মালদা, 26 জুলাই : বন্যাত্রাণের টাকা লুঠের অভিযোগে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন স্বয়ং বিডিও । এই ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে শাসকদল । যদিও দলের তরফে বিডিওর দিকেই ঘুরিয়ে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে । ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতে । যদিও এ নিয়ে অভিযুক্ত প্রধানের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । পঞ্চায়েতও ছিল তালাবন্ধ ।
2017 সালে বন্যা হয় মালদায় ৷ বিশেষত উত্তর মালদার প্রতিটি ব্লকই বন্যার কবলে পড়ে । ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য বাড়ি । বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কলকাতা ফিরে গিয়েই তিনি জেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন । যাঁদের ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁদের 72 হাজার ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের 3 হাজার 300 টাকা সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করা হয় ।
কিন্তু বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারই সেই সরকারি অনুদান পাননি বলে অভিযোগ ৷ এমনকি এই বিষয়ে তাঁরা বিডিও-সহ চাঁচল মহকুমাশাসক ও জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান । তাঁদের দাবি, উপভোক্তাদের বঞ্চিত করে পঞ্চায়েত প্রধান তাঁর ঘনিষ্ঠদের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা দিয়ে অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন । শুধু তাই নয়, এক একজনের অ্যাকাউন্টে পাঁচ থেকে ছ'বারও অনুদানের টাকা দেওয়া হয়েছে ।
সেই মতো উপভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে প্রশাসন । কিন্তু সেখানেও তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ এনে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ও বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান । এরপরেই তদন্ত শেষ করে গত 22 জুলাই বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান সোনামণি সাহার বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিডিও ।
আরও পড়ুন : Minister Sabina Yeasmin : মন্ত্রী সাবিনার বিধায়ক প্যাডে চাকরির সুপারিশ, বিতর্ক মালদায়
আজ এই বিষয়ে বিডিও ক্যামেরার সামনে বিশেষ কিছু বলতে রাজি না হলেও তিনি শুধু জানান, এই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে এরপর পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে । চাঁচল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু মণ্ডল জানিয়েছেন, বিডিও'র অভিযোগ পেয়েই গোটা ঘটনার পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে ।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর প্রশাসনের এমন তৎপরতায় খুশি পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান । তিনি বলেন, “2017 সালের বন্যায় এই গ্রাম পঞ্চায়েতের 7 হাজার 394 জন ক্ষতিগ্রস্ত হন । তাঁদের তালিকাও তৈরি করা হয় । রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর তৈরির জন্য 2019 সালে অনুদান দেওয়া হয় । কিন্তু বহু উপভোক্তাই অনুদানের সেই টাকা পাননি । প্রায় 600 জন উপভোক্তা এই নিয়ে প্রশাসনের সব মহলে অভিযোগ জানান । পরে দেখা যায়, উপভোক্তাদের টাকা তাঁদের পরিবর্তে অন্যদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে । পঞ্চায়েত প্রধান সোনামণি সাহা এই কাজ করেছেন । ওই অ্যাকাউন্টগুলি জেলার বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যেও রয়েছে । অর্থাৎ যেখানে প্রধানের আত্মীয়স্বজন রয়েছেন, সেখানেই টাকা দেওয়া হয়েছে । এরপর হাইকোর্টে মামলা রুজু করা হয় । যা এখনও চলছে । শেষ পর্যন্ত 22 জুলাই বিডিও এই নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । আমার দাবি, উপভোক্তাদের অর্থ তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে এবং যাঁরা এই দুর্নীতিতে জড়িত, তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ।”
আরও পড়ুন : beautification-of-malda : নাগরিকসভার মতামত নিয়ে মালদা শহরে সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগ প্রশাসনের
আজ পঞ্চায়েত প্রধান সোনামণি সাহার নাগাল পাওয়া যায়নি । দিনভর তাঁর দফতর তালাবন্ধ ছিল । এমনকি ফোনও ধরেননি । বাড়িতেও ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে । এ ব্যাপারে তাঁর ছেলে গৌরব সাহা জানান, বাবা-মা নেই । কোথায় গিয়েছেন তাঁর জানা নেই ।
তবে এই ইস্যুতে কার্যত প্রধানের পাশে দাঁড়িয়ে পাল্টা বিডিওর সমালোচনা করেছেন জেলা তৃণমূলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর দুলাল সরকার । তিনি বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানরা বিডিওর অধীনেই কাজ করেন । বিডিও অফিসের বিভিন্ন আধিকারিকরা পঞ্চায়েতগুলি পরিচালনা করেন । এতদিন এই ঘটনা বিডিওর নজরে এল না কেন ? সরকারি অর্থ তছরূপ করা অন্যায় । শাস্তিযোগ্য অপরাধ । কিন্তু এমন ঘটনা বিডিও আগে কেন খেয়াল করেননি, সেটাও বড় কথা ।”