মালদা, 4 ডিসেম্বর : দু’বছর আগে শীতের সময় নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল জমির আলু। একটি আলুও ঘরে তোলা যায়নি। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা পুরাতন মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার আলুচাষিদের মনে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের আতঙ্কে সেই স্মৃতি ফের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে এখানকার আলুচাষিদের ৷
চলতি মরশুমে ফের আলুচাষ শুরু হয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগ জমিতেই আলুর বীজ লাগানো প্রায় শেষ । ঠিক সেই সময় ফের ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপের ভ্রূকুটি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পুরাতন মালদার আলুচাষিদের মনে। জাওয়াদের প্রভাবে শুধু এই রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকা বা দক্ষিণবঙ্গেই প্রভাব ফেলবে না, এর জেরে এই অসময়ে বৃষ্টি হতে পারে মালদা-সহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও ৷ এই নিয়ে ইতিমধ্যেই কৃষি দফতরের তরফে চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে। আলুচাষিদের আশঙ্কা অসময়ের এই বৃষ্টিতে ক্ষতি হতে পারে আলু চাষের ৷
আরও পড়ুন : Cyclone Jawad Effect : জাওয়াদের আগাম সতর্কতায় বন্ধ হুগলির ফেরি পরিষেবা
মালদা জেলায় আলুচাষে এগিয়ে রয়েছে পুরাতন মালদা ব্লক। এই ব্লকের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ভাল পরিমাণ আলু চাষ হয় প্রতি বছর। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবুক, মহিষবাথানি ও মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত। এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় সব জমিতেই আলুর চাষ হয়। ফলে এই অকাল বর্ষণের আশঙ্কায় চিন্তিত এখানকার চাষিরা ৷ মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের শবদলখানি গ্রামের আলুচাষি মিলন রাজবংশীর কথায়, “আমার জমিতে আলুর বীজ লাগানোর কাজ প্রায় শেষ। মাত্র এক বিঘা জমি জমিতে আলুর বীজ লাগানো বাকি ছিল। আজই সেই কাজ শেষ করছি। এবছর দু’ভাই মিলে 12 বিঘা জমিতে আলুচাষ করছি। প্রতি বিঘাতে 18 থেকে 20 হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন যদি বৃষ্টি হয় তাহলে কিছু করার থাকবে না। বৃষ্টিতে আলুর বীজ পচে যাবে। একবার এই চাষ নষ্ট হলে আর কোনও ফসল চাষ করারও উপায় নেই। সেই সময়ও নেই। শুনেছি, বৃষ্টির আশঙ্কায় আলুচাষ এখন বন্ধ রাখতে কৃষি দফতর থেকে মাইকে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু সেই কাজ তো আমাদের শেষ! ”
এলাকার আরও এক কৃষক গোপেন রাজবংশীর গলাতেও একই সুর ৷ তিনি বলেন, “আলু বীজ লাগানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। 12 বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছি । বিঘা প্রতি 20-25 হাজার টাকা এবার খরচ হয়েছে। এখন বৃষ্টি হলে আমরা মরে যাব । এই এলাকায় অসংখ্য কৃষক আলুচাষ করেন । আমি এবার হাজার টাকা কৃষিঋণ নিয়ে চাষ করছি । এলাকার বেশিরভাগ চাষিই আলুচাষে ঋণ নিয়েছেন। বৃষ্টিতে চাষ ভাসলে ঋণ কীভাবে শোধ করব জানি না । দু’বছর আগে বৃষ্টি আমাদের পথে বসিয়েছিল ।" সব মিলিয়ে জাওয়াদের চিন্তায় এখন রাতের ঘুম উড়েছে মালদার আলুচাষিদেরও ৷