মালদা, 4 মে: যা আশঙ্কা ছিল, কার্যত তাই ঘটেছে ৷ মালদার প্রশাসনিক বৈঠকে গাজোল, কালিয়াগঞ্জ ও কালিয়াচক ইস্যুতে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের তিরষ্কারের মুখে পড়লেন পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকরা ৷ তবে রাজ্যে একার পর এক এ ধরণের ঘটনার পিছনে বহিরাগতদেরও হাত দেখতে পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ কারও নাম না-করলেও তাঁর নিশানায় যে পদ্মশিবির, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ একইসঙ্গে বৃহস্পতিবের মুখ্যমন্ত্রীর রোশ থেকে রেহাই পেল না সংবাদমাধ্যমও ৷
প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য বুধবার সরাইঘাট এক্সপ্রেসে হাওড়া থেকে মালদা টাউনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মাঝে অবশ্য বোলপুর, রামপুরহাট, বর্ধমান বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে জেলা নেতাদের সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায় তাঁকে ৷ অমর্ত্য সেন ইস্যুতে জোরদার আন্দোলনের জন্য জেলা নেতাদের একগুচ্ছ নির্দেশ দিতে দেখা যায় তাঁকে ৷ সে থেকে খুব সহজেই আন্দাজ করা গিয়েছিল এদিনের প্রসাসনিক বৈঠকেও সাম্প্রতিক একাধিক বিষয় উঠে আসবে মুখ্যমন্ত্রীর গলায় ৷ কার্যত সেই পথেই হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রীও ৷
গাজোল বা কালিয়াচকের ঘটনায় যেভাবে পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল, জেলা পুলিশকে ভর্ৎসনা করে তাতেই এদিন কিছুটা মলম লাগাতে চাইলেন তিনি ৷ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “গাজোল আর কালিয়াচকের ঘটনায় ইচ্ছেকৃতভাবে আইনশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে ৷ কোনও ঘটনা ঘটার চার ঘণ্টা পর পুলিশ যাবে ? এখন আর সেই দিন নেই ৷ ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিতে হবে পুলিশকে ৷ ওয়েটিং লিস্টের কোনও জায়গা নেই ৷ এই লিস্ট যে ধান্ধাবাজরা তৈরি করছে, তারা কে কোন এলাকায় এই কাজ করে ৷ আমরা তার খবর রাখি | আর পুলিশ প্রশাসন সেই খবর পাচ্ছে না !"
কালিয়াগঞ্জে নাবালিকার মৃত্যু এবং পরে যেভাবে ওই কিশোরীর দেহ নিয়ে গিয়েছে পুলিশ এদিন সেই ইস্যুতে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন এবং পুলিশকর্তাদের কড়া সমালোচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওই ঘটনার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মানুষকে জানাতে এত সময় লাগল কেন ? কী হয়েছে, জনগণকে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিলে ?" এরপরই পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, "ইদানিং দেখছি, কিছু থানার আইসি একটু অলস হয়ে গিয়েছে ৷ কালিয়াগঞ্জের ঘটনার পর আইসি কেন ঘটনাস্থলে যাননি ? কেন সেখানে কনস্টেবলকে পাঠানো হয়েছিল? কনস্টেবল গিয়ে দু'ঘণ্টা বসে থাকল কেন ? ঘটনাস্থলে মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পেলে আইসি-কে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যেতে হবে ৷ মৃতদেহকে সসম্মানে নিয়ে আসবে ৷"
যেভাবে ওই নাবালিকার দেহ পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে তা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল সব মহলে ৷ এদিন সেই প্রসঙ্গ উঠে এল মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও ৷ তিনি স্পষ্টতই জানালেন মৃত দেহকে সম্মান জানাতে হবে ৷ এদিন পুলিশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "সঙ্গে বডি ক্যারিং ব্যাগ রাখবে ৷ কিছু না-থাকলে কয়েকটা সাদা কাপড়ও তো কিনে রাখা যায় ! মনে রাখতে হবে, মানুষ মারা গেলে তাকে আরও বেশি সম্মান দিতে হয় ৷ এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে ৷”
অন্যদিকে, কালিয়াগঞ্জে যেভাবে পুলিশের উপর আক্রমণ নেমে এসেছিল এদিন সে বিষয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি ক্ষোভের সুরেই বলেন, "ওখানে পুলিশকে মেরে দেওয়া হল, বিডিও অফিস ভাঙচুর হল, এত সাহস হয় কোথা থেকে! ওই গ্রামে গুলি কে চালাল ? আমি তো শুনেছি ওই গ্রামটি বিএসএফ কন্ট্রোল করে ৷ বিএসএফ এখন সীমান্তের 50 কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে অনেক জায়গায় অত্যাচার করছে বলে খবর পেয়েছি ৷ এর মধ্যে অনেকে মারাও গিয়েছেন ৷ গুলি কোথা থেকে চলল, কে চালাল, তা নিয়ে একটা তদন্ত হওয়া উচিত ৷ আইনকে কঠোর হাতে রক্ষা করতে হবে ৷”
আরও পড়ুন: 10 বছরের মধ্যে গঙ্গার ভাঙন কমানোর প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রীর