মালদা,7 নভেম্বর: পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে 2021 বিধানসভা নির্বাচনে বেশকিছু আসন জয়ের লক্ষ্যে যোগী আদিত্যনাথের উপর ভরসা করেছিল বঙ্গ বিজেপি ৷ এর ফল কী হয়েছে, সবার জানা ৷ আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনেও (Bengal Panchayat Election) উত্তরপ্রদেশের এক ভোট কুশলীর উপরেই ফের ভরসা করছে পদ্ম শিবির ৷ বাংলার গ্রাম দখলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুনীল বনশলকে (Sunil Bansal) ৷
পঞ্চায়েত ভোটে মালদায় ভালো ফলের লক্ষ্যে দলের জেলা কার্যালয়ে উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে সোমবার আলোচনায় বসেন সুনীল বনশল (Bengal BJP Leadership in meeting with Sunil Bansal) ৷ এই বৈঠকে সুনীল বনশল ছাড়াও যোগ দেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ একইভাবে দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়েও তাঁদের বৈঠক করার কথা আছে (BJP to fix strategy for Panchayat Election) ৷ এই বৈঠকের মূল অ্যাজেন্ডা যে পঞ্চায়েত নির্বাচন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার (BJP in meeting to fix strategy before Panchayat Election) ৷
এদিন বৈঠক শুরুর আগে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, "বিজেপি সংগঠনভিত্তিক দল ৷ সংগঠনকে শক্তিশালী করতে প্রতিনিয়ত আমাদের প্রয়াস চলে ৷ তারই অঙ্গ হিসাবে আজ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনশল এখানে বৈঠক করতে এসেছেন ৷ তিনি 2014 সালে উত্তরপ্রদেশে ভোট কৌশলী থাকার পাশাপাশি সরকার গড়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন ৷ উত্তরবঙ্গের তিনটি জায়গায় তিনি বৈঠক করবেন ৷ গতকাল শিলিগুড়িতে প্রথম বৈঠক হয়েছে ৷ আজ মালদার দুটি সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক হবে ৷ আগামীকাল রায়গঞ্জে দুই দিনাজপুরের নেতৃত্বকে নিয়ে তিনি বৈঠক করবেন ৷"
আরও পড়ুন: আমি যেটা বলেছি সেটাই ফাইনাল, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে ফের সরব অনন্ত মহারাজ
এদিন রাজ্যের অন্যান্য ইস্যুতেও মুখ খুলেছেন সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) ৷ ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার দেশে মুসলিম সংগঠন, পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিএফআই) নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে ৷ এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে সুকান্ত বলেন,“দেশে পিএফআই নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর 250 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার সরকারিভাবে এই সংগঠনকে এখনও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি ৷ এখনও পর্যন্ত ওই সংগঠনের কোনও দফতর সিল করেনি ৷ আসলে এই রাজ্য সরকার চাইছে, পশ্চিমবঙ্গে এমন জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির বাড়বাড়ন্ত হোক ৷ এ পর্যন্ত পিএফআইয়ের একজন বাংলা থেকে গ্রেফতার হয়েছে ৷ অবশ্য এখানকার পুলিশ নয়, অন্য রাজ্যের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে ৷ আগামীতে রাজ্যবাসীকে ভাবতে হবে, তাঁদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার কী রেখে যাচ্ছে ৷"
সোমবারই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির জন্য উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে 10 শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ৷ এই প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার অনেক আগেই এই সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেছে ৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও পর্যন্ত এই সংরক্ষণ চালু করেনি ৷ গতকাল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী আমাকে জানিয়েছে, তাঁরা এই কোটায় নেট পরীক্ষায় পাশ করেছে ৷ কিন্তু রাজ্য সরকারের কোটা না থাকায় তাঁরা আবেদন করতে পারছেন না ৷ আগামীতে তাঁরা চাকরি পাবেন কিনা বুঝতে পারছেন না ৷ বিষয়টি রাজ্য সরকারের ভেবে দেখা উচিত ৷”
আরও পড়ুন: মমতার অনুষ্ঠানের জন্য বিক্ষোভে বাধা কেন ? প্রশ্ন বিজেপির
তবে রবিবার শিলিগুড়িতে পৃথক উত্তরবঙ্গ ভাবনার হোতা অনন্ত মহরাজের সঙ্গে বৈঠক করলেও এদিন সেই বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি (Sukanta Majumdar meeting with Ananta Maharaj) ৷ উলটে এই ইস্যুতে আজ তিনি তৃণমূলের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন ৷ বলেছেন,“ক্যামেরার সামনে যে কোটি কোটি টাকা চুরি ধরা পড়েছে, তা থেকে মানুষের চোখ ঘোরানোর জন্য অনেক চেষ্টা চলছে ৷ উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার মতো খবর ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ এসব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনও কথা হয়নি ৷ আসলে দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের যে ড্যামেজ হয়েছে, তা উদ্ধার করার জন্যই এসব করা হচ্ছে ৷ মানুষ সব বুঝতে পারছে ৷ তৃণমূলের প্রচুর লোক লাইন দিয়ে আছে ৷ তৃণমূলের বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী, বিধায়ক, এমনকি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া লোকজনও সেই দলে আছে ৷ কিন্তু আমরা পচা আলু নেব না ৷ জেলা ও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই তাঁদের দলে নেওয়া হবে ৷"
সম্প্রতি তমলুকের নন্দকুমারে কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাচনে বিজেপি-সিপিএমের অলিখিত জোট তৈরি হয়েছিল ৷ ওই ভোটে তৃণমূল খাতা খুলতে পারেনি ৷ এ নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতির মন্তব্য, "কোনও ইস্যুতে কোথাও স্থানীয় স্তরে জোট হতেই পারে ৷ কারণ, এই ভোটগুলি প্রতীকে নয়, নামে হয় ৷ কিন্তু শুধু এক্ষেত্রে নয়, তৃণমূল এমন একাধিক নির্বাচনে হারছে ৷ নিরপেক্ষ ভোট হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে ৷ তবে আমরা কোনও জোটে নেই ৷ নিজেদের প্রতীকেই আমরা লড়ব ৷" সম্প্রতি মালদায় এসে অনন্ত মহারাজকে গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী ৷ অবশ্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি তাঁর সেই দাবিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন ৷ তাঁর মন্তব্য, "অধীরবাবুর কথায় গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই ৷ এখানে কংগ্রেস বলেই কিছু নেই ৷"