মালদা, 6 মে : রেশন না পেয়ে ডিলারের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখালেন বাসিন্দারা । এরপর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্য সড়কও অবরোধ করেন তাঁরা ৷ তাঁদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী কাউকে সামগ্রী দিচ্ছেন না এই ডিলার ৷ দপ্তরের আধিকারিকদের জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি । কারণ ডিলার থেকে দপ্তরের আধিকারিক সবাই রেশন সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতি করছে ৷ প্রশাসনিক আধিকারিক, ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার, সবাই মিলে কাটমানি খাচ্ছে ৷ শেষে পুলিশ ও খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকদের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ তুলে নেন তাঁরা । মালদার রতুয়া এক নম্বর ব্লকের বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের বাখরা গ্রামের ঘটনা ৷
লকডাউনে প্রত্যেকের খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার ৷ সেই মতো ডিলারদের কাছে সামগ্রীও পৌঁছে গিয়েছে ৷ কিন্তু বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী বিলি শুরু হতে না হতেই রাজ্যের একাধিক জায়গায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এবার ঘটনাস্থান মালদার রতুয়া এক নম্বর ব্লকের বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের বাখরা গ্রাম । ডিলার মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে রেশন দুর্নীতির অভিযোগ উঠল ৷ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছেন না ওই ডিলার ৷ এনিয়ে ডিলারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনও উত্তর দেননি ৷
আজ ওই ডিলারের বাড়ির সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান গ্রামের বাসিন্দারা ৷ বাহারাল-পরানপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থানে পৌঁছায় রতুয়া থানার পুলিশ ৷ কিন্তু খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকদের এলাকায় আসতে হবে, এই দাবিতে সরব বাসিন্দারা পুলিশের আবেদনেও অবরোধ তোলেননি ৷ অবশেষে ঘণ্টা চারেক পর খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা ঘটনাস্থানে গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন । দুপুর দেড়টা নাগাদ অবরোধ ওঠে ৷
এক গ্রাহক সাদ্দাম হোসেন বলেন, "আজ মাসের 6 তারিখ হয়ে গেল ৷ অথচ এখনও পর্যন্ত দোকান খোলেননি এই ডিলার ৷ আজ সকাল থেকে রেশন নেওয়ার জন্য দোকানে এসে বসে রয়েছি ৷ এপ্রিল মাসে কাউকে চার কেজি, কাউকে সাড়ে চার কেজি চাল দেওয়া হয়েছে ৷ কখনও সরকার নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী কাউকে সামগ্রী দিচ্ছে না এই ডিলার ৷ আসলে এই দপ্তরের আধিকারিক থেকে ডিলাররা সব একসঙ্গে মিলেমিশে রেশন সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতি করছে ৷ তাই এখনও গরিবের কাছে সরকারি সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না ৷ এরা গরিবের জীবন নিয়েও দুর্নীতি করছে ৷" আর এক গ্রাহক নুর আলম আলি বলেন, "এখানে রেশন নিয়ে দুর্নীতি চলছে ৷ তাই আজ আমরা সবাই মিলে ডিলারের কাছে এসেছি ৷ রেশন নিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিক, ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার, সবাই মিলে কাটমানি খাচ্ছে ৷ তাই আজ বিক্ষোভে নেমেছি । এই ডিলার দু’বছর ধরে রেশন সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে ৷ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি ৷"
যদিও গ্রামবাসীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন রেশন ডিলার মঞ্জুর আলমের ছেলে সুজন আলম ৷ তিনি বলেন, "আমরা কয়েকজন অন্যান্য রেশন ডিলারের সামগ্রী বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন জায়গায় বিতরণ করছি ৷ তাই এই ক’দিন দোকান খোলা যায়নি ৷ আগামীকাল থেকে আমাদের দোকান থেকে সামগ্রী দেওয়া হবে ৷ আমরা আগেই গোটা বিষয়টি গ্রাহকদের জানিয়ে রেখেছিলাম ৷"
বিষয়টি নিয়ে রতুয়া এক নম্বর ব্লকের BDO সারওয়ার আলিকে জানানো হলে তিনি বলেন, "বাহারালের বাখরা এলাকায় রেশন সামগ্রী বিতরণ নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছিল ৷ খবর পাওয়ার পরই সেখানে ব্লক ফুড ইন্সপেক্টরকে পাঠানো হয় ৷ আপাতত সেই ঝামেলা মিটে গিয়েছে ৷" তবে রেশন দুর্নীতিতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের জড়িত থাকা নিয়ে গ্রামবাসীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করতে চাননি BDO ৷ এবিষয়ে ব্লক ফুড ইন্সপেক্টর মহম্মদ আল মোবাশেরুল শেখ বলেন, "লকডাউনের মধ্যে ক’দিন আগেই আমি এই ব্লকে কাজে যোগ দিয়েছি ৷ ওই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে আগে কী অভিযোগ হয়েছিল তা এখনও জানি না ৷ আজ ওই দোকানে গোলমালের খবর পেয়ে সেখানে যাই ৷ গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানো গিয়েছে ৷ আগামীকাল থেকে ওই ডিলার রেশন সামগ্রী বিতরণ করবেন ৷"