মালদা, 15 ডিসেম্বর : “দিদিমণি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন ৷ আজ সেখানে তিনি বলছেন, চা শ্রমিকদের ভাগ্য পালটে দেবেন ৷ উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন করে দেবেন ৷ 10 বছর আপনাদের উন্নয়ন করতে কে বারণ করেছিল?” আজ মানিকচকের মথুরাপুরে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে এই মন্তব্য করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ৷
বক্তব্যের শুরুতে আজ এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রকে আক্রমণ করেন দিলীপবাবু ৷ তিনি বলেন, “এখানকার দিদিমণি বলেছিলেন, উন্নয়ন না হলে ডেভেলপমেন্ট হয় না ৷ আমি এখানে উন্নয়নও দেখলাম আর ডেভেলপমেন্টও দেখলাম ৷ আর গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বীরভূমের জেলা সভাপতি কেষ্টবাবু বলেছিলেন, রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে ৷ এখানে রাস্তায় উন্নয়ন শুয়ে পড়েছে ৷ এই রাস্তায় যমও এখানে আসবে না ৷” একথা বলেই দিলীপবাবু মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনার করেন ৷ তিনি বলেন, “মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্রে মাত্র চারটি পঞ্চায়েতে আমরা জিততে পেরেছি ৷ বাকিগুলিও জিততাম ৷ কিন্তু দিদির উন্নয়নের ভাইরা ভোট করতে দেয়নি ৷ আমাদের জিততে দেয়নি ৷ তাই এখানকার মানুষ অপেক্ষায় ছিল ৷ লোকসভায় মানুষ নিজেদের ভোট দিয়েছে ৷ তাই উত্তরবঙ্গের আটটির মধ্যে সাতটিতে আমরা জিতেছি ৷ রিগিং-এর জন্য শুধু দক্ষিণ মালদা আসনে আমরা জিততে পারিনি ৷ তবে মালদার মানুষ তৃণমূলকে কখনও জিততে দেবে না ৷ গত বিধানসভা নির্বাচনেও এখানে একটি আসনেও তৃণমূল জিততে পারেনি ৷ আগামী বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলকে সাফ করতে হবে৷ একইসঙ্গে যারা মানুষের ভোট নিয়ে জেতার পর তৃণমূলে চলে যাচ্ছে, তাদেরও এবার সাফ করতে হবে৷ দালালদের কোনও জায়গা নেই ৷”
কাটমানি ইশুতে আজ তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি ৷ তাঁর গলায় উঠে এসেছে আবাস যোজনা, স্বচ্ছ ভারত অভিযানে কাটমানি প্রসঙ্গ ৷ তিনি বলেন, “কাটমানির জন্য শৌচাগারের সাইজ় ছোটো হয়ে গিয়েছে ৷ দরজাটা আরও ছোটো ৷ আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর যদি ওই শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তিনি সেখানে ঢুকতে পারবেন? আর কোনও কারণে ভিতরে ঢুকে গেলেও বের করার সময় দেওয়াল ভাঙতে হবে ৷ তাঁর দলের লোকজনের কাটমানির জন্যই এই হাল হবে ৷” চাকরি এবং চিকিৎসা নিয়েও তিনি রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন ৷ বলেন, “চাকরি কিংবা চিকিৎসার জন্য এই রাজ্যের মানুষকে ভিনরাজ্যে যেতে হয় ৷ তাহলে দিদিমণির থেকে লাভ কী?”
দিলীপবাবু প্রতিশ্রুতি দেন, “রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসলে প্রত্যেক কৃষককে বছরে 6 হাজার টাকা দেবই ৷ একই সঙ্গে প্রত্যেককে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে নিয়ে আসা হবে ৷ ৫ লাখ টাকার বিমার আওতায় আসবে সবাই ৷ এবার তৃণমূল ভোট চাইতে এলে সবাই যেন হাতে ঝাড়ু নিয়ে তাদের এই প্রশ্ন করে ৷ উত্তর দিতে না পারলে যেন ঝাড়ু দিয়ে সবাই তাদের মুখ সাফ করে দেয় ৷ এরা সবাই চোর ৷ কয়েকদিন আগে 150 লরি গম বাংলাদেশে পাচারের সময় ধরা পড়েছে ৷ এখানকার খাদ্যমন্ত্রীও চোর ৷ এসব অনাচার বন্ধ করতে গেলে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে ৷ কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শিতা যা দেশের মানুষ কোরোনার সময় টের পেয়েছে৷ তিনি প্রত্যেক মায়ের ঘরে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দিয়েছেন৷ মায়েদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে 500 টাকা করে ঢুকিয়ে দিয়েছেন ৷ আমরা কথা রাখি ৷ আগেই বলেছিলাম, উনিশে হাফ আর একুশে সাফ ৷ উনিশে আমাদের ১৮ জন সাংসদ জিতেছেন৷ একুশে আমরা ২০০টির একটিও কম আসন পাব না৷ বরং আমাদের আসন বাড়বে৷ লোকসভা নির্বাচনে আমরা ১৭ থেকে ৪০ শতাংশে লাফ মেরেছি৷ এবার লাফ মেরে দিদিমণির ঘাড়ে উঠে পড়ব ৷ ওই দলে আর কেউ থাকতে চাইছে না ৷ আমি সবাইকে আহ্বান করছি, সিপিএম-কংগ্রেস-তৃণমূল থেকে যারা সোনার বাংলা গড়ার জন্য আমাদের সঙ্গে আসতে চান, তাঁরা চলে আসুন ৷”