কলকাতা, 12 জানুয়ারি: রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বর্তমান বিধায়ক জাকির হোসেনের (Jakir Hossain) বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় শুরু রাজনৈতিক তরজা ৷ সূত্রের দাবি, অভিযান চালিয়ে শুধুমাত্র বিধায়কের বাড়ি থেকেই নগদ 11 কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আয়কর বিভাগ (IT Raid) ! এই ঘটনায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেও জাকির প্রশ্নে তেমন উদ্বিগ্ন নয় তৃণমূলশিবির (TMC) ! বরং তাদের পক্ষ থেকে গোটা ঘটনার উপর নজর রাখা হয়েছে ৷ দলের বক্তব্য, জাকির বড় ব্যবসায়ী ৷ তাই তাঁর যে অগাধ টাকা থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক ৷ তবে, এত নগদ উদ্ধারের কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে জাকিরকেই ৷ দল তার কোনও দায় নেবে না ৷
এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অত্যন্ত সাবধানী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন ৷ তিনি বলেন, "এই তল্লাশিটা যদি বিজেপি নেতাদের ঘরে ঘরে হয়, তাহলে এর থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা উদ্ধার হবে ! যাঁর কথা বলা হচ্ছে, তিনি একজন ব্যবসায়ী ৷ তাঁর অনেকগুলি ব্যবসা রয়েছে ৷ এই টাকা উদ্ধার নিয়ে কিছু বলব না ৷ তবে এই টাকার উপর আয়কর মেটানো হয়েছে কিনা, সেটা দেখতে হবে ৷ এই টাকা অফিসিয়ালি হোয়াইট মানি কিনা, সেটাও দেখার প্রয়োজন রয়েছে ৷ হঠাৎ করে আম্বানি বা আদানির বাড়িতে রেইড করলেও অনেক টাকা পাওয়া যাবে ৷ কিন্তু সেটা আয় বহির্ভূত কিনা অথবা আয়কর বিভাগের নথিভুক্ত কিনা, সেটাই দেখার বিষয় ৷"
এই টাকা উদ্ধার নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও ৷ তিনি বলেন, "জাকির একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ৷ তিনি যে ব্যবসা করেন, তাতে বহুলাংশে নগদ টাকার লেনদেন হয় ৷ দেশে এমন অনেক ব্যবসা রয়েছে, যেখানে সবটাই নগদ টাকার উপর লেনদেন চলে ৷ এর অর্থ এই নয় যে সেটা কালো টাকা ৷ আপনি যদি মেটিয়াবুরুজে যান, সেখানেও দেখবেন নগদেই ব্যবসা হয় ৷ এক্ষেত্রে আমি বলব, তিনি নিশ্চয়ই উদ্ধার হওয়া টাকার হিসাব দেবেন ৷ যদি দেখা যায়, এই অর্থ নিয়ম বহির্ভূত, তাহলে আইন আইনের পথেই চলবে ৷ আর যদি নিয়মগত টাকা থাকে, তাও প্রকাশ্যে আসবে ৷"
আরও পড়ুন: প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের বাড়ি থেকে উদ্ধার 11 কোটি !
একইসঙ্গে, আয়কর হানা প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন রাজ্যের এই বর্ষীয়ান মন্ত্রী ৷ শোভনদেব বলেন, "গোটা দেশে এই মুহূর্তে নির্বাচনকেন্দ্রিক একটা অ্য়াকশন চলছে ! বিশেষ করে আমাদের রাজ্যে ৷ তবুও আমি মনে করি, যাঁরা ব্যবসা করেন, ব্যবসা সংক্রান্ত সমস্ত টাকার হিসাব তাঁদের রাখা উচিত ৷" এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও ৷ তিনি বলেন, "আমি যতদূর জানি, জাকিরের বড় ব্যবসা রয়েছে ৷ এই টাকা কোথা থেকে এল, কেন উদ্ধার হল, সেই বিষয়ে তো আমি কিছু বলতে পারব না ৷ তাঁকেই আয়কর বিভাগের কাছে এর জবাবদিহি করতে হবে ৷"
এই ঘটনায় সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় আইন আইনের পথেই চলবে। জাকির হোসেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক শিল্পে তার ব্যবসা রয়েছে। তবে যদি কোন একটা জায়গা থেকে টাকা উদ্ধার হয়, তাহলে একজন ব্যবসায়ী যে টাকা রাখতে পারবেন না এই কথা কে বলল ! উনার ব্যবসায় যে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে শ্রমিকেরা কাজ করে তাদের নগদে বেতন দিতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদের বেতন দেওয়ার জন্য যদি টাকা রাখা হয় এবং তা যদি আয়করের ভাষায় ক্যাশ ইন হ্যান্ডের আওতায় পরে তবে তা দোষের নয়।
এদিন তিনি এই প্রশ্নও তুলেছেন, আয়কর রেট হতেই পারে। এতে শাসক দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু বলার নেই। যদি ওই টাকা অবৈধ বলে মনে হয় তাহলে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আয়কর রেট নিয়ে যেভাবে প্রচার চলছে তা ঠিক হচ্ছে না। কয়েকদিন আগে জাকির হোসেনকে খুনের চেষ্টা হয়েছিল। তাই নিয়ে এনআইএ তদন্ত হয়েছে, কেন দোষীদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া গেল না। এক্ষেত্রে গতিপ্রকৃতি যেদিকে চলছে তাতে চরিত্রে কালি ছেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।