মালদা, 6 ফেব্রুয়ারি : বিয়ে শেষ৷ বাসি বিয়েও শেষ৷ এসেছিল কনে বিদায়ের পালা৷ তখনই বিপত্তি৷ মেয়ে বিদায়ের সময় টেলিভিশন যৌতুক লাগবে বলে পণ পাত্রপক্ষের৷ এদিকে পাত্রীপক্ষের রীতি, অষ্টমঙ্গলায় নবদম্পতিকে যৌতুক হিসাবে ভালো কিছু দিতে হয়৷ সেই হিসাবে পাত্রীপক্ষ ওই টেলিভিশন সেট অষ্টমঙ্গলার জন্য বরাদ্দ রেখেছিল ৷ এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু ৷ পাত্রপক্ষের সাফ কথা, টিভি না পেলে তারা নববধূকে ঘরে নিয়ে যাবে না ৷ খবর যায় পুলিশে৷ পুলিশও সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থানে আসে৷ পুলিশের সামনে বধূকে বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি হন পাত্র ও তাঁর বাবা৷ কিন্তু বেঁকে বসেন নববধূ৷ তিনি সাফ জানিয়ে দেন, একটি টেলিভিশন সেটের জন্য পাত্র ও তার পরিবারের লোকজন যখন এত কিছু করতে পারে, তখন সেই বাড়িতে তাঁর নিরাপত্তাও বিপন্ন হতে পারে ৷ পরে বাবার বাড়ি থেকে নানা জিনিস নিয়ে আসার চাপ শুরু হবে ৷ সুতরাং তিনি শ্বশুরবাড়ি যাবেন না ৷ বরের ঘরও করবেন না ৷ এই অবস্থায় মেয়ের পাশেই দাঁড়ান পরিবারের সদস্যরা ৷ ঘটনাটি পুরাতন মালদা পৌরসভার 15 নম্বর ওয়ার্ডের শিবরাম পল্লি এলাকার ৷ পাত্রীর পরিবারের তরফে গোটা ঘটনা নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷ গোটা ঘটনায় পাত্রপক্ষকেই দায়ী করছে এলাকার মানুষজন৷
B.SC পাশ করার পর সম্প্রতি ওই যুবতির বিয়ে ঠিক হয়েছিল পুরাতন মালদা পৌরসভার 12 নম্বর ওয়ার্ডের খয়রাতি পাড়ার বাসিন্দা নিশীথ কুণ্ডুর সঙ্গে৷ নিশীথ পেশায় ব্যবসায়ী ৷ যুবতিরা দুই ভাই, এক বোন ৷ তিনিই বড়ো ৷ গায়ের রং একটু চাপা বলে অভিভাবকরা বিয়েতে অনেক যৌতুকের ব্যবস্থা করেছিলেন ৷ আড়াই লাখ টাকা নগদ, আট ভরি সোনা, মোটরবাইক, একাধিক আসবাবপত্রের সঙ্গে আরও অনেক জিনিস যৌতুক হিসাবে দেওয়া হয় ৷ সেই তালিকায় ছিল টেলিভিশন সেটও৷ সোমবার ছিল বিয়ের লগ্ন ৷ সেই রাতে ঠিকমতোই বিয়ে শেষ হয়ে যায় ৷ মঙ্গলবার সন্ধেয় হয় বাসিবিয়েও৷ এরপর ছিল বিদায়ের পালা ৷ তখনই শুরু হয় ঝামেলা ৷
কনের মেসো সীতারাম চক্রবর্তী বলেন, “বিদায়ের মুহূর্তে ছেলের বাবা মেয়ের বাবাকে ফোন করেন৷ তিনি জিজ্ঞেস করেন, টিভি সেট কোথায়? মেয়ের বাবা উত্তর দেন, টিভি বাড়িতে কেনা রয়েছে৷ এনিয়ে দু’জনের মধ্যে ফোনে কিছু কথা হয়৷ তারপরই ছেলের বাবা এখানে চলে আসেন৷ তিনি সাফ জানিয়ে দেন, টিভি না পেলে তাঁরা মেয়ে নিয়ে ঘরে যাবেন না৷ বিয়ের সমস্ত রীতি হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা মেয়ে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন ৷ এমনকী মেয়ের ননদরা মেয়েকে শাসাতে শুরু করেন ৷ এসবের মধ্যে আমাদের বাড়ির মেয়েরা ছেলের বাবার পা পর্যন্ত ধরেন ৷ কিন্তু ছেলের বাবা তাঁদের লাথি মেরে সরিয়ে দেন ৷ পরিস্থিতি দেখে আমরা পুলিশে খবর দিই ৷ পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে ৷ পুলিশের উপস্থিতিতে ছেলে ও তার বাবা মেয়ে ঘরে নিয়ে যেতে রাজি হয় ৷ তখন মেয়েই বেঁকে বসে৷ জানিয়ে দেয়, যারা তার আত্মসম্মান নিয়ে খেলতে পারে, তারা ভবিষ্যতে তার অনেক ক্ষতি করতে পারে ৷ এদের বাড়িতে আমি থাকতে পারব না ৷ তখন আমরা সবাই মেয়ের পাশে দাঁড়াই৷ সিদ্ধান্ত নিই, ওই বাড়িতে মেয়ে পাঠাব না ৷ আমরা এনিয়ে থানায় অভিযোগ জানাব ৷ আমরা চাই, এই ঘটনায় ছেলে ও ছেলের পরিবারের উপযুক্ত শাস্তি হোক ৷ একইসঙ্গে আমরা প্রশাসনের কাছে মেয়ের নিরাপত্তাও দাবি করছি৷”
যদিও পাত্রীপক্ষের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাত্র নিশীথ কুণ্ডু৷ তিনি বলেন, “গতকাল বিয়েবাড়িতে আমার জামাইয়ের সঙ্গে পাত্রীপক্ষের খানিক বচসা হয়েছিল ৷ সেই খবর পেয়ে আমার বাবা সেখানে যান ৷ তিনি জানতে চান, তাঁর জামাইকে অপমান করা হল কেন? এনিয়েই সেখানে ঝামেলা শুরু হয় ৷ এই বিয়েতে আমাদের কোনও পণের দাবি ছিল না ৷ আমাদের কেউ গতকাল সেখানে মারামারি করেনি ৷ বরং পাত্রীপক্ষই আমাদের লোকজনকে ঘরে তালা বন্ধ করে আটকে রাখে ৷ আমাকে ও আমার বাবাকে সেখান থেকে আসতে দিচ্ছিল না ৷ শ্বশুরমশাই আমাকে টাকার বিনিময়ে ঘরজামাই থাকার প্রস্তাবও দেন ৷ আমি আর ওই মেয়েকে ঘরে নিয়ে আসতে রাজি নই ৷ গতকাল যা ঘটেছে তা সমস্তই পাত্রীপক্ষের পূর্বপরিকল্পিত৷ এখন পণের গল্প সাজিয়ে আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷”