মালদা, 29 নভেম্বর: এক আজব মেলা ৷ যে মেলায় ফুচকা-জিলিপি-পাঁপড়ভাজার দোকানের জায়গার পাশাপাশি জুয়ার বোর্ড ছড়িয়ে থাকে ৷ তা আজব ছাড়া আর কী হতে পারে ! শুধু পুরুষরা নয়, এই মেলায় অংশ নেন বাড়ির মেয়ে-বউরাও ৷ বাড়ির সবচেয়ে বয়স্ক আর সবচেয়ে ছোটো সদস্য একই বোর্ডে জুয়া খেলে ( Malda Gamble Fair) ৷ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে জুয়া খেলা ৷ এই মেলায় কোনও পুলিশি নিষেধাজ্ঞা নেই ৷ পুরাতন মালদার বাসিন্দারা এই আজব মেলার সাক্ষী কয়েক প্রজন্ম ৷ তবে আগে সারারাত চলত এই মেলা ৷
কথিত আছে তুর্কি শাসনকালে মালদা শহরে সেভাবে বসতি গড়ে ওঠেনি ৷ সেই সময় মোকাতিপুর এলাকা ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল ৷ জন্তু জানোয়ারের বাস ছিল ৷ বাঘের ভয়ে দিনদুপুরেও ওই এলাকায় যাওয়ার সাহস পেত না কেউ ৷ সেই জঙ্গলেই ছিল ষষ্ঠীদেবীর বেদি ৷ তাই ঘরের মেয়ে-বউরা যখন মুলোষষ্ঠী তিথিতে সেই বেদিতে পুজো দিতে যেতেন ৷ তখন পুরুষরা দল বেঁধে তাঁদের পাহারা দিতেন ৷ সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত চলত পুজো ৷ পুরুষরা এতক্ষণ একভাবে বসে থাকতে না-পেরে সময় কাটাতেন জুয়া খেলে ৷ সেই শুরু, এখন তা হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য ৷
এই মেলায় পুলিশ সহযোগিতা করে ৷ ঐতিহ্যের কাছে বৈধ-অবৈধ প্রশ্ন বোধহয় অনেক সময়ই ফিকে হয়ে গিয়েছে ৷ অবশ্য কয়েক’শো বছরের পুরোনো এই মেলায় এখনও পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি ৷ মেলার এক উদ্যোক্তার কাছে জানা গিয়েছে, কয়েক ঘণ্টার মেলায় দেড় থেকে দু’কোটি টাকার জুয়া খেলা হয় ৷
আরও পড়ুন: লিভ-ইন সম্পর্ক সংক্রান্ত 560টি হিংসার অভিযোগ দায়ের হয়েছে আগেই, উদ্বিগ্ন দিল্লি পুলিশ
মেলায় উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা সমীরণ দাস বলেন, “অনেক প্রাচীন এই মেলা ৷ ঘন জঙ্গলের মধ্যে বাড়ির মেয়েরা ষষ্ঠীদেবীর পুজো করতে আসতেন ৷ তাঁদের পাহারা দিতেন পরিবারের পুরুষরা ৷ সময় কাটাতে তাঁরা নিজেদের মধ্যে জুয়া খেলতেন ৷ মা বেহুলা যখন লখিন্দরের দেহ নিয়ে এখান দিয়ে ভেসে যাচ্ছিলেন, তখনও এখানে জুয়া খেলা চলছিল ৷ তবে আগের মতো রাতে এখন আর খেলা হয় না ৷ বিকেলেই শেষ হয়ে যায় ৷ তাই এই মেলার উল্লেখ পাওয়া যায় মনসামঙ্গল কাব্যে ৷”
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় বিয়ে করায় ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারল প্রথম স্ত্রী ও দুই ছেলে
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় জুয়া খেলছিলেন স্থানীয় ধোপাপাড়ার বাসিন্দা সমাপ্তি দাস ৷ এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “সকাল থেকে সময় পাইনি ৷ সবে মেলায় আসলাম ৷ প্রতি বছরই এই মেলায় আসি ৷ জুয়া খেলতে খুব ভালো লাগে ৷ কেন এই মেলায় জুয়া খেলা হয় জানি না ৷ তবে আনন্দের জন্যই এই খেলা ৷ এখনও পর্যন্ত 40-50 টাকা হেরে আছি ৷ কখনও জিতছি, কখনও বা হারছি ৷ দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয় ৷” মেলায় জুয়ার বোর্ড বসিয়েছেন গঙ্গারামপুরের প্রদীপ সাহা ৷ তাঁর কথায়, “3-4 বছর ধরে এই মেলায় আসি ৷ এমন মেলা আর কোথাও দেখিনি ৷ এমন মেলার কথা শুনিওনি ৷ মেলায় জুয়া খেলে মানুষ খুব আনন্দ পায় ৷’’