কলকাতা, 16 জানুয়ারি: প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষবারের মতো আয়োজিত হয়েছিল 2018 সালে। তবে সেই বছর সমাবর্তন সভা ক্যাম্পাসে না-হয়ে হয়েছিল নন্দন-3 প্রেক্ষাগৃহে। ওই প্রথমবার 200 বছরের নিয়ম ভেঙে প্রেসিডেন্সির বার্ষিক সমাবর্তন ক্যাম্পাসের বাইরে হয়েছিল। সমাবর্তন ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার, তাই ফিরিয়ে নিয়ে আসা হোক সেই অনুষ্ঠান (Students Demand to Start Convocation Again) ৷ এই দাবিতে আবার সরব হলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।
এই বিষয়ে বাংলা বিভাগের এক ছাত্রী অদ্রিজা কারক বলেন, "প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে এখানকার সমাবর্তন সভা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। গত চার বছর বন্ধ রয়েছে এই সমাবর্তন সভা। আমরা যেদিন এখান থেকে যারা পাশ করে বেরোব, ওই দিনটা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। কারণ ওই দিন আচার্যর হাত থেকে শংসাপত্র গ্রহণ করেন ছাত্রছাত্রীরা। অভিভাবকরা দর্শকের আসনে বসে থাকেন এবং তাঁদের সন্তানরা শংসাপত্র গ্রহণ করছেন সেই মুহূর্তটা পড়ুয়া এবং অভিভাবক উভয়ের কাছেই একটা গর্বের মুহূর্ত। তাই নতুন করে আবার এই সমাবর্তন সভা ফিরিয়ে আনা হোক।"
প্রেসিডেন্সি বিশ্বিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতি আনন্দরূপা ধর বলেন, "বার্ষিক সমাবর্তন সভা ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার ৷ এই অধিকার থেকে কেউ তাঁদের বঞ্চিত করতে পারে না। গত চার বছর এরকম একটা ঐতিহ্যশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ হয়ে রয়েছে কনভোকেশন। যারা পাশ করে যাচ্ছেন তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে এসে সাধারণভাবে শংসাপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। এটা আমাদের কাছে খুবই দুর্ভাগ্যের। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বারে বারে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। শেষ দু'বছর করোনার জন্য বন্ধ থাকলেও এখন পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়েছে তাই আবার সমাবর্তন সভা শুরু করা দাবিতে আমরা বেশ কয়েকবার কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশন দিয়েছি। কয়েকবছর বন্ধ থাকার পর এই বছর আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন সভা হল ৷ কিন্তু আমাদের এখানে এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও কর্ণপাত করছে না ৷ আমরা চাই এ বছর থেকে আবার শুরু হোক এই বার্ষিক সভা।"
আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্সিতে দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের দাবি ব্রেইল লাইব্রেরির
প্রসঙ্গত, 2018 সালে চল্লিশ মিনিটের ওই সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন না আচার্য অর্থাৎ রাজ্যপাল। ওইসময় রাজ্যপাল ছিলেন জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। এমনকী যেই ছাত্র-ছাত্রীরা শংসাপত্র নেবে তাঁরাও কেউ উপস্থিত ছিলেন না। শুধুমাত্র বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সাম্মানিক ডিলিট শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল। সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল হিন্দু হস্টেল নিয়ে। ওই সময় টানা চার বছর হস্টেল বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। এই দাবি তুলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয় গেটে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঢুকতে বাধা পান। এরপরে কতৃপক্ষের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ক্যাম্পাসের সমাবর্তন হবে না, তা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে অন্যত্র।