কলকাতা, 5 অগাস্ট : রাষ্ট্রপতির আদেশবলে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের 370 ধারা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে আজ রাজ্যসভায় জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ এই পদক্ষেপকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন অনেকে । এবিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডঃ রাজলক্ষ্মী বোস বলেন, "ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এককথাতে । তাতে কোনও সন্দেহই নেই । একটা দেশের মধ্যে দু'রকমের ধারা লাগু থাকবে সেটা হতে পারে না । এটা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল । আজকের সিদ্ধান্তে কিছু মানুষ হয়ত মনক্ষুণ্ণ, কেউ বলছে এটা অসাংবিধানিক পদক্ষেপ । তবে, বৃহত্তর দুই স্বার্থকে মাথায় রেখে এটা অবশ্যই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ৷ এবং দেশের অখণ্ডতার পক্ষে এটা একটা বিরাট সিদ্ধান্ত ।"
370-এর ইতিহাস উল্লেখ করে ডঃ রাজলক্ষ্মী বোস আরও বলেন, "1990 সালে জগমোহন যখন জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল হন তখন একাধিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল সেখানে । যা গোটা বিশ্বকে হকচকিয়ে দিয়েছিল । 370 ধারার জন্য কেন্দ্র সেভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেনি । আজ এই যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তাতে ওখানকার মানুষ অনেকটা উপকৃত হবে । কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উদ্দেশ্য তো ভারতের পক্ষে নয় । তাই সেক্ষেত্রেও এই ধারা প্রত্যাহার হওয়ায় অনেকটাই উপকৃত হবে ওখানকার যুব সমাজ । আর তার সঙ্গে বলতেই হয় একটা রাজ্য দেশেই রয়েছে কিন্তু সেখানে খুব বেশি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না । এর ফলে আমাদের দেশের সঙ্গেই কাশ্মীরের একটা অন্য সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে । তারা শুধুমাত্র এই বিশেষ সুবিধার জন্য নিজেদের দেশের থেকে আলাদা মনে করে । তাই বিভাজনের সম্পর্ক দেশের কোথাও থাকলে কখনওই সেই অংশে শান্তি বজায় থাকে না । যার জন্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানকার বাসিন্দারা ।"
35A ধারা 1954 সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । এই ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের আইনসভা স্থির করে দিতে পারে রাজ্যের "স্থায়ী বাসিন্দা" কারা হবে । তাদের আবার বিশেষ কিছু অধিকার দেওয়া হয় । যেমন -শুধু স্থায়ী বাসিন্দারাই ওই রাজ্যে সম্পত্তির মালিকানা, সরকারি চাকরি ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার পান । এমন কী রাজ্যের কোনও মহিলা যদি রাজ্যের বাইরের কাউকে বিয়ে করে তাহলে সে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে ৷ এবং তার উত্তরাধিকারীরাও সম্পত্তির অধিকার পাবে না । ফলে 370-এর সঙ্গে 35A ধারাও জড়িত । আজ সেই ধারাটিও জম্মু ও কাশ্মীর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে । সেপ্রসঙ্গে রাজলক্ষ্মীদেবী বলেন, "এটা প্রত্যাহার করায় আমাদের রাজ্য বা অন্য রাজ্যের মানুষের সংবিধানের উপর যেভাবে অধিকার রয়েছে সেভাবে কাশ্মীরেরও থাকবে ।"
এছাড়াও 370 ধারা প্রত্যাহারে কাশ্মীরের বাসিন্দারা কী সুবিধা পাবে সেটা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "কাশ্মীরেও হিন্দু, শিখ এই ধরনের সংখ্যালঘুরা আছে । এতদিন সেখানে তারা সেই ভাবে কোনও সুযোগ-সুবিধা পেত না । এবার তাঁরাও সেখানে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পাবে । 370 ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরিরা নিজেদের মতো সুবিধা পেত । তাদের একটা পতাকাও ছিল । এমন বিভাজনে আদতে উন্নয়নটা আটকে যায় । আমরা-তোমরা থাকবে না । একটাই তো দেশ । ওখানে ভারতীয় দণ্ডবিধিও তো মানা হত না । "
370 ধারা ও দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর ভূমিকা প্রসঙ্গে রাজলক্ষ্মীদেবী আরও বলেন, "370 ধারা যখন চালু হয় তখন পুরো বিষয়টি রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেওয়া হয় । তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি গিয়ে বলেছিলেন একটা দেশে এভাবে দু'রকম ধারা চলে না । কেউ সাধারণভাবে থাকছে কেউ বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত । কিন্তু তাঁরও তো মৃত্যু হয় । তবে এতদিন বাদে এই পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।"