কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি : TB (টিউবার কিউলোসিস) অর্থাৎ যক্ষ্মা। সাধারণত ফুসফুসেই হয় এই রোগ। তবে হাড় বা স্পাইনাল কর্ডের যে কোনও অংশেও হতে পারে। শুধুমাত্র তাই নয় মাথার খুলিতেও হতে পারে। এমন কী ব্রেনের ভিতরেও হতে পারে। নখ, চোখেও হতে পারে। এই রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা খুব কম। তাই রাস্তাঘাটে মানুষ নিজের অজান্তেই এই রোগ ছড়াচ্ছেন। হাঁচি, কাশির মাধ্যমে TB ছড়িয়ে পড়ছে। TB সম্পর্কে স্পাইন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুহাশিস রায় এটাই জানাচ্ছেন।
হাড় বা স্পাইনাল কর্ডে TB কেন দেখা দেয়?
"সমীক্ষা করে দেখা গেছে, হাড় বা স্পাইনাল কর্ডের চিকিৎসার জন্য আমার কাছে এসেছেন এমন প্রায় ৬০ শতাংশই TB রোগী। হাড় বা স্পাইনাল কর্ডে রক্ত চলাচল খুব বেশি করে। তাই দেহের এই অংশে TB হওয়ার সম্ভবনা বেশি। মনে করুন, ফুসফুস বা পেটে TB হয়েছে। সেখান থেকে জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে সেই সব জায়গায় যেখানে রক্তের প্রবাহ খুব বেশি। স্পাইনাল কর্ড, হাড়, ব্রেন এসব জায়গায় রক্তের প্রবাহ খুব বেশি থাকে। তাই জীবাণু ছড়িয়ে খুব তাড়াতাড়ি এই সব জায়গায় বাসা বেঁধে ফেলে।"
হাড় বা স্পাইনাল কর্ডেই কি এই রোগের উৎপত্তি স্থান?
"৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই যক্ষ্মার উৎপত্তি স্থান ফুসফুস। এর পরে রয়েছে পেট এবং মূত্রথলি। অনেক সময় একহাত থেকেও অন্যহাতে এই রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।"
কোন অংশের হাড়ে বেশি দেখা দিতে পারে যক্ষ্মা?
"এখনও পর্যন্ত দেখা গেছে, সব থেকে বেশি স্পাইনাল কর্ডে দখা যায়। তারপর ঘাড় ও কাঁধের উপরের অংশে। অনেক সময় মুখেও দেখা যায়। শরীরের যে কোনও হাড়ে TB হতে পারে। এমন কী নখেও হয়।"
এক্ষেত্রে উপসর্গ কি?
"অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারেন না। কোমর, পিঠ কিংবা ঘাড়ে হয়তো ব্যথা। X-Ray রিপোর্টে ধরা পড়েছে স্পন্ডেলাইসিস। এরপর যখন রোগী আমাদের কাছে আসেন তখন আমরা অন্য আরও অনেক পরীক্ষা করাই। কারণ X-Ray-তে TB ধরা পড়ে না। অন্য পরীক্ষার পর রিপোর্টে TB ধরা পড়লে নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়া হয়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগীর পিঠ বেঁকে গেছে। কোমর বেঁকে গেছে। কুঁজ হয়েছে। এমন কী শরীরের কোনও অংশের হাড় ক্ষয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। রোগী উঠতে পারছেন না। এক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে নষ্ট হওয়া হাড় বাদ দিয়ে সেখানে কৃত্রিম হাড় লাগানো হয়। তারপর ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে তাঁকে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলা হয়। তবে অবশ্য ব্যথা হচ্ছে মানেই যে TB হয়েছে তা কিন্তু নয়। তবে ব্যথা যদি অনেকদিন ধরে হতে থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।"
এই রোগে সবথেকে বেশি কারা আক্রান্ত হন?
"ছোটো এবং বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম। তাই জীবাণু সংক্রমণের ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে যক্ষ্মা ধরা পড়ে। অন্যদের ক্ষেত্রে ধরা পড়তে ৫ থেকে ৬ বছর লেগে যায়। তবে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশি থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। এমনও হতে পারে, শরীরে TB-র জীবাণু রয়েছে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকার জন্য জীবনে কখনই এই রোগে আক্রান্ত হননি।"
এই রোগের ক্ষেত্রে প্রাণের ঝুঁকি কতটা?
"অবশ্যই প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে। স্পাইনাল কর্ড, ব্রেনে এই রোগ ধরা পড়লে সে ক্ষেত্রে প্রাণের ঝুঁকি থেকেই যায়। দেখা গেল, পেটের মধ্যে এমন ভাবে এই রোগের জীবাণু ছড়িয়েছে যে অনেকটা নাড়িভুঁড়ি কেটে বাদ দিতে হল। যাঁদের স্পাইনাল কর্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই রোগে, তাঁদের কৃত্রিমভাবে স্পাইনাল কর্ড তৈরি করতে হয়। এটা যথেষ্টই ঝুঁকির।