কলকাতা, 6 মার্চ: পথ দুর্ঘটনা এড়াতে ও যাত্রী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকা অনুসারে সমস্ত বাণিজ্যিক চারচাকার গাড়িতে ভেহিকেল লোকেশন ট্র্যাকার ডিভাইস বা ভিএলটিডি (VLTD) এবং প্যানিক বাটন লাগানোর মেয়াদ আবারও বাড়ানো হল । নির্দেশিকায় বলা হয়েছে মে মাসের 31 তারিখের মধ্যে বসিয়ে নিতে হবে এই যন্ত্র । এর ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলল গাড়ির মালিকদের ।
এই ভিএলটিডি ও প্যানিক বাটন বসানোর কথা জানিয়ে গত বছর 14 নভেম্বর পরিবহন দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে । সেই নির্দেশিকা অনুসারে বলা হয়েছিল যে, 31 ডিসেম্বরের মধ্যে বসাতে হবে ট্র্যাকার এবং ইমারজেন্সি বাটন । তবে তারপর বারবার মালিকপক্ষের তরফে এত কম সময়ের মধ্যে এই যন্ত্র লাগাবার বিষয় আপত্তি ওঠে । শুধু তাই নয় অনেকে এই যন্ত্র লাগাতে গেলে বাজারে যন্ত্রের অভাবও দেখা দেয় । তারপর আবারও 31 মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয় সময়সীমা । তাই তখন নয়া নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছিল যে, যেই সংস্থাগুলি এই ট্রেকিং মেশিনটি তৈরি করবে পরিবহণ বিভাগের সঙ্গে তাদের তালিকাভুক্ত করার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি । পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সংস্থা ট্রেকিং মেশিন প্রস্তুত করে উঠতে পারেনি ৷ কেউ পারলেও তার অডিট ও ট্রায়াল অসম্পূর্ণ ছিল ।
তারপর 12টি ভেহিকেল লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেম (Vehicle Location Tracking System)বা ভিএলটিএস (VLTS) প্রস্তুতকারক সংস্থা তালিকাভুক্ত করা হয় । তবে এই তালিকাভুক্তকরণ নিয়েও বিস্তর আপত্তি ওঠে মালিকপক্ষের মধ্যে । সম্প্রতি পরিবহণ দফতর আবারও এই যন্ত্র প্রস্তুতকারক বেশ কিছু সংস্থাকে যন্ত্র সরবরাহ করার নির্দেশিকা জারি করেছে ৷ যে প্রক্রিয়াটি এখনও চলছে । আর এর মধ্যেই আবারও 31 মে পর্যন্ত বাড়ানো হল মেয়াদ । আপাতত যারা এই যন্ত্র বসিয়েছেন তাঁরা জানিয়েছেন যে প্রতিটি যন্ত্র তাঁদের 10 থেকে 16 হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করে লাগাতে হচ্ছে ।
এই বিষয়ে অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এই যে সময় বাড়ানো হল এটা কিছুটা হলেও স্বস্তির । তবে আমরা এখনও চাইছি যে, 31 মে-র পরবর্তী যেসব গাড়ি 1 জুন থেকে সিএফ করবে তাঁরা যদি একেবারে ভিএলটিএস লাগিয়ে নিয়ে সিএফ করতে পারত তাহলে সেটা অনেকটা সুবিধাজনক হত । ইতিমধ্যে আরও যে সংস্থাগুলিকে তালিকাভুক্ত করা হবে সেগুলি বাজারে যন্ত্র নিয়ে এলে হয়তো যন্ত্রের দামের ক্ষেত্রেও কিছুটা তারতম্য আসতে পারত । কারণ ইতিমধ্যেই যারা যন্ত্র লাগিয়েছে ছোট গাড়ি ক্ষেত্রে 12 হাজার আর বড় গাড়ির ক্ষেত্রে 16 থেকে 18 হাজার টাকা খরচ পড়েছে ।"
ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "আমাদের যে মূল দাবিটা ছিল সেটা হল যে, 31 মার্চের মধ্যে যত সংখ্যক গাড়ি আমাদের রয়েছে তত গাড়িতেই লাগানো সম্ভব নয় ৷ কারণ প্রতিটি গাড়িতে এগুলি লাগানোর ক্ষেত্রে সেগুলিকে তিন চার ঘণ্টা করে বসিয়ে দিতে হয় ৷ আর এর ফলে পুরো আমাদের একদিনের ব্যবসা মার যায় ৷ তাই আমরা কিছুটা সময় চেয়েছিলাম ৷ আর আজ সেই সময় আমরা পেয়েছি । তবে এই যে দু-মাসের সময়সীমা বাড়ানো হল, তার মধ্যেও এতগুলি গাড়িতে কীভাবে ভিএলটিডি লাগানো যাবে সেই বিষয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে । তবে এই বিষয় নিয়ে আমরা আবারও পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে বৈঠকে বসব ।" প্রসঙ্গত, 1988 সালে মোটর ভেহিকেল আইন অনুসারে 2018 সালের 1 এপ্রিল কেন্দ্র সরকারের তরফে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল ।
আরও পড়ুন : গাড়ির ধোঁয়া থেকে দূষণ রুখতে ভারত স্টেজ VI নিয়মাবলী আনছে কেন্দ্র