কলকাতা, 5 জুন: নিয়ম ভেঙে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হেল্প ডেস্ক দিয়েছে প্রায় প্রতিটি ছাত্র সংগঠন। ভরতির পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে হবে । তবে সঙ্গে থাকবে হেল্প ডেস্কও । শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ ছিল ভরতির সময় কোনও হেল্প ডেস্ক থাকবে না । তা সত্ত্বেও, বাম ছাত্র সংগঠনগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে হেল্প ডেস্কের ব্যবস্থা করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ । আর প্রতিটি হেল্প ডেস্ক থেকেই বিক্রি হচ্ছে পুরোনো বছরের প্রশ্নপত্র । তবে, টাকার বিনিময়ে বিগত বছরগুলির প্রশ্নপত্র দেওয়াকে বিক্রি বলে মনে করছে না হেল্প ডেস্ক দেওয়া সংগঠনগুলি । নতুন পড়ুয়াদের সাহায্য করতেই এটা করা হচ্ছে বলে তাদের দাবি ।
রাজ্য সরকারের নিয়ম থাকা সত্ত্বেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হেল্প ডেস্ক রাখা ও পুরোনো বছরের প্রশ্নপত্র টাকার বিনিময়ে বিক্রির বিষয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যাদবপুর শাখার আহ্বায়ক মেবার হোসেন বলেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি প্রক্রিয়া অনেকদিন ধরেই অনলাইনে হয়। কিন্তু, অনলাইনে হলেও সেখানে একটা প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন হয়, বিগত বছরে কী ধরনের প্রশ্ন হয়েছিল তা নিয়ে যদি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একটি ধারণা থাকে তাহলে তাঁদের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে সুবিধে হয়। এই জায়গায় কোনও ছাত্র-ছাত্রী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কোনও দিশা না পায়, আমরা যদি তাঁদের পাশে না দাঁড়াই, আমরা যদি সেই হেল্প তাঁদেরকে না করি তাহলে কীভাবে তাঁরা সেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় উপস্থিত হবে? তাই সেই সুবিধা যদি ছাত্র-ছাত্রীরা পায় সেই কথা মাথায় রেখেই আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই হেল্প ডেস্ক করেছি।"
শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা ভঙ্গ করে হেল্প ডেস্ক কেন দেওয়া হল? মেবার হোসেন বলেন, "দল অনেক সময় অনেক কিছু কথা বলে এসেছে এবং এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই তার বিরোধিতা করা হয়ে এসেছে। তবে এটা সরকারের ঠিক বিরোধিতা করা নয়। আমরা বেসিকালি ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থের কথা ভেবেই করেছি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরম্পরা রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানো সেই অনুযায়ীই আমরা হেল্প ডেস্ক দিয়েছি। এখানে সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে কোনও বিরোধিতা নেই বা তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না এরকমও কোনও বক্তব্য নেই। আমরা দলীয়ভাবে কথা বলেই কাজ করছি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমরা আমাদের মতো কাজ করছি।"
প্রশ্নপত্র বিক্রির বিষয়ে মেবার হোসেন বলেন, "পুরোনো বছরের প্রশ্নপত্র আমরা তো আর ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের ঘর থেকে দিতে পারি না। পুরোনো বছরের প্রশ্নপত্র ফোটোকপি করতে যে টাকাটা লাগছে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সেই টাকাটা নিয়েই প্রশ্নপত্র দেওয়া হচ্ছে। অথবা, তাদেরকে বলা হচ্ছে, এই প্রশ্নপত্র তুমি নিয়ে যাও এবং ফোটোকপি করে নাও। আমাদেরকে আমাদেরটা ফেরত দাও। বা তুমি যদি সফ্ট কপি নিতে চাও তাহলে মেইল আই ডি দাও, আমরা মেলে তোমাদের পাঠিয়ে দিচ্ছি। অন্যান্য সংগঠনও একইভাবে কাজ করছে । টাকা তোলাতুলি এই ধরনের কোন কথাই নেই এখানে।"
ছাত্র সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর এই ধরনের হেল্প ডেস্ক রাখা হয়। পুরোনো বছরের প্রশ্নপত্রও থাকে। এই বিষয়ে, SFI-এর সদস্য শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে SFI-এর পক্ষ থেকে প্রতিবছরই হেল্প ডেস্ক দেওয়া হয়। সেখানে বিগত বছরগুলির প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। বিশেষত সায়েন্সের ক্ষেত্রে কোনও প্রবেশিকা পরীক্ষা হয় না। সেক্ষেত্রে বিগত বছরের কাট অফ কী, কী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়, এই ধরনের নানান জিজ্ঞাসা থাকে। আমরা প্রতিবছর হেল্প ডেস্ক দিয়ে থাকি। এবছরও দিয়েছি।" টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র বিক্রির বিষয়ে বলেন, " না সেইরকম কোনও অভিযোগ নেই। প্রশ্নপত্রগুলি ফোটোকপি করতে যা টাকা লাগে, সেই রকমই কিছু টাকা নেওয়া হয় । দোকানে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন।"
FAS-এর পক্ষ থেকে হিমন বলেন, "রাজ্য সরকার থেকে বলা হয়েছে ভরতির সময় কোনোও হেল্প ডেস্ক দেওয়া যাবে না। তাঁরা যে যুক্তি দিচ্ছেন, প্রত্যেক বছর অ্যাডমিশনের সময় প্রচুর আর্থিক দুর্নীতি হয়, সিট কেনা বেচা চলে বহুবছর ধরেই। সেই জায়গায় আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর আজকে একটু বোধোদয় হয়েছে। তিনি বলছেন, এই জিনিসগুলি আটকাতে হবে, খুব খারাপ হচ্ছে। চলো আমরা হেল্প ডেস্ক তুলে দিই। কিন্তু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বহুকাল ধরে হেল্প ডেস্ক করে আসছি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চিরকাল ভরতি প্রক্রিয়া খুব গণতান্ত্রিকভাবে হয়। আপনারা কোনও বছর দেখাতে পারবেন না যে এখানে কোনওরকম দুর্নীতি হয়েছে। আমরা হেল্প ডেস্ক দিই কারণ, নতুন যারা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে আসছে তাদের সঙ্গে যাদবপুরের পরিবেশের একটা মেলবন্ধন যাতে ঘটে। নতুনদের সঙ্গে যারা সিনিয়র তাদের সঙ্গে যাতে একটা সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি হয় । নতুনদের আহ্বান জানানোর জায়গা থেকে আমাদের এই হেল্প ডেস্কটা দেওয়া হয়।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, যা ভরতি প্রক্রিয়া তা সব অনলাইনেই হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত পাঁচ বছর ধরেই সবকিছু অনলাইনে হচ্ছে। তাই প্রশ্নপত্র বলুন বা কী করে ফর্ম ফিলাপ হবে সবকিছুই অনলাইনে হচ্ছে। হেল্প ডেস্কে আমরা সেই রাস্তাটা খোলা রাখি যাতে, পড়ুয়ারা আমাদের সঙ্গে সামনাসামনি এসে কথা বলতে পারি । তিন চারদিন ধরে বসে আছি। অ্যাডমিশন নেওয়ার জন্য যারা এখনও প্রশ্নপত্র দেখেনি তাদেরকে প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন বোঝানোর জন্য এগুলি দেখানো হচ্ছে। তার পরেও যদি কোন ছাত্র-ছাত্রী প্রশ্নপত্র ওয়েবসাইটে না দেখে থাকে তাদেরকে আমরা বলছি প্রশ্নপত্রের বেশিরভাগটাই আপনারা ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। আমরা লিঙ্ক শেয়ারও করছি। কারোর যদি ওয়েবসাইটে দেখতে অসুবিধা হয় বা ওয়েবসাইটে দেখার পর একটা হার্ডকপি চাইলে সে কিনতে পারে। এখানে 9 বছরের প্রশ্নপত্র আছে। এই 9 বছরের প্রশ্নপত্রের ম্যাক্সিমাম দাম যা হতে পারে আমরা তাই নিই। প্রিন্ট করাতে যা খরচ হয়েছে, সেই দাম দিয়েই নেওয়া যাবে ।"
পুরো বিষয়টি নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু বলেন, "নতুন কিছু নয়। ওরা বিক্রি করে নি। ওরা প্রশ্নপত্র বিক্রি করেনি । ফোটোকপি করে পুরোনো বছরের প্রশ্নপত্র দিচ্ছে হেল্প করার জন্য। যেমন প্রতি বছর হয়। কর্তৃপক্ষ এটার সঙ্গে জড়িত নেই। আমরা এটা করতে বলিনি। এবং আমরা এটাকে সমর্থনও করি না।" বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কন্ট্রোলার অফ এগজ়ামিনেশন ও ডিন অফ স্টুডেন্টসের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্নেহমঞ্জু বসু।