মালদা, 1 অক্টোবর : এসেছে শরৎ । উতলা বাতাসে ঢেউ উঠেছে ধানের ক্ষেতে । ইতিমধ্যে ধানগাছে শিস বেরতে শুরু করেছে । আর মাস দুয়েক । তারপরেই ক্ষেত থেকে সোনার ধান উঠবে চাষির ঘরে । কিন্তু ঠিক সেই সময় চাঁচল 1 নং ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার ধানচাষিদের মাথায় হাত পড়েছে । বিঘার পর বিঘার সবুজ ধান ক্ষেত হলুদ হয়ে যাচ্ছে । যে শিস বেরিয়েছিল, সেটাও লাল হয়ে যাচ্ছে । কী কারণে এমন ঘটনা, ভেবে দিশেহারা সবাই । চাষিরা সেই গাছ কেটে ফেলছেন । নিজেদের পেটের ভাত জোগানের কথা তাঁরা আর ভাবছেন না । এখন ধানের গাছ গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করছেন তাঁরা । অভিযোগ, এমনটা চললেও কৃষি দফতরের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই । যদিও ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত পরিদর্শন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্লক কৃষি আধিকারিক ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের ভগবতীপুর, মুলাইবাড়ি, বিবিচৌকি, দিগি-সহ বেশ কিছু মৌজায় এবার ধানচাষে হয় কোনও পোকা কিংবা কোনও ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে । তাতে গাছের ভিতর শিস থাকা অবস্থাতে গাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে । যে সব গাছে সদ্য শিস বেরিয়েছে, সেগুলি লাল হয়ে যাচ্ছে । এই অবস্থায় রোগাক্রান্ত গাছ না কাটা হলে অন্য জমিগুলিতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে । তাই চাষিরা ধানের গাছ কেটে নিচ্ছেন । এদিকে এই এলাকার বেশিরভাগ চাষি ঋণ নিয়ে ধানচাষ করেছেন । এই অবস্থায় কী ভাবে তাঁরা ঋণ শোধ করবেন, বছরের খাবার কী ভাবে জোগাড় করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ৷
আরও পড়ুন : Ajoy High Tide : অজয়ে হঠাৎ বান, গোরু চরাতে গিয়ে চরের জঙ্গলে আটকে তিন গ্রামবাসী
ভগবতীপুর মৌজার ধানচাষি লাল মহম্মদ বলেন, "এবার প্রায় সাত বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম । কী পোকার আক্রমণ হল বুঝতে পারছি না, তবে ধানের গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে । সংক্রমণের শুরুতে আমরা সবাই স্থানীয় কৃষি দফতরে যোগাযোগ করেছিলাম । সেখান থেকে ওষুধ দেওয়া হলেও তাতে কোনও কাজ হয়নি । ধানের গাছ হলুদ থেকে লাল হয়ে যাচ্ছে । এখনও গাছে শিস বেরোয়নি । আমরা ধানের গাছ কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছি । কিন্তু গরুও সেই গাছ খেতে চাইছে না । আমরা কেউ স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে, কেউ বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছি । প্রতি বিঘায় 5 থেকে 7 হাজার টাকা খরচ হয়েছে । এর আগে বোরো ধান চাষ করেছিলাম । 30 শতাংশ ধান কাটতে পেরেছিল, বাকি চাষ জলে ডুবে গিয়েছিল । এর আগেও বোরো ও আমন ধানে পোকামাকড় আক্রমণ চালিয়ে চাষ শেষ করে দিয়েছিল । কিন্তু কোনও সরকারি সহায়তা পাইনি ।"
মুলাইবাড়ির চাষি আখতার হোসেন বলেন, "এবার 16-17 বিঘায় আমন চাষ করেছিলাম । অন্যান্য বছর ধানে পোকা লাগলেও ওষুধে চলে যেত । কিন্তু এবার কোনও ওষুধে কিছু কাজ হচ্ছে না । কো-অপারেটিভ থেকে 70 হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছিলাম । কিন্তু যা পরিস্থিতি, ঘরে একটি ধানের দানাও তুলতে পারব না । সংসার কীভাবে চালাব জানি না । এমনিতেই করোনাকাল চলছে । লকডাউনে কাজকর্মও করতে পারিনি । এবার পোকায় ধান পুরোটাই নষ্ট করে দিল । কৃষি দফতরও রোগ সম্পর্কে কিছু বলতে পারছে না । অন্য বছর 15 বিঘা জমি থেকে 60-80 কুইন্টাল ধান পেতাম । এবার আমার ঘরে ছিটেফোঁটাও ধান হবে না । আমাদের মতো কৃষকদের যেন সরকারি সহায়তা করা হয়, তার জন্য কৃষি দফতরে আবেদন জানিয়েছি । কারণ, এখানে অনেক চাষিরই শস্যবিমা করা নেই । তাঁরা এই বিমার বিষয়ে জানেও না ।"
আরও পড়ুন : Malda : বাসন্তী মার্কেট কমপ্লেক্স হাটের সরকারি জমি দখলের অভিযোগ, নির্বিকার প্রশাসন
এ ব্যাপারে চাঁচল 1 নম্বর ব্লক কৃষি আধিকারিক দীপঙ্কর দেব বলেন, "চাঁচল 1 নম্বর ব্লকে প্রায় 10 হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয় । কিছু কিছু জমিতে রোগ ও পোকার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে । আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছি । প্রতি মরশুমে রাজ্য সরকারের তরফে চাষিদের শস্যবিমা করা হয় । এর আগেও কৃষকরা নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন । এবারও কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি উপরমহলে জানানো হয়েছে । ব্লক কৃষি আধিকারিকরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছেন । জমির ধান রক্ষা করতে তাঁরা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন ।"