মালদা, 19 মে: রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে মেধাতালিকায় একসঙ্গে মালদার 21 জনের ঠাঁই কখনও হয়নি ৷ এবারের মাধ্যমিকে মালদা জেলার ফলাফল চমকে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে ৷ এতদিন যে জেলা পিছিয়ে পড়া হিসাবে চিহ্নিত ছিল, সেই জেলার ছেলেমেয়েরা কীভাবে শিক্ষাঙ্গনে হঠাৎ করে এতটা এগিয়ে গেল ? জেলার ছেলেমেয়েরা আরও কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, সেক্ষেত্রে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা কী হবে, এসব নিয়েই জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের মুখোমুখি হয় ইটিভি ভারত ৷
এই বিষয়ে শিক্ষারত্ন হরিস্বামী দাস বলেন, "এবারের মাধ্যমিকে মালদার 21 জন পরীক্ষার্থী প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছে ৷ এই ফলাফল শুধু চমকপ্রদই নয়, জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে একটা মাইলস্টোন ৷ মাধ্যমিকে এটাই মালদা জেলার সবচেয়ে ভালো ফলাফল ৷ এই জেলা থেকেও যে এত ভালো ফল হতে পারে, আগে কখনও ভাবা যায়নি ৷ বিশেষ করে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের কথা বলব ৷ ওই স্কুল থেকেই মেধাতালিকায় 13 জন জায়গা করে নিয়েছে ৷ এছাড়া মালদা শহরের অক্রুরমণি করোনেশন হাইস্কুল থেকে দু'জন মেধাতালিকায় জায়গা পেয়েছে ৷ তবে শুধু শহরের স্কুলগুলিই নয়, জেলার প্রান্তিক এলাকার স্কুলের ছেলেমেয়েরাও মাধ্যমিকে এবার অভূতপূর্ব ভালো ফল করেছে ৷ আসলে এখন পড়াশোনার প্রতি এই জেলার ছেলেমেয়েদের আগ্রহ অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷ স্কুলগুলিও ছাত্রছাত্রীদের ভালো পরিষেবা দিচ্ছে ৷ বিবেকানন্দ স্কুল পরীক্ষার্থীদের অনেক অতিরিক্ত পরীক্ষা নেয় ৷ প্রত্যেক পড়ুয়ার জন্য আলাদা করে সময় দেওয়া হয় ৷ বাকি স্কুলগুলি সেই পথেই এগোচ্ছে ৷ মালদা জেলাকে এখন আর কেউ পিছিয়ে পড়া জেলা বলতে পারবেন না ৷ পড়ুয়াদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সর্বশিক্ষা মিশনও অনেক উদ্যোগ নিয়েছে ৷ এখন সবার মধ্যেই একটা জেদ এসেছে, সে'ও কিছু করে দেখাতে পারে ৷ এই ফলাফলের জন্য আমি প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকদের অভিনন্দন জানাচ্ছি ৷ আমার ধারণা, মালদা জেলার এই ফলাফল আগামীতেও ধারাবাহিক থাকবে ৷"
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শক্তিপদ পাত্রের বক্তব্য, "জেলাভিত্তিক কথাটা আমি পছন্দ না করলেও ব্যবহার করতে বাধ্য হই ৷ কারণ, কিছু জেলা হিসাবের দিক থেকে সমজাতীয় পরিগণিত হলেও আদপে সেটা হয় না ৷ আমি কিন্তু কখনও মালদা জেলাকে পিছিয়ে পড়া বলিনি ৷ বলেছি, এই জেলা উপরের দিকে যেতে লড়াই করছে ৷ এই জেলার অনেক ছেলেমেয়ে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে রয়েছে ৷ আসলে এখানকার ছেলেমেয়েদের লড়াইয়ের কথা কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছয় না ৷ তবে শিক্ষা ব্যবস্থায় এখানকার দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ৷ এখানকার ছেলেমেয়েরা নিজেদের চেষ্টায় সামনের দিকে এগোচ্ছে ৷ সময় কিংবা সমাজের কাছ থেকে তারা কিন্তু তেমন সুযোগ পায় না ৷ অনেকেই কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করছে ৷"
তিনি আরও জানান, মাধ্যমিকের এই ফল নিয়ে আনন্দ করা সঠিক ৷ কারণ, এই ছেলেমেয়েরা কিন্তু অনেকেই বঞ্চিত ৷ অনেকেই অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে ৷ অনেকে শুধু মিড-ডে মিলের আশায় স্কুলে যায় ৷ আর মালদা কিংবা রাজ্যের স্কুলগুলিতে যে পড়াশোনার নিখুঁত পরিবেশ রয়েছে, সেটাও বলা যায় না ৷ তারপরেও এই ছোট্ট জেলার ছেলেমেয়েরা ভালো ফল করেছে ৷ তাদের অভিনন্দন ৷ কিন্তু এবার কী করণীয় ! আমাদের কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের কথা ভাবতে হবে ৷ কারণ, কর্মের দিক থেকে মাধ্যমিকের ফল গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে ৷ সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায় উচ্চমাধ্যমিকের ফল ৷ সেই সময় থেকে বিভিন্ন চ্যানেলে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ৷ ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন জায়গা কিংবা প্রদেশে ছুটোছুটি করতে হয় ৷ তাই শিক্ষক, অভিভাবকদের মাধ্যমিকের এই ফলে অনুপ্রাণিত হয়ে উচ্চমাধ্যমিকের কথা ভাবতে হবে ৷ এই ফলাফল আগামীতেও ধরে রাখতে হবে ৷ সেক্ষেত্রে তাঁদের গুরুদায়িত্ব রয়েছে ৷ উচ্চশিক্ষাতেও মালদা এগোতে পারে ৷ অন্তত সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে ৷ এখানে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, প্রচুর কলেজ রয়েছে ৷ তাহলে কেন আমরা এই জেলাকে পিছিয়ে পড়া বলব ? এক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের সঙ্গে শিক্ষাঙ্গন পরিচালনায় জড়িতদেরও অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে ৷ তাঁরা রাজনীতি করুন, তাতে আমার আপত্তি নেই ৷ কিন্তু প্রতিষ্ঠানে এসে তাঁরা নিজেদের মূল দায়িত্ব অর্থাৎ ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানকেই প্রাধান্য দিন ৷ ছেলেমেয়েদের জন্য নিজেদের কাঁধটা বাড়িয়ে দিন ৷ সবাই উঠে পড়ে লাগলে এখানকার ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষাতেও ভালো ফল করবে ৷
আরও পড়ুন : মাধ্যমিকে পাশের হারে তৃতীয়, তবে 118 জনের মেধাতালিকায় নেই কলকাতা