মালদা, 17 মার্চ : কোরোনা আতঙ্কে ইতিমধ্যেই রাজ্যে এপিডেমিক ডিজ়িজেজ় অ্যাক্ট জারি করা হয়েছে । নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ । এবার বার্ড ফ্লু আতঙ্ক ছড়াল পুরাতন মালদায়৷ পুরাতন মালদার মাধাইপুর গ্রামে একটি বেসরকারি পোলট্রি ফার্মে মুরগির মড়ক শুরু হয়েছে৷ বিষয়টি জানতে পেরে তৎপর জেলা প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তর৷ দপ্তরের পক্ষ থেকে দ্রুত ওই ফার্মে লোক পাঠানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে৷
পুরাতন মালদার মাধাইপুর গ্রামের একপাশে রয়েছে দুটি ব্রয়লার মুরগির ফার্ম৷ তার একটিতে বেশ কয়েকদিন ধরে মুরগি পালন বন্ধ রয়েছে৷ দ্বিতীয়টিতে দু’হাজার মুরগি পালন করা হচ্ছে৷ প্রতিটি মুরগির বয়স মাসখানেকের কিছু বেশি৷ ওজন এক কেজির কাছাকাছি । গতকাল থেকে এই ফার্মেই মুরগির মড়ক শুরু হয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত কয়েকশো মুরগির মৃত্যু হয়েছে৷ যেগুলি বেঁচে রয়েছে, সেগুলিও মৃত্যুর প্রহর গুনছে৷ মুরগিগুলি চলতে চলতে হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়ে যাচ্ছে৷ কিছুক্ষণ পর ছটফট করতে করতে সেখানেই মারা যাচ্ছে৷
তবে, মরা মুরগি থেকে এলাকায় যাতে কোনও রোগ ছড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করেছে ফার্ম কর্তৃপক্ষ৷ ফার্মের পাশেই করা হয়েছে বড় গর্ত৷ সেখানেই মরা মুরগিগুলিকে পুঁতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যদিও ফার্মের মালিক শাহজাহান শেখ ক্যামেরার সামনে আসতে চাননি৷ তিনি জানান, একটি বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে তিনি গত তিন বছর ধরে এই ফার্ম চালাচ্ছেন৷ বছরের এই সময় আবহাওয়ার তারতম্যে হাতেগোনা কিছু মুরগি প্রতি বছরই মারা যায়৷ তবে আগে কখনও এমন ব্যাপক মড়ক তাঁর ফার্মে হয়নি৷ এমনিতেই কোরোনা আতঙ্কে মানুষ পোলট্রির ব্রয়লার মুরগি খাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে৷ বাজারে মুরগির দাম ৪০ টাকা কিলো দরে নেমে এসেছে৷ তার উপর এই মড়ক তাঁকে একেবারে পথে বসিয়ে দিল৷ ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি৷ এবিষয়ে ফার্মের এক কর্মী আজাম শেখ বলেন, "গতকাল থেকেই ফার্মে মুরগির মড়ক শুরু হয়েছে৷ কী কারণে এমন হচ্ছে তা বলতে পারছি না৷ তবে মুরগিগুলি ঝিমোতে ঝিমোতে মারা যাচ্ছে৷ ফার্মের মুরগি আইবি রোগে আক্রান্ত বলে জানা গেছে । তিন বছর ধরে এখানে মুরগি পালন করা হচ্ছে৷ এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি৷ এখনও পর্যন্ত প্রায় আড়াইশো মুরগি মারা গেছে৷ মরা মুরগিগুলি গর্ত করে আমরা পুঁতে দেব৷"
বিষয়টি জেলা প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর অমরচন্দ্র মাজিকে জানানো হলে তিনি বলেন, "আমাদের সরকারি মুরগির ফার্মে বায়ো সিকিউরিটি মেনে চলা হয়৷ বাইরে থেকে কেউ ফার্মে ঢুকলে তাঁকে প্রথমে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশ্রিত জলে ফুটবাথ নিতে হবে৷ এরপর তাঁকে ঘরের সামনে চুনের উপর দিয়ে যেতে হবে৷ বাইরে থেকে কোনও জীবাণু যাতে মুরগির খাঁচার ভিতরে ঢুকতে না পারে তার জন্যই এই ব্যবস্থা৷ আমাদের কর্মীদের পোশাক পরিবর্তন করে এই দুই পদ্ধতি অবলম্বন করে মাস্ক পরে খাঁচার ভিতরে ঢুকতে হয়৷ কোরোনা ভাইরাস এই জেলার কোথাও কোনও মুরগির ফার্মে প্রভাব ফেলেছে বলে আমাদের জানা নেই৷ ভাইরাসের প্রকোপ রুখতে আমরা যতটা প্রয়োজন, ততটা ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ মানুষের অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷ পুরাতন মালদার পোলট্রি ফার্মে মুরগির মড়কের বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কোনও খবর আসেনি৷ পুরাতন মালদায় আমাদের দু’জন চিকিৎসক ও একজন ব্লক প্রাণীসম্পদ আধিকারিক রয়েছেন৷ আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি৷ তাঁদের ওই ফার্ম পরিদর্শনেও যেতে বলছি৷ তবে এই সময় রানিখেত নামে মুরগির একটি রোগ হয়৷ ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিসও এই সময় মাথাচাড়া দেয়৷ দুটোই ভাইরাসঘটিত রোগ৷ ভ্যাকসিন না দেওয়া হলে মুরগি এই সব রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ এমন রোগ হলে ফার্মের 100 শতাংশ মুরগিই মারা যেতে পারে৷ এসব দেখে অনেকে আতঙ্কিত হয়৷"