ETV Bharat / state

রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল কেসের চাপে নাভিশ্বাস বঙ্গ সিআইডির - পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ

দিনের পর দিন বাড়ছে কেস ডায়েরির সংখ্যা । দিনের পর দিন তদন্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে । কিন্তু লোকসংখ্যা কোথায় ? দক্ষ অফিসারই বা কোথায় ? একাধিক প্রশ্নে এই মুহূর্তে জেরবার ভবানী ভবনের অন্দরমহল ।

West Bengal CID
ছবি
author img

By

Published : Jul 17, 2021, 7:07 PM IST

কলকাতা, 17 জুলাই : প্রায় নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের । এমনি অনেক তদন্ত তো আছেই । তার উপর আবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই আসছে একের পর এক রাজনৈতিক সংবেদনশীল অভিযোগ । এই বিষয়ে সংবেদনশীল কেসগুলি প্রথম থেকেই থানাস্তর থেকে সোজা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিআইডির সদর দফতর ভবানী ভবনে । তা সে নির্বাচনে কোচবিহারের শীতলকুচিতে গুলিকাণ্ড হোক, বা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রাক্তন দেহরক্ষীর রহস্যময় মৃত্যু হোক ।

কিন্তু ডিপার্টমেন্টে কর্মীর অভাবে মুশকিলে পড়েছে সিআইডি ৷ বিশেষত জটিল তদন্তের কাজে অভিজ্ঞ সাব-ইন্সপেক্টর এবং ইন্সপেক্টর স্তরের আধিকারিকদের বেশ অভাব । এই চাপের কারণে অনেক সাব-ইন্সপেক্টর এবং ইন্সপেক্টর স্তরের আধিকারিকই সিআইডিতে পোস্টিং নিতে অনিচ্ছুক । একজন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার সিআইডির আধিকারিক রেগে বলেই বসলেন যে, তাঁর অন্য কোনও ব্যাচমেট আর সিআইডি তে আসতে চাইছেন না ।

রাজ্যের এক অ্যাডিশনাল এসপি পদমর্যাদার অফিসার বলেন, "এমনিতেই সিআইডিতে উর্দির গ্লামারটা থাকে না । তাঁর উপর আবার রাজনৈতিক সংবেদনশীল কেসে কাজ করার আলাদা মানসিক চাপ । তাই সব মিলিয়েই সিআইডিতে কাজ করার কোনও আকর্ষণই থাকছে না সাব ইন্সপেক্টর বা ইন্সপেক্টর লেভেলের অফিসারদের ৷"

কারণ একটাই । দিনের পর দিন বাড়ছে কেস ডায়েরি সংখ্যা । দিনের পর দিন তদন্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে । কিন্তু লোকসংখ্যা কোথায় ? দক্ষ অফিসারই বা কোথায় ? একাধিক প্রশ্নে এই মুহূর্তে জেরবার ভবানী ভবনের অন্দরমহল ।

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর একাধিক তদন্তভার গ্রহণ করেছে রাজ্য পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট, সিআইডি । পূর্ব মেদিনীপুরের বীরপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর প্রচারের সময় আক্রমণ, কোচবিহারের শীতলকুচিতে গুলি কাণ্ড, মঙ্গলকোটে তৃণমূল নেতা খুন এবং শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর খুনের মামলা ।

এসবেরই তদন্তভার নতুন করে এসে পড়েছে সিআইডির হাতে । তবে বর্তমানে এইসব কেস ডায়েরিগুলি সঠিক কী অবস্থা রয়েছে, কতদূর এগিয়েছে তদন্ত প্রক্রিয়া, তা নিয়ে সিআইডির কোনও বড় কর্তাই মুখ খুলতে চাননি ।

রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনের ওপর বোমা মারার ঘটনায় নিমতিতা বিস্ফোরণ কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত সিআইডি তদন্ত শেষ করতে পারেনি । সেই ঘটনায় বাংলাদেশের জঙ্গি যোগ দেখা দিলেও কর্মদক্ষতা এবং লোকবলের অভাবে সেই তদন্ত থমকে রয়েছে ।

2021-এর বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা শীতলকুচিতে গুলি চালানোর ঘটনায় কোচবিহার জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপারকে একাধিকবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও তদন্তে সেরকম কোনও অগ্রগতি করতে পারেননি সিআইডির গোয়েন্দারা । ফরেন্সিক দলের ব্যালেস্টিক রিপোর্ট পাওয়ার পরও থমকে তদন্ত পক্রিয়া ।

নির্বাচনের প্রচারের সময় পূর্ব মেদিনীপুরে বীরপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর হামলার ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছিল সিআইডি । কিন্তু সেই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষার ও দু'একবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়া তদন্ত এগোয়নি ।

এর মধ্যে নবতম সংযোজন হল, শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তভার । এদিনও কাঁথিতে গিয়ে তদন্ত চালান গোয়েন্দারা । নিরাপত্তা রক্ষীদের থাকার জায়গায় গিয়ে ভিডিওগ্রাফিও করেন তাঁরা । এই ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার এখনও করতে পারেনি তদন্তকারীরা ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির সদর দফতরের এক ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিকের কথায়, "কে জয়রমনকে ডিআইজি (সিআইডি) পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর সেই ভাবে দক্ষ আধিকারিক আর ফেরেননি সিআইডিতে ।’’ পাশাপাশি উচুতলার আধিকারিকদের সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন ইনস্পেকটর ব়্যাঙ্কের পুলিশ আধিকারিক বলেন, "সিআইডির উচুতলার আধিকারিকদের সঠিক পরামর্শের অভাবে কাজ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের ৷"

তিনি আরও বলেন, "একজন ইনস্পেকটরের অধীনে রয়েছে গড়ে পাঁচ থেকে ছ'টি করে তদন্তভার । তাছাড়াও ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করার লোক খুব অভাব রয়েছেন সিআইডিতে ৷"

সিআইডি সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে প্রায় 300-র বেশি কেসের তদন্ত প্রক্রিয়া থমকে আছে ।

কলকাতা, 17 জুলাই : প্রায় নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের । এমনি অনেক তদন্ত তো আছেই । তার উপর আবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই আসছে একের পর এক রাজনৈতিক সংবেদনশীল অভিযোগ । এই বিষয়ে সংবেদনশীল কেসগুলি প্রথম থেকেই থানাস্তর থেকে সোজা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিআইডির সদর দফতর ভবানী ভবনে । তা সে নির্বাচনে কোচবিহারের শীতলকুচিতে গুলিকাণ্ড হোক, বা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রাক্তন দেহরক্ষীর রহস্যময় মৃত্যু হোক ।

কিন্তু ডিপার্টমেন্টে কর্মীর অভাবে মুশকিলে পড়েছে সিআইডি ৷ বিশেষত জটিল তদন্তের কাজে অভিজ্ঞ সাব-ইন্সপেক্টর এবং ইন্সপেক্টর স্তরের আধিকারিকদের বেশ অভাব । এই চাপের কারণে অনেক সাব-ইন্সপেক্টর এবং ইন্সপেক্টর স্তরের আধিকারিকই সিআইডিতে পোস্টিং নিতে অনিচ্ছুক । একজন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার সিআইডির আধিকারিক রেগে বলেই বসলেন যে, তাঁর অন্য কোনও ব্যাচমেট আর সিআইডি তে আসতে চাইছেন না ।

রাজ্যের এক অ্যাডিশনাল এসপি পদমর্যাদার অফিসার বলেন, "এমনিতেই সিআইডিতে উর্দির গ্লামারটা থাকে না । তাঁর উপর আবার রাজনৈতিক সংবেদনশীল কেসে কাজ করার আলাদা মানসিক চাপ । তাই সব মিলিয়েই সিআইডিতে কাজ করার কোনও আকর্ষণই থাকছে না সাব ইন্সপেক্টর বা ইন্সপেক্টর লেভেলের অফিসারদের ৷"

কারণ একটাই । দিনের পর দিন বাড়ছে কেস ডায়েরি সংখ্যা । দিনের পর দিন তদন্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে । কিন্তু লোকসংখ্যা কোথায় ? দক্ষ অফিসারই বা কোথায় ? একাধিক প্রশ্নে এই মুহূর্তে জেরবার ভবানী ভবনের অন্দরমহল ।

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর একাধিক তদন্তভার গ্রহণ করেছে রাজ্য পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট, সিআইডি । পূর্ব মেদিনীপুরের বীরপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর প্রচারের সময় আক্রমণ, কোচবিহারের শীতলকুচিতে গুলি কাণ্ড, মঙ্গলকোটে তৃণমূল নেতা খুন এবং শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর খুনের মামলা ।

এসবেরই তদন্তভার নতুন করে এসে পড়েছে সিআইডির হাতে । তবে বর্তমানে এইসব কেস ডায়েরিগুলি সঠিক কী অবস্থা রয়েছে, কতদূর এগিয়েছে তদন্ত প্রক্রিয়া, তা নিয়ে সিআইডির কোনও বড় কর্তাই মুখ খুলতে চাননি ।

রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনের ওপর বোমা মারার ঘটনায় নিমতিতা বিস্ফোরণ কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত সিআইডি তদন্ত শেষ করতে পারেনি । সেই ঘটনায় বাংলাদেশের জঙ্গি যোগ দেখা দিলেও কর্মদক্ষতা এবং লোকবলের অভাবে সেই তদন্ত থমকে রয়েছে ।

2021-এর বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা শীতলকুচিতে গুলি চালানোর ঘটনায় কোচবিহার জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপারকে একাধিকবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও তদন্তে সেরকম কোনও অগ্রগতি করতে পারেননি সিআইডির গোয়েন্দারা । ফরেন্সিক দলের ব্যালেস্টিক রিপোর্ট পাওয়ার পরও থমকে তদন্ত পক্রিয়া ।

নির্বাচনের প্রচারের সময় পূর্ব মেদিনীপুরে বীরপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর হামলার ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছিল সিআইডি । কিন্তু সেই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষার ও দু'একবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়া তদন্ত এগোয়নি ।

এর মধ্যে নবতম সংযোজন হল, শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তভার । এদিনও কাঁথিতে গিয়ে তদন্ত চালান গোয়েন্দারা । নিরাপত্তা রক্ষীদের থাকার জায়গায় গিয়ে ভিডিওগ্রাফিও করেন তাঁরা । এই ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার এখনও করতে পারেনি তদন্তকারীরা ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির সদর দফতরের এক ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিকের কথায়, "কে জয়রমনকে ডিআইজি (সিআইডি) পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর সেই ভাবে দক্ষ আধিকারিক আর ফেরেননি সিআইডিতে ।’’ পাশাপাশি উচুতলার আধিকারিকদের সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন ইনস্পেকটর ব়্যাঙ্কের পুলিশ আধিকারিক বলেন, "সিআইডির উচুতলার আধিকারিকদের সঠিক পরামর্শের অভাবে কাজ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের ৷"

তিনি আরও বলেন, "একজন ইনস্পেকটরের অধীনে রয়েছে গড়ে পাঁচ থেকে ছ'টি করে তদন্তভার । তাছাড়াও ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করার লোক খুব অভাব রয়েছেন সিআইডিতে ৷"

সিআইডি সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে প্রায় 300-র বেশি কেসের তদন্ত প্রক্রিয়া থমকে আছে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.