মালদা, 22 এপ্রিল : তৃণমূল নেতা ও পুলিশের মদতে বিহারের মাটি মাফিয়ারা নদীর চর থেকে মাটি চুরি করছে । এমনই অভিযোগ উঠেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে । যেভাবে মাটি-বালি চুরি হচ্ছে তাতে বর্ষায় ফের ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই মাটি মাফিয়া নিয়ে সরব হয়েছিলেন মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন । দলীয় কর্মীদের এ নিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি । বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ও । পুলিশের মদতে এই কাজ চলছে বলে সরাসরি অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি ।
হরিশচন্দ্রপুরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, হরিশ্চন্দ্রপুর-বিহার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর ভাকুরিয়া অঞ্চল সংলগ্ন ফুলাহার নদী থেকে মাটি-বালি চুরি হচ্ছে (allegation of soil smuggling in Harishchandrapur)। এতে মদত রয়েছে পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের । একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনও ফল মিলছে না । এই পরিস্থিতিতে আগামী বর্ষায় ফের ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । স্থানীয় বাসিন্দা অনুজ মণ্ডল এ প্রসঙ্গে বলেন, “বিহারের লোক এসে উত্তর ভাকুরিয়া সংলগ্ন নদী তীর থেকে মাটি চুরি করছে । বিহারে নিয়ে গিয়ে এই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে । প্রতিবছর বন্যার জল নামার পর থেকেই বিহারের মাটি মাফিয়ারা সক্রিয় হয়ে ওঠে । প্রতিদিন এই ঘটনা চোখের সামনে দেখেও আমরা কিছু করতে পারি না । কারণ, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যরা মিলিতভাবে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে । পুলিশেরও এই কারবার থেকে কমিশন আছে । প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে । এভাবে মাটি চুরির ফলে প্রতিবছর বন্যা-ভাঙন হচ্ছে ।”
একই বক্তব্য আরেক বাসিন্দা বীরেন মণ্ডলেরও । তিনি বলেন, “যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে ফের বন্যা হবে । আমরা আবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হব । পুলিশকে জানালে কিছু সিভিক ভলান্টিয়ার আসছে । ওদের সামনে মাটি কাটা চলছে । পঞ্চায়েত সদস্য পাশেই বসে আছে, তার সামনে মাটি কাটা চলছে । পুলিশ যদি কমিশন না নেয় তবে কি কেউ পুলিশের সামনে মাটি কাটতে পারে?” এপই অভিযোগ প্রসঙ্গে ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মাসুমা বিবির স্বামী আবুল কালাম আজাদ বলেন, “মাটি চুরি হচ্ছে বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না । যদি এই ঘটনা ঘটে থাকে তবে আমরা প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ করব । যদি দলের কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে । গ্রামের লোক অভিযোগ করতেই পারে । কিন্তু বিষয়টাই আমাদের জানা ছিল না ।”
আরও পড়ুন : টাকার বিনিময়ে মাটি মাফিয়াদের মদত দিচ্ছেন আইসি, অভিযোগ তৃণমূল বিধায়কের
বিজেপির মালদা জেলার সম্পাদক কিষাণ কেডিয়া বলেন,“গ্রামবাসীদের থেকে জানতে পেরেছি, উত্তর ভাকুরিয়া এলাকায় বালি পাচার হচ্ছে । এই কাজে মদত দিচ্ছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্য ৷ প্রশাসনও জড়িত রয়েছে । এই সরকারের এই ধরনের কাজ মানুষ আগেও দেখেছে । খোদ মন্ত্রী বলছেন, দলের লোকজন এই কাজে জড়িত আছে । কিন্তু তাঁরা দলের লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না । মানুষ এর জবাব দেবে ।” হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি হজরত আলি এপ্রসঙ্গে বলেন, "বাংলা থেকে মাটি বিহারে পাচার হবে এটা আমরা বরদাস্ত করব না । যদি পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্যরা এই কাজে জড়িত থাকেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।”