কলকাতা, 7 সেপ্টেম্বর: রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত কিছুতেই থামছে না। বেশ কয়েকদিন পর দিল্লি ঘুরে বৃহস্পতিবার কলকাতা ফিরেই ফের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিন ভিডিয়ো বার্তায় শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন রাজ্যপাল ৷ পাঁচ মিনিটের ভিডিয়োতে রাজ্য সরকারকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ পাশাপাশি রাজ্যপালের দাবি, তাঁর নিয়োগ করা উপাচর্যদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। আর তাই ভয় পেয়ে 5 উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন।
ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ্যে আসার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল। সেখানে সাংবাদিকরা তাঁর থেকে জানতে চান, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজ্যপালের কথা শুনে পরিচালিত হলে তিনি আর্থিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবেন। পাশপাশি, রাজ্যপাল যদি এভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে থাকেন তাহলে তিনি রাজভবনের বাইরে ধরনা দেবেন। এ ব্যাপারে তাঁর কি প্রতিক্রিয়া? প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রীকে সাংবিধানিক সহকর্মী অ্যাখ্যা দিয়ে রাজ্যপাল বলেন, "আমরা তাঁকে দুহাত তুলে রাজভবনের ভিতরে স্বাগত জানাচ্ছি।"
ভিডিয়ো বার্তায় তিনি বলেন, "আমি কিছু ভালো কাজ করতে বাংলায় এসেছি ৷ আমার মনে হয় বাংলার নতুন প্রজন্ম অন্যতম বড় সম্পদ ৷ আমাদের এই নতুন প্রজন্মের অনেকেই পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ এই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হিংসামুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত হওয়া দরকার ৷ আমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চান্সেলর ৷ দেশের মধ্যে বাংলার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরও উন্নত হোক এবং উজ্জ্বল হোক-এটাই আমার লক্ষ্য ৷ এখানে অনেক মেধাবি পড়ুয়া আছেন। গুণী অধ্যাপক আছেন ৷ তাঁদের পরিচালনা করতেন উপাচার্য প্রয়োজন ৷ বাংলার শিক্ষা দফতর উপাচার্য নিয়োগ করেছে ৷ সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত বড় বড় অক্ষরে অবৈধ বলেছে ৷"
তিনি আরও বলেন, "সেই সকল উপাচার্যদের পদত্যাগ করতে হয়েছে ৷ এখন কে হবেন ভিসি? এই অবস্থায় আমি চান্সেলর হিসাবে অন্তর্বতী উপাচার্য নিয়োগ করেছি ৷ শিক্ষ দফতর বলল, আমার সিদ্ধান্ত ভুল ৷ কিন্তু হাইকোর্ট বলল আমি ঠিক ৷"
এই প্রসঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, উপাচার্য পদে সরকার যাঁদেরকে চেয়েছিল তাঁদের কেউ দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন। কেউ আবার ছাত্রীদের হেনস্তা করেছেন। কেউ ব্যস্ত রাজনীতির খেলা খেলতে ৷ রাজ্যবাসীর কাছে রাজ্যপালের প্রশ্ন, "এখন ভাই-বোনেরা আপনারা বলুন, কী করে এঁদের আমি উপাচার্য পদে নিয়োদ করি !"
রাজ্যপাল যে সমস্ত উপাচার্যদের নিয়োগ করেছেন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পদত্যাগ করেছেন। এমনটা কেন হল তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, " এটা খুবই দুঃখজনক যে পাঁচ উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন ৷ তাঁরা আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা তাঁদের হুমকি দিয়েছে ৷ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা তাঁদের বাধ্য করেছেন পদত্যাগ করতে ৷" এই প্রসঙ্গেই আইএএস আধিকারিক থেকে শুরু করে শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর আরও এক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল
এরপরেই তাঁর বার্তায় উঠে আসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর ঘটনা ৷ তিনি বলেন, "আমি নেতাজি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দের শপথ নিয়ে বলছি, শেষ পর্যন্ত এই লড়াই লড়ব ৷ 10 কোটি বাংলার ভাই-বোনেরা আমার সঙ্গে আছেন ৷"