কলকাতা, 15 এপ্রিল: বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনে ময়দানজুড়ে প্রথা মেনে হল বারপুজো । মোহনবাগান তাদের নতুন বছরের প্রথম দিনটির উদযাপনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে । এদিন সাতসকালে ক্লাবের মূল প্রবেশদ্বারের নামাঙ্কন করা হয় কিংবদন্তি ফুটবলার প্রয়াত চুনী গোস্বামীর নামে । যার উদ্বোধন করলেন আরেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাসকর ।
নববর্ষের প্রথম দিন সকাল থেকেই কলকাতায় রীতিমতো তাপপ্রবাহের হলকা বয়েছে । তবুও ক্লাবের মূল প্রবেশদ্বারের নামাঙ্কন এবং বারপুজোকে কেন্দ্র করে মোহনবাগানে এদিন ছিল বাড়তি উদ্দীপনা । এর আগে ক্লাবের অত্যাধুনিক জিমের উদ্বোধন করা হয়েছে প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার এবং কোচ প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ।
এদিন সকাল থেকেই ক্লাব চত্বরে ছিল সানাইয়ের সুর, বারপুজোর তৎপরতা ৷ উপস্থিতি জনগণকে অভ্যর্থনা জানাতে খাবারের আয়োজনে ছিল ক্লাব তাবুতে । তবে এদিন, নতুন নামাঙ্কিত প্রবেশদ্বারের উদ্বোধনে সুনীল গাভাসকরের উপস্থিতি ছিল বাড়তি আকর্ষণের । এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও বাবুল সুপ্রিয় । ছিলেন চুনী গোস্বামীর স্ত্রী বাসন্তী গোস্বামী ।
নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে মোহনবাগানের মূল প্রবেশদ্বারটিকে । প্রবেশদ্বারের মাথায় ক্লাবের প্রতীক পালতোলা নৌকা । এছাড়াও নানা ম্যুরাল রয়েছে, যা প্রবেশদ্বারের সৌন্দর্য্য বাড়িয়েছে । উদ্বোধনের সময় চুনী গোস্বামীর স্ত্রীকে সেখানে ডেকে নেন সুনীল গাভাসকর । প্রবেশদ্বার উদ্বোধনের পরে ক্লাব লনে তৈরি মঞ্চে সুনীল গাভাসকরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় । ব্যাট ছাড়াও তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় রসগোল্লার হাঁড়ি এবং গাভাসকারের প্রিয় মিষ্টি দইয়ের হাঁড়ি ।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক গাভসকরকে বলা যায় ক্রিকেটের জীবন্ত দলিল । তাঁর কথায় সামনে এল ক্রিকেটার চুনী গোস্বামীর কথা । কিংবদন্তি বাঙালি ক্রীড়াবিদ, যাঁর দখলে একই বছরে সন্তোষ ট্রফি এবং রঞ্জি ট্রফি ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব রয়েছে । গাভসকরের কথায় এদিন উঠে আসে সেই রঞ্জি ম্যাচের ফাইনালের কথা ৷ সেদিনের সেই ফাইনালে বাংলা এবং মুম্বই পরস্পরের মুখোমুখি । ব্যাট হাতে অপ্রতিরোধ্য চুনী গোস্বামী । তাঁর 96 রানের মাথায় চুনীর ক্যাচ তালুবন্দি করেছিলেন সুনীল গাভাসকর ।
আরও পড়ুন: কলকাতা ময়দানের বারপুজোর কিছু কথা, কিছু সংস্কৃতি
নববর্ষের সকালে গাভাসকর স্বীকার করলেন, সেদিন ক্যাচটি বৈধভাবে তালুবন্দি করেননি তিনি । সতীর্থ সিনিয়র ক্রিকেটারের অনুরোধ সত্ত্বেও বৈধভাবে ক্যাচ ধরার দাবিতে সেদিন অটল ছিলেন গাভাসকর । যা তিনি ঠিক করেননি বলে এদিন স্বীকার করলেন সুনীল । ক্রিকেটে যদি ব্র্যাডম্যান থাকেন তাহলে ভারতীয় ফুটবলেও ব্র্যাডম্যান বলতে চুনী গোস্বামীকেই মনে করেন সানি ।
কলকাতায় আসতে বরাবারই ভালোবাসেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার । তিনি মোহনবাগান ক্লাবের প্রবেশদ্বারের উদ্বোধনে এসেছেন জানতে পেরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা খুশি হবেন বলেও এদিন জানান গাভাসকর । ছেলে রোহন গাভাসকরও ফুটবল ভক্ত, কারণ এই শহরে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছে সে । মোহনবাগানের এদিনের অনুষ্ঠানে বলাই দে, বিক্রম দেবনাথের মতো চুনী গোস্বামীর সতীর্থদের সংবর্ধিত করা হয় । সংবর্ধিত করা হয় জেভিয়ার পায়াস, দীপেন্দু বিশ্বাসকেও । অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সাংবাদিক জয়ন্ত চক্রবর্তী এদিন অসুস্থ হয়ে মঞ্চেই পড়ে যান । পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । আপাতত তিনি সুস্থ । মঞ্চে দুই মন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন মোহনবাগান সভাপতি স্বপনসাধন (টুটু) বসু । অনুষ্ঠানের পরে বারপুজো সংগঠিত হয় । বারপুজোর দিন চুনী গোস্বামীর নামাঙ্কিত মোহনবাগান ক্লাবের মূল প্রবেশদ্বারের এই উদ্বোধন বাড়তি মাত্রা যোগ করল ।