কলকাতা, 3 অক্টোবর : কোরোনা ভাইরাসের এই প্রতিকূল সময়ে, দুগ্ধজাত সামগ্রী কম মিলছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের । অথচ দুগ্ধজাত সামগ্রীর ব্যাপক উৎপাদন বলে দাবি করেছেন দুগ্ধ সমবায়ের চেয়ারম্যান । গত ছয় মাসে প্রতিদিন দেড় লাখ লিটার দুধের উৎপাদন হয়েছে বলে দাবি করেন রাজ্য সরকারের দুগ্ধ সমবায় কনফেডারেশনের চেয়ারম্যান পরশ দত্ত । লকডাউনের সময় দুধ এসেছে সেন্ট্রাল ডেয়ারি, ভাগীরথী সহ রাজ্যের ছোটো ডেয়ারিগুলি থেকে । বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকা থেকে দুধ নিয়ে এসে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে । অন্যান্য সামগ্রীও তৈরি হয়েছে দুধ থেকে । যদিও লকডাউনে রেস্তরাঁ এবং হোটেল বন্ধ থাকায় দুধ এবং ঘি-এর চাহিদা কমেছে বলে জানিয়েছেন দুগ্ধ সমবায় কনফেডারেশনের চেয়ারম্যান পরশ দত্ত ।
প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সদ্য কোরোনা রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তিনি দপ্তরের উৎপাদন সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলতে না চাইলেও জানিয়েছেন, আপাতত দুধের জোগান রয়েছে । বাজারের চাহিদা মতো জোগান তাঁরা দিতে পারছেন । হরিণঘাটা সহ বিভিন্ন সমবায় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধের উৎপাদন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান পরশ দত্ত। তিনি বলেন," লকডাউনের সময়ে, দুধ ছাড়াও দুগ্ধজাত সামগ্রীর উৎপাদন ভালো পরিমাণে হয়েছে । প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ লিটার দুধের উৎপাদন হয়েছে। 30 থেকে 40 হাজার লিটার ঘি তৈরি করা হয়েছে সরকারি সমবায়গুলি থেকে । যদিও রেস্তরাঁ, হোটেল বন্ধ থাকায় ঘিয়ের চাহিদা কমেছে । তবে ছোটো দোকানগুলিতে চাহিদা রয়েছে ।" চাষিদের থেকে দুধ নিয়ে বাজারে চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন।
পরশ দত্ত জানিয়েছেন, চাষিদের কাছ থেকে দুধ নিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। তার পরে সেখান থেকে প্যাকেটজাত দুধ, পনির এবং ঘি তৈরি করা হয়। দক্ষিণবঙ্গে দুধ উৎপাদনের খরচ কম। উত্তরবঙ্গের দুধ উৎপাদনের খরচ বেশি। 1 লিটার দুধ দক্ষিণবঙ্গে বিক্রি করে প্রায় পাঁচ টাকা সরকারের লাভ হয়। চাষিরাও টাকা পায়। দুধের চাহিদা কমলেও চাষিদের কাছ থেকে কম দামে দুধ নেওয়া হয় না। দুধ দেওয়ার 10 দিনের মধ্যে চাষিদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হয়। বাঁকুড়া এবং বহরমপুর ঘি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। দক্ষিণ 24 পরগনার সুন্দরবনের সুন্দরীনি ঘি'র চাহিদা বাজারে ভালোই রয়েছে। লকডাউনেও লাভের মুখ দেখেছে সরকারের দুগ্ধ সমবায় সংস্থাগুলি । ছোটো সমবায়গুলির লাভ বেশি। মাদার ডেয়ারি আসলে সাদা হাতি পোষার সমান সে কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান পরশ দত্ত ।
গত কয়েক মাসে রাজ্য সরকার গড়ে 4 থেকে 5 কোটি টাকা আয় করেছে দুধ এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী বিক্রি করে। ভালো দুধ বাজারে 40 টাকা প্রতি লিটারে বিক্রি করা হয়। সরকারের লাভ থাকে 8 টাকা থেকে 10 টাকা । 30 টাকা থেকে 32 টাকা খরচ হয় এক লিটার দুধ প্যাকেটজাত অবস্থায় বাজারে বিক্রি করতে ।
যদিও ক্রেতারা মোটেই খুশি নয় রাজ্য সরকারের দুধের সামগ্রী নিয়ে। আশুতোষ রায় নামে এক ক্রেতা জানান, "সকাল ন'টার পরে সরকারি দুধের ডিপোয় গেলে দুধ পাওয়া যায় না। দুধ থেকে তৈরি মাখন, ঘি, চিজ়, পনির সরকারি দুধের ডিপোয় অমিল ।" আরও দুই ক্রেতা তাঁদের একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। রাজ্য সরকারের দুধের উৎপাদন ভালো হলে, তার প্রভাব পড়ত বাজারে। তারাও পর্যাপ্ত দুধের সামগ্রী পান না বলে অভিযোগ করেছেন ।
গ্রামীণ চাষিদের দুধ সরকারের কাছে বিক্রি করার জন্য সরকারও বেশ কিছু সুবিধা দেয় তাদের। যেমন, সস্তায় পশু চিকিৎসা, অর্থাৎ ভেটেনারি সার্ভিস, সস্তায় পশুখাদ্য সহ বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে গ্রামের গোপালকদের। রাজ্য সরকার এখনও সেই সুবিধা পৌঁছে দেয় । মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে দুধের উৎপাদন সন্তোষজনক। বাঁকুড়া এবং হাওড়াও মোটামুটি ভালো জায়গায় রয়েছে দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে। দুধ উৎপাদনে নদিয়ার অবস্থা ভালো নয়।