মালদা, 13 জুলাই : দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রীর ৷ ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর দুই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সাজ্জাদ আলি সহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির ৷ তাঁর অভিযোগের নিশানায় রয়েছে তিনটি ব্যাঙ্কও৷ শুধু তাই নয়, আজ নাম না করে ইংরেজ বাজারের বর্তমান বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষও এই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি ৷ যদিও গোটা ঘটনাটি কৃষ্ণেন্দুবাবুর রাজনৈতিক অভিসন্ধি বলে মন্তব্য করেছেন অভিযুক্ত প্রধান ৷ তবে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির অভিযোগ নিয়ে নীহাররঞ্জন ঘোষ বা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি ৷ কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির অভিযোগের ভিত্তিতে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে যদুপুর দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চার বাসিন্দা ৷ তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷
আজ অভিযোগকারী চার গ্রামবাসীকে পাশে নিয়ে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি বলেন, "যদুপুর দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাজ্জাদ আলি, ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য আঞ্জুর শেখ, শহরের একটি হোটেলের মালিক নিরঞ্জন আগরওয়ালা এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মালদা শাখার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে যদুপুর দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ওই চার বাসিন্দা গত পরশু ইংরেজবাজার থানায় পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ৷ গত বছরের 12 ডিসেম্বর সাজ্জাদ আলি ও আঞ্জুর শেখ গ্রামবাসীদের জ়িরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এলাকায় একটি ক্যাম্প করেন ৷ প্রায় 100 গ্রামবাসী ওই ক্যাম্পে নিজেদের নামে অ্যাকাউন্ট খোলেন ৷ অথচ অ্যাকাউন্ট খোলার পর অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, বন্ধন ব্যাঙ্ক ও ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের মালদা শাখা উপভোক্তাদের পাসবুক, ATM কার্ড কিংবা চেক বুক দেয়নি ৷ অভিযোগকারী চার গ্রামবাসী ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করলে তাঁদের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয় ৷ দীর্ঘদিন ঘোরাঘুরি করেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় গ্রামবাসী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ৷ আমি ব্যাঙ্কে যাই ৷ নথিপত্র খতিয়ে দেখি, শহরের সিলভার আর্কেড নামে একটি হোটেলের মালিক নিরঞ্জন আগরওয়ালার অ্যাকাউন্টে কার্ড সোয়াইপের মাধ্যমে এই চার গ্রামবাসীর অ্যাকাউন্ট থেকে দফায় দফায় টাকা ঢুকেছে ৷ নিরঞ্জনবাবু আমার পূর্ব পরিচিত ৷ খবর পেয়েই তিনি আমাকে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন ৷ আমি ওই হোটেলেও যাই ৷ যেদিন টাকা মালিকের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, সেদিনের CCTV-র ফুটেজ দেখতে চাই ৷ কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাকে সেই ফুটেজ দেখায়নি ৷ পরে আমি এনিয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখি, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ নিজেদের নথিতে উপভোক্তাদের ফোন নম্বরও বদলে ফেলেছে ৷ সেকথা কাউকে জানানো হয়নি ৷ একই ঘটনা ঘটেছে বন্ধন ব্যাঙ্ক ও ইউনিয়ন ব্যাঙ্কেও ৷"
তিনি আরও বলেন, "আমি পরিষ্কার বুঝতে পারি, সরকারি টাকা লুটপাট করতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকা লুট হয়েছে ৷ এই প্রধান নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে জিতেছিল ৷ এখন আমাদের দলে এলেও সে প্রশাসনের কোথাও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা জানায়নি ৷ ইংরেজবাজারের বর্তমান বিধায়ক সাজ্জাদ আলিকে প্রধান করেছিলেন ৷ তবে আঞ্জুর আমাদের টিকিটেই ভোটে জিতেছিল ৷ আমি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গোটা বিষয়টি শুভেন্দু অধিকারীকেও জানিয়েছি ৷ শুভেন্দু বলেছিল, জেলাশাসকের মাধ্যমে দ্রুত এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, 15 দিনের বেশি হয়ে গেলেও এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷ তাই আজ আমি সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি জানাতে বাধ্য হলাম ৷ গ্রামবাসীর অ্যাকাউন্টে ধান কেনার টাকা-সহ একাধিক প্রকল্পের টাকা ঢুকিয়ে সেই সব টাকা জালিয়াতি করে লুট করা হচ্ছে ৷"
অভিযোগকারী এক গ্রামবাসী জান্নাতুন বিবি বলেন, "আমাদের এলাকার অনেকজনের টাকাই প্রধান সাজ্জাদ আলি এভাবে তুলে নিয়েছে ৷ আমরা কেউ কোনওদিন ধানের ব্যবসা করি না ৷ ধান উৎপাদনও করি না ৷ অথচ ধানের টাকা আমাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে ৷ অ্যাকাউন্ট করার সময় আমাদের প্রধান জানিয়েছিলেন, সরকারি সাহায্যের টাকা ঢুকবে ৷ তাই অ্যাকাউন্ট করতে হবে ৷ পাসবুক, ATM কার্ড কিংবা চেকবই না পাওয়ায় আমরা অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করি ৷ ব্যাঙ্ক থেকে বলা হয়, প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ৷ আমি প্রধানকে বলেছিলাম, আমার অ্যাকাউন্টে যেন কোনও টাকা না ঢোকানো হয় ৷ কিন্তু তারপরেও টাকা ঢুকতে থাকে৷ প্রধান জানায়, পুজো পর্যন্ত টাকা ঢুকতে থাকবে ৷ ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফায় আমার অ্যাকাউন্টে প্রায় দুই লাখ টাকা ঢুকেছে ৷ শেষ পর্যন্ত আমি গোটা ঘটনা নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছি ৷"
যদিও গোটা ঘটনাটিকে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির চক্রান্ত বলে মন্তব্য করছেন অভিযুক্ত প্রধান ৷ তিনি বলেন, "অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ৷ অভিযোগ করা হয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েত তরফে অ্যাকাউন্ট করে দেওয়া হয়েছে ৷ সেটা কোনও দিনই হয় না ৷ অ্যাকাউন্ট ব্যাঙ্কেই খোলা হয় ৷ আমার বিরুদ্ধে ATM কার্ড, পাসবুক, চেকবুক নিয়ে নেওয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার তদন্ত হোক ৷ তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক ৷ এর আগেও কৃষ্ণেন্দুবাবু আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ তুলেছেন ৷ কোনওটিই ধোপে টেকেনি ৷ এসব অভিযোগ তুলে আমাকে রাজনৈতিকভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে দলেরই লোকজন ৷ আমার উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে ৷ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে কৃষ্ণেন্দুবাবু আমাকে ডেকে পাঠাতে পারতেন ৷ আমি বিষয়টি দলের উপরমহলে জানিয়েছি ৷"
যদিও কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি কোনও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরও ৷ ইংরেজবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ জানা যাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসনও ৷