ETV Bharat / state

সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়ে UGC-এর সুপারিশের অপেক্ষায় রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় - Universities waiting for recommendation of UGC

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরও কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়ে কোনও চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে চায় না ৷ তারা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গঠিত সাত সদস্যের কমিটির সুপারিশের অপেক্ষায় রয়েছে । UGC-র সুপারিশ ও রাজ্য সরকারের গাইডলাইন এলে সেগুলি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে চায় তারা ।

Kolkata
কলকাতা
author img

By

Published : Apr 20, 2020, 7:48 PM IST

কলকাতা , 20 এপ্রিল : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্নাতক , স্নাতকোত্তরের কোর্সের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা হবে । বাকি সিমেস্টারগুলি একটি করে এগিয়ে যাবে । মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় । তাঁরা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গঠিত সাত সদস্যের কমিটির সুপারিশের অপেক্ষায় রয়েছেন । UGC-র সুপারিশ ও রাজ্য সরকারের গাইডলাইন এলে সেগুলি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে চান তাঁরা ।


কোরোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে 16 মার্চ থেকে বন্ধ রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । শেষ ঘোষণা অনুযায়ী , আগামী 10 জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি । প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন পঠন-পাঠন ব্যহত হচ্ছে তেমনি পরীক্ষা ব্যবস্থার উপরও প্রভাব পড়ছে । বর্তমানে , প্রায় সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেমের (CBCS) অধীনে সিমেস্টার ব্যবস্থাও রয়েছে । স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স মিলিয়ে মে-জুন মাসে দ্বিতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও অষ্টম সিমেস্টারের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু, COVID-19 মোকাবিলায় লকডাউনের কারণে এক একটি সিমেস্টারের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাস নেওয়া ও পাঠ্যক্রম সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি । কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস বা অনলাইনের মাধ্যমে স্টাডি মেটেরিয়াল পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও তা 100 শতাংশ পড়ুয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয় ।

এই পরিস্থিতিতে কীভাবে পঠন-পাঠন চলবে , পরীক্ষা কীভাবে হবে , এই সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে 14 এপ্রিল রাজ্যের 12টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । সেখানে উপাচার্যদের কাছে প্রস্তাব চান তিনি । তারপরের দিন 15 এপ্রিল সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন । ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাঁদের প্রস্তাব ও মতামত উচ্চশিক্ষা দপ্তরের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে , তারা নীতি নির্ধারণকারী সংস্থা UGC ও AICTE-র পরামর্শ ও রাজ্য সরকারের নির্দেশিকার জন্য অপেক্ষা করছে । তাদের কাছ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ বা পরামর্শ পাওয়ার পর পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । যাদবপুরের মতোই রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা করতে চায় এখন ।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি বলেন , "আমার বক্তব্য , UGC এবং রাজ্য সরকার যেভাবে স্থির করে আমাদের জানাবে আমরা সেটা বিবেচনা করে দেখব । এখনও এই কোরোনা ভাইরাস নিয়ে পরিস্থিতির স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত মেলেনি । সুতরাং, UGC ও এবং রাজ্য সরকার আমাদের যখন পরামর্শ বা নির্দেশিকা দেবে আমরা তখন সেগুলি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব ।"

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এখন একটা সমাধানের রাস্তা খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে । UGC-ও কিছু গাইডলাইন দেবে । সেগুলি না দেখে আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারব না । UGC, রাজ্য সরকার একসঙ্গে মিলেই হয়তো একটা কাঠামো তৈরি করবে । আমরা সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি ।"

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার বলেন , "আমরা দেখছি, পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি । ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোর জন্য, সরকারের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । এটা তো গোটা রাজ্যের বিষয় । তাই রাজ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে , ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে যা যা করা দরকার তাই করা হবে ।"

একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য সিমেস্টারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তৈরি কমিটির সুপারিশ ও রাজ্য সরকারের নির্দেশিকার জন্য অপেক্ষা করলেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা নিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরি বলেন , "আমরা প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছি । আমাদের তো আলাদা করে কিছু হবে না । আমরা বলেছি , সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা করে মোটামুটিভাবে একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিত যে , পরীক্ষাটা কী করে হবে । আমাদের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা খানিকটা হয়ে আছে । পরিস্থিতি ঠিক হলে বাকিটা হবে । দশ দিন মতো পেলে আমরা সেটা করে ফেলব । বাকিগুলির ক্ষেত্রে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা সিদ্ধান্ত তো হবে । আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করব । প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় ভাবনাচিন্তা করছে । UGC, রাজ্য সরকার মিলে নিশ্চয়ই একটা সিদ্ধান্ত নেবে । সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি ।"

রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তথা মৌলানা আবুল কালাম আজ়াদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির (MAKAUT) উপাচার্য সৈকত মৈত্র বলেন , "আমরা ফাইনাল সিমেস্টারের পরীক্ষাটা সময়মতো করানোর চেষ্টা করছি । সেটার জন্য সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করছি । ফাইনালের তো চাকরির বিষয় রয়েছে । অন্য সিমেস্টারগুলির ক্ষেত্রে আমাদের একটু ধীরগতিতে চলতে হবে । কারণ, আমাদের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার বা গাইডলাইন কী বের হচ্ছে তা দেখে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে । উচ্চশিক্ষা দপ্তর, UGC, AICTE-র কী গাইডলাইন বের হচ্ছে সেগুলি দেখে নিয়ে আমরা অন্যান্য সিমেস্টার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব ।"

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ও এখনই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিরোধিতা করছেন । তাঁদের বক্তব্য, কোরোনা ভাইরাস নিয়ে তৈরি এই পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত । এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই । সেক্ষেত্রে সিমেস্টার ক্লাস ও সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এত তাড়াহুড়ো কেন করা হচ্ছে ? তাঁদের মতে, শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্যের যুগ্ম তালিকায় রয়েছে । উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণকারী সংস্থা যেমন , বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) , অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (AICTE) , ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনের (NCTE) গাইডলাইন , পরামর্শ মেনে চলে রাজ্য । এই পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে চলবে তার জন্য একটি সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে UGC । সেই কমিটি এখনও নির্দেশিকা বা পরামর্শ দেয়নি । তারা কোনও অ্যাডভাইজ়ারি দেওয়ার পর তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক । এই মুহূর্তে পরীক্ষা ছাড়া পড়ুয়াদের পরের সেমেস্টারে উত্তীর্ণ করে দিলে পড়ুয়াদের ক্ষতি হবে , আবার দু'টো সিমেস্টারের পরীক্ষা একসঙ্গে নিতে গেলেও পড়ুয়াদের উপর সাংঘাতিক চাপ সৃষ্টি হবে । প্রয়োজনে সিমেস্টার পিছোতে হবে বলে মত উচ্চশিক্ষা মহলের অনেকেরই । তাঁদের বক্তব্য, দরকার হলে সিমেস্টার পিছোতে হবে । তিন মাস, চার মাস যতটা প্রয়োজন পিছোতে হবে । বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পিছানো হচ্ছে । তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কেন সম্ভব নয় ? এখন এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে যদি কয়েকমাস পিছোতে হয় সেটা পরে পরিস্থিতির বিচারে ঠিক করতে হবে । এখন এত তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই ।

কলকাতা , 20 এপ্রিল : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্নাতক , স্নাতকোত্তরের কোর্সের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা হবে । বাকি সিমেস্টারগুলি একটি করে এগিয়ে যাবে । মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় । তাঁরা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গঠিত সাত সদস্যের কমিটির সুপারিশের অপেক্ষায় রয়েছেন । UGC-র সুপারিশ ও রাজ্য সরকারের গাইডলাইন এলে সেগুলি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে চান তাঁরা ।


কোরোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে 16 মার্চ থেকে বন্ধ রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । শেষ ঘোষণা অনুযায়ী , আগামী 10 জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি । প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন পঠন-পাঠন ব্যহত হচ্ছে তেমনি পরীক্ষা ব্যবস্থার উপরও প্রভাব পড়ছে । বর্তমানে , প্রায় সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেমের (CBCS) অধীনে সিমেস্টার ব্যবস্থাও রয়েছে । স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স মিলিয়ে মে-জুন মাসে দ্বিতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও অষ্টম সিমেস্টারের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু, COVID-19 মোকাবিলায় লকডাউনের কারণে এক একটি সিমেস্টারের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাস নেওয়া ও পাঠ্যক্রম সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি । কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস বা অনলাইনের মাধ্যমে স্টাডি মেটেরিয়াল পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও তা 100 শতাংশ পড়ুয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয় ।

এই পরিস্থিতিতে কীভাবে পঠন-পাঠন চলবে , পরীক্ষা কীভাবে হবে , এই সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে 14 এপ্রিল রাজ্যের 12টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । সেখানে উপাচার্যদের কাছে প্রস্তাব চান তিনি । তারপরের দিন 15 এপ্রিল সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন । ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাঁদের প্রস্তাব ও মতামত উচ্চশিক্ষা দপ্তরের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে , তারা নীতি নির্ধারণকারী সংস্থা UGC ও AICTE-র পরামর্শ ও রাজ্য সরকারের নির্দেশিকার জন্য অপেক্ষা করছে । তাদের কাছ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ বা পরামর্শ পাওয়ার পর পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । যাদবপুরের মতোই রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষা করতে চায় এখন ।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি বলেন , "আমার বক্তব্য , UGC এবং রাজ্য সরকার যেভাবে স্থির করে আমাদের জানাবে আমরা সেটা বিবেচনা করে দেখব । এখনও এই কোরোনা ভাইরাস নিয়ে পরিস্থিতির স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত মেলেনি । সুতরাং, UGC ও এবং রাজ্য সরকার আমাদের যখন পরামর্শ বা নির্দেশিকা দেবে আমরা তখন সেগুলি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব ।"

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এখন একটা সমাধানের রাস্তা খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে । UGC-ও কিছু গাইডলাইন দেবে । সেগুলি না দেখে আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারব না । UGC, রাজ্য সরকার একসঙ্গে মিলেই হয়তো একটা কাঠামো তৈরি করবে । আমরা সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি ।"

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার বলেন , "আমরা দেখছি, পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি । ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোর জন্য, সরকারের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । এটা তো গোটা রাজ্যের বিষয় । তাই রাজ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে , ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে যা যা করা দরকার তাই করা হবে ।"

একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য সিমেস্টারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তৈরি কমিটির সুপারিশ ও রাজ্য সরকারের নির্দেশিকার জন্য অপেক্ষা করলেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা নিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরি বলেন , "আমরা প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছি । আমাদের তো আলাদা করে কিছু হবে না । আমরা বলেছি , সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা করে মোটামুটিভাবে একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিত যে , পরীক্ষাটা কী করে হবে । আমাদের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা খানিকটা হয়ে আছে । পরিস্থিতি ঠিক হলে বাকিটা হবে । দশ দিন মতো পেলে আমরা সেটা করে ফেলব । বাকিগুলির ক্ষেত্রে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা সিদ্ধান্ত তো হবে । আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করব । প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় ভাবনাচিন্তা করছে । UGC, রাজ্য সরকার মিলে নিশ্চয়ই একটা সিদ্ধান্ত নেবে । সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি ।"

রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তথা মৌলানা আবুল কালাম আজ়াদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির (MAKAUT) উপাচার্য সৈকত মৈত্র বলেন , "আমরা ফাইনাল সিমেস্টারের পরীক্ষাটা সময়মতো করানোর চেষ্টা করছি । সেটার জন্য সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করছি । ফাইনালের তো চাকরির বিষয় রয়েছে । অন্য সিমেস্টারগুলির ক্ষেত্রে আমাদের একটু ধীরগতিতে চলতে হবে । কারণ, আমাদের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার বা গাইডলাইন কী বের হচ্ছে তা দেখে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে । উচ্চশিক্ষা দপ্তর, UGC, AICTE-র কী গাইডলাইন বের হচ্ছে সেগুলি দেখে নিয়ে আমরা অন্যান্য সিমেস্টার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব ।"

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ও এখনই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিরোধিতা করছেন । তাঁদের বক্তব্য, কোরোনা ভাইরাস নিয়ে তৈরি এই পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত । এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই । সেক্ষেত্রে সিমেস্টার ক্লাস ও সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এত তাড়াহুড়ো কেন করা হচ্ছে ? তাঁদের মতে, শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্যের যুগ্ম তালিকায় রয়েছে । উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণকারী সংস্থা যেমন , বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) , অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (AICTE) , ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনের (NCTE) গাইডলাইন , পরামর্শ মেনে চলে রাজ্য । এই পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে চলবে তার জন্য একটি সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে UGC । সেই কমিটি এখনও নির্দেশিকা বা পরামর্শ দেয়নি । তারা কোনও অ্যাডভাইজ়ারি দেওয়ার পর তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক । এই মুহূর্তে পরীক্ষা ছাড়া পড়ুয়াদের পরের সেমেস্টারে উত্তীর্ণ করে দিলে পড়ুয়াদের ক্ষতি হবে , আবার দু'টো সিমেস্টারের পরীক্ষা একসঙ্গে নিতে গেলেও পড়ুয়াদের উপর সাংঘাতিক চাপ সৃষ্টি হবে । প্রয়োজনে সিমেস্টার পিছোতে হবে বলে মত উচ্চশিক্ষা মহলের অনেকেরই । তাঁদের বক্তব্য, দরকার হলে সিমেস্টার পিছোতে হবে । তিন মাস, চার মাস যতটা প্রয়োজন পিছোতে হবে । বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পিছানো হচ্ছে । তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কেন সম্ভব নয় ? এখন এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে যদি কয়েকমাস পিছোতে হয় সেটা পরে পরিস্থিতির বিচারে ঠিক করতে হবে । এখন এত তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.