জায়গাটি আমাদের বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে৷ সেখানে গিয়ে দেখি, এক মহিলা রাস্তার ধারে কান্নাকাটি করছেন৷ তিনি জানান, তাঁর স্বামীকে BSF মারধর করে পুকুরে ফেলে দিয়েছে৷ সেখানকার পঞ্চায়েত সদস্য সন্তোষ সরেনকেও মারধর করা হয়েছে ৷ আমার স্বামী সহ মৃণাল, নিবাস আর মহাদেব নামে আরও তিন সিভিক ভলান্টিয়ারকেও মারধর করা হয় ৷ এরই মাঝে হবিবপুর থানার IC ঘটনাস্থানে পৌঁছান৷ তিনি আসার পরেই ঘটনাস্থান থেকে চলে যায় জওয়ানরা৷"
এই ঘটনায় BSF-র একটি মহল থেকে এলাকায় চাউর করা হয়েছে, গতকাল রাতে ওই এলাকায় কয়েকজন জুয়ার আসর বসিয়েছিল৷ সেই আসর বন্ধ করতে গেলে সেখানকার মানুষজন BSF জওয়ানদের উদ্দেশ্যে করে অশ্লীল কথা বলতে শুরু করে৷ হামলা চালাতে উদ্যত হয়৷ সেকারণেই গতকাল রাতে BSF-র পক্ষ থেকে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ এনিয়ে BJP বিধায়ক জুয়েল মুর্মু বলেন, "গতকাল রাত 9টা নাগাদ বৈদ্যপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের BJP সদস্য সন্তোষ সরেন বাড়ির পাশে হইচই শুনে বেরিয়ে আসেন৷ সেই সময় ডাল্লা গ্রামে ডিউটি শেষ করে কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার বাড়ি ফিরছিলেন৷ সন্তোষবাবুর বাড়ির পাশে তাঁদের আটকায় BSF জওয়ানরা৷ তাঁরা সিভিকদের মারধর করছিলেন৷ সন্তোষবাবু তাঁদের বাধা দেন৷ তখন সন্তোষবাবুকেও মারতে শুরু করে BSF-র ওই জওয়ানরা৷ এর সঙ্গে জুয়ার আসরের কোনও সম্পর্ক নেই৷ এই পঞ্চায়েতকে কালিমালিপ্ত করতে এসব কথা বলা হচ্ছে৷ গতকাল BSF জওয়ানরা সন্তোষবাবুকে মারার হুমকিও দেয়৷ বর্তমানে নিগৃহীত পঞ্চায়েত সদস্য ও সিভিক ভলান্টিয়াররা চিকিৎসাধীন৷ এই ঘটনায় BSF-র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে কি না তা শীর্ষ নেতৃত্বই সিদ্ধান্ত নেবে৷" যদিও হবিবপুর থানার পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই কেরানিপাড়া BOP-র 159 ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডার সহ পাঁচ জওয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে৷