মালদা, 29 অক্টোবর : পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) আর্থিক দুর্নীতির মামলা হয়েছে ৷ সেই মামলা এখনও বিচারাধীন ৷ কালীপুজোর (Kali Puja) মেলায় অভিযোগকারীর দাদাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ৷ ঘটনায় নাম জড়ায় পঞ্চায়েত প্রধানের (Panchayat Pradhan Accused in Murder) ৷ এনিয়ে প্রধান-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে ৷ কিন্তু পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ ৷
সময় গড়ানোর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে জলও ক্রমশ ঘোলা হচ্ছে৷ এনিয়ে জোট বাঁধছে গ্রাম ৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Elections 2023) মুখে যা বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে রাজ্যের শাসক দলকে ৷ এই ঘটনায় সরাসরি তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছেন এলাকার বিজেপি (BJP) সাংসদ ৷ গোটা বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন তৃণমূলের (Trinamool Congress) রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ৷
কালীপুজোর একদিন পর গ্রামে মেলা বসে ৷ সেই রাতে বাড়ি থেকে 200 মিটার দূরে একটি আমবাগান থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় গাজোল ব্লকের বৈরগাছি 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের খোসলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা, 52 বছর বয়সী ধনঞ্জয় সরকারকে ৷ মালদা (Malda) মেডিক্যাল নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি ৷ এই ঘটনায় নাম জড়ায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুবোধ সরকারের ৷ ঘটনার রাতেও তাঁর সঙ্গে ধনঞ্জয়বাবুর গোলমাল হয়েছিল ৷ সেকথা মেনেও নিয়েছেন প্রধান৷ এনিয়ে প্রধান-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গাজোল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত ধনঞ্জয়বাবুর পরিবারের সদস্যরা ৷
ধনঞ্জয়বাবুর ছেলে পরিতোষ সরকার বলছেন, “মেলায় আমরা দুই ভাইও গিয়েছিলাম ৷ আমি রাত 11টার আগে বাড়ি চলে আসি৷ দাদাও 12টার আগেই ঘরে চলে আসে ৷ বাবা মেলায় থেকে গিয়েছিল ৷ শুনতে পেয়েছি, রাত একটা নাগাদ মেলার মধ্যেই প্রধানের সঙ্গে বাবার ঝামেলা হয় ৷ রাত দু’টো নাগাদ বাগানের মধ্যে বাবার মাথার পিছন দিকে ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয় ৷ রাত তিনটে নাগাদ গ্রামেরই এক কাকা ফোন করে আমাদের জানায়, বাগানের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় বাবা পড়ে রয়েছে ৷ সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে উদ্ধার করে মালদা মেডিক্যাল নিয়ে যাচ্ছিলাম৷ মাঝরাস্তাতেই বাবা মারা যায় ৷”
বাবার খুনে প্রধানেরই হাত দেখতে পাচ্ছেন পরিতোষ ৷ তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে আমরা নিজেদের জমিতে একটি পুকুর খনন করি ৷ প্রধান সেই পুকুরকে 100 দিনের কাজে স্কিম ধরে 4 লাখ 12 হাজার টাকা আত্মসাৎ করে ৷ সেই ঘটনা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে ৷ এখনও মামলা চলছে ৷ এর জেরে প্রধান মদ্যপ অবস্থায় মাঝেমধ্যেই বাবাকে হুমকি দিত৷ খুন করবে বলেও শাসাত ৷ বাড়িতে এসেও হুমকি দিয়েছিল ৷ আমাদের ধারণা, বাবার খুনের পিছনে প্রধানের হাত রয়েছে ৷ আমরা পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি ৷ আমরা চাই, এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত হোক ৷ আমরা যেন সুবিচার পাই ৷”
আরও পড়ুন : মঞ্চে মমতার ভাই, জেলা সভাপতি ও চেয়ারম্যানকে বহিষ্কারের দাবি তৃণমূল কর্মীদের
একই বক্তব্য গ্রামের বাসিন্দা হেমন্ত সরকারের ৷ তিনি বলেন, “ধনঞ্জয় সরকারদের নিজস্ব পুকুরকে 100 দিনের কাজে স্কিম দেখিয়ে প্রধান কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করে ৷ এভাবে সে আরও অনেক ভুয়ো স্কিম করে প্রায় দু’কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ৷ এনিয়ে ধনঞ্জয়বাবুর ভাই প্রহ্লাদ সরকার-সহ আমরা আট গ্রামবাসী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছি ৷ তারপরেই প্রধান আমাদের দেখে নেওয়া, এমনকি খুনের হুমকি দেয় ৷ সেদিন সুযোগ পেয়ে প্রধান ধনঞ্জয়কে খুন করেছে ৷ আমরা পুলিশি তদন্তে এখনও ভরসা রাখছি ৷ তবে পুলিশ খুনিদের গ্রেফতার না করলে আমরা গ্রামের সবাই একজোট হয়ে বড়সড় আন্দোলনে নামব ৷”
গাজোল থানায় দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত প্রধান সুবোধ সরকার জানাচ্ছেন, “ধনঞ্জয় সরকার আমার নামে মামলা করেনি ৷ ওর সঙ্গে আমার কোনও ঝামেলাও নেই ৷ ওদের পরিবারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ৷ কালীপুজোর মেলায় গানের সময় গ্রিনরুমে থাকা নিয়ে ওর সঙ্গে আমার একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল ৷ তারপর আমরা চলে যাই ৷ এখন আমার বিরুদ্ধে খুনের মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে ৷ ওদের বাড়িতে গিয়ে আমি কোনওদিনও কাউকে হুমকি দেয়নি ৷ আমি বিজেপির টিকিটে জিতলেও পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি ৷ তাই বিজেপির লোকজনই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলছে ৷”
আজ নিহতের বাড়িতে যান স্থানীয় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ তিনি বলেন, “তৃণমূলের একটা বড় অংশ রাজ্য জুড়ে লুটপাট করে যাচ্ছে ৷ তার জন্যই মুখ্যমন্ত্রী বারবার বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েতের ডাক দিচ্ছেন ৷ এই লুটপাটের প্রতিবাদ করলেই তাঁদের খুন করা হচ্ছে ৷ আমাদের দলের কার্যকর্তা ধনঞ্জয় সরকারকে খুনের পিছনেও তৃণমূলের হাত রয়েছে ৷ কারণ, তিনি 100 দিনের কাজে লুটের প্রতিবাদ করেছিলেন ৷ এনিয়ে হাইকোর্টে মামলাও চলছে ৷ তিনিই ছিলেন এই মামলার সাক্ষী ৷ তাই তাঁকে খুন করা হল ৷ আমি চাই, পুলিশ গল্প না বানিয়ে এই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করুক ৷”
এনিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি বলেন, “এটা মর্মান্তিক ঘটনা৷ পুলিশের কাছে অনেকের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে ৷ দোষীরা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের গ্রেফতার করা হবে ৷”
আরও পড়ুন : ইটভাটার দখল নিয়ে সংঘর্ষ দুই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার, ভোটের আগে অস্বস্তি শাসক দলে