কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজাে । আর এই পুজোকে ঘিরে বাঙালির আবেগ বাঁধভাঙা । দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সংস্কারও নেহাত কম নয় । তাই এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দুর্গাপুজোর মত বড় মাপের একটি পুজো যে পুরুষ পুরোহিত করবেন সেটাই পরম্পরা । অন্তত সেটাই সবাই দেখে অভ্যস্ত । তবে বেশ অনেকটা সময় লাগলেও যুগযুগ ধরে সমাজকে আস্টেপিস্টে বেঁধে রাখা হিন্দুত্বের নিয়ম শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে । বদলেছে মানুষের দৃষ্টিকোণ। এবারেও কলকাতার বারোয়ারি পুজোয় উমার আরাধনায় ব্রতী হবেন চার উমা (Acceptence of Women Priestesses Increasing in India)।
গত বছরের মত এই বছরেও কলকাতার 66 পল্লির দুর্গাপুজো করেছে শুভমস্তু । এই বছর একাধিক পুজো করার আবেদন ফিরিয়ে দিলেও 66 পল্লিবাসীর আবেদন ফেরাতে পারেনি শুভমস্তু । তাই এখন আর নিশ্বাস নেওয়ার সময়টুকু নেই এই চার মহিলা পুরোহিতের । চলছে শেষ বারের মত স্ক্রিপ্ট ঝালিয়ে নেওয়া ।
আরও পড়ুন: ভিনরাজ্যের পুজোতে বাংলা গানের রমরমা, পৌরহিত্যে বাংলার মহিলা পুরোহিত দল শুভমস্তু
শুধু রাজ্যেই নয়, দুর্গাপুজো করার জন্য মহিলা পুরোহিতের দল ডাক পেয়েছে দেশ বিদেশ থেকে । 2009 সাল থেকে প্রথম কাজ করেন এঁরা । এরপর বহু বিয়ে এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান করার মধ্য দিয়ে অনেক সমালোচনা অগ্রাহ্য করে এগিয়ে এসেছেন ৷ তবে গতবছর প্রথমবার দুর্গাপুজো করেন তাঁরা । আর প্রথমবার শহরের বারোয়ারি দুর্গাপুজোয় এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হয় । ইতিহাস গড়ে শুভমস্তু ।
যদিও দুর্গাপুজো করার আগে থেকেই জনপ্রিয়তার পাদপ্রদীপের তলায় আসেন তাঁরা । এরপর কলকাতার 66 পল্লির দুর্গাপুজো করার পর তাঁদের জনপ্রিয়তা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে । তাই এই বছরে পুজো করার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা তথা দুবাই থেকেও ডাক পেতে শুরু করেন তাঁরা ।
শুভমস্তুর অন্যতম সদস্যা ডক্টর নন্দিনী ভৌমিক বলেন, "দুর্গাপুজো করার জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক পেতে শুরু করি । এছাড়াও সারা বছর একাধিক সামাজিক কাজ করতে হয় আমাদের । তাই আমরা আমাদের দল বিস্তার করার সিদ্ধান্ত নিই । সেই মত আমরা বিজ্ঞাপন দিয়ে 14 জন মহিলাকে নির্বাচন করি । এরপর চলে এঁদের প্রশিক্ষণ । এঁদের মধ্যে চারজনকে দুর্গাপুজোর জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে ।"
আরও পড়ুন: নালিকুলের সিংহবাড়িতে পুজোর জোগাড় করেন ছেলেরা, মেয়েরা থাকেন 'ছুটিতে'
তিনি আরও বলেন, "যেভাবে একাধিক আবেদন ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে তাতে আমাদের দলকে আরও বারবার পরিকল্পনা করতে হচ্ছে । আশা করছি পরের দুর্গাপুজোয় আমরা আরও মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দুর্গাপুজোর কাজের জন্য প্রস্তুত করতে পারব । তারপর তাঁরা শুভমস্তুর হয়ে আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় পুজো করতে পারবেন ।"
66 পল্লি পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদদুম্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, "দীর্ঘদিনের এই পুজোর পুরোহিতের প্রয়াণ হয় । এরপরই নতুন পুরোহিতের খোঁজ করতে থাকি আমরা । তখনই আমরা ভাবি নন্দিনী ভৌমিক ও তাঁর দলকে দিয়ে পুজো করানো যায় কি না? সেই মতো আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি । প্রথমটায় তাঁরা আমাদের জানিয়েছিলেন যে, তাঁরা মূর্তিপুজাে করেন না, তাই তাঁরা আমাদের পুজো করতে পারবেন না ৷ তবে আমরা আমাদের যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি ৷ এরপর অবশেষে তারা এই পুজো করতে রাজী হন । ওনারা যেভাবে পুজো করেছিলেন তাতে আমরা আপ্লুত ও মুগ্ধ । আশা করি 66 পল্লি সমাজে একটা নজির তৈরি করতে পেরেছে । গত বছরে আমরা শুভমস্তকে আমাদের এই বছরের পুজো করার আবেদন জানাই । তারা রাজি হয়ে এই বছর আবারও আমাদের পুজো করছেন ।"