কলকাতা, 3 এপ্রিল : শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গতকালই জানিয়েছিলেন, প্রযুক্তি বা দূরদর্শনের মাধ্যমে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠন-পাঠন চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর । এবার সেই পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হতে চলেছে । আজ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেন, 7 থেকে 13 এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন কলকাতা দূরদর্শনে একঘণ্টা করে ভার্চুয়াল ক্লাস হবে । নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষ অধ্যায়ের উপর ক্লাস নেবেন বিশিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরা । পড়ুয়াদের প্রশ্ন করারও সুযোগ থাকবে সেখানে । অনুষ্ঠানে আগে দেওয়া হবে ই-মেল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর । যেখানে পড়ুয়ারা প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে চেয়ে প্রশ্ন করতে পারবে । উত্তর দেবে শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরা । বাড়িতে বসে যতটা সম্ভব পঠন-পাঠন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই শিক্ষা দপ্তর থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী ।
দেশজুড়ে লকডাউন চলছে । লকডাউন শুরু হওয়ার অনেক আগেই 16 মার্চ থেকে রাজ্যের সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় 15 এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । টানা একমাস ছুটিতে পঠন-পাঠন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রথম থেকেই তৈরি হয়েছিল । একাধিক বেসরকারি স্কুল তাঁদের উন্নত পরিকাঠামোর মাধ্যমে অনলাইনে পঠন-পাঠন চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে । কিন্তু, রাজ্যের সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও স্পনসরড স্কুলগুলিতে অনলাইনে পঠন-পাঠন চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই বললেই চলে । কিন্তু একমাস ছুটিতে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পাঠ্যসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীতাও দেখা দিয়েছিল । সেই কারণেই স্কুল শিক্ষা দপ্তর পঠন-পাঠন চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প পথ খোঁজা শুরু করে । তাঁরই ফলস্বরূপ পর্ষদ, সংসদ, বিশেষজ্ঞ কমিটি, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পর রাজ্য সরকার বিদ্যালয় স্তরে, বিশেষ করে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা, যারা আগামী বছর বোর্ডের পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তাদের জন্য কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । যার মধ্যে রয়েছে দূরদর্শনের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস করানোর বিষয়টিও ।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমি আগেই বলেছিলাম যারা বাড়িতে বসে আছে, মাধ্যমিক স্তর এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত, তারা যেন বাড়িতে বসে পড়াশোনা চালু রাখতে পারে তার জন্য আমরা প্রযুক্তির সাহায্য নেব । আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী 7 থেকে 13 এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিন, প্রতিদিন বিকেল 4 টে থেকে 5 টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা করে দূরদর্শনে, ডিডি বাংলা চ্যানেলে আমাদের শ্রেণিকক্ষ শিক্ষা চালু হবে । এক ঘণ্টা শ্রেণিকক্ষ পরিবেশে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম যে রকম হয় সেভাবে আমরা শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি ।"
শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, প্রতিদিন দূরদর্শনে প্রচারিত অনুষ্ঠানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির যে বিষয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ের উপর আলোচনা করা হবে, তা নিয়ে পড়ুয়াদের যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তা তারা করতে পারবে । বলেন, "ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠানের আগে বা অনুষ্ঠান চলাকালীন ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফোন করে প্রশ্ন করতে পারবেন । যদি কোনও পড়ুয়া প্রশ্ন করেন তাহলে যে শিক্ষক বা শিক্ষাবিদ ক্লাস নেবেন তিনি সেই প্রশ্নের উত্তর দেবেন । অনুষ্ঠানের পর বাড়িতে বসে করার জন্য একটি আক্টিভিটি টাস্ক দেওয়া হবে । পড়ুয়ারা তা বাড়িতে বসে করবে এবং বিদ্যালয় যখন খুলবে তখন স্কুলের শিক্ষকের কাছে তা জমা দিতে হবে ।" প্রাথমিকভাবে দূরদর্শনের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল ক্লাস 13 এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী ।
শুধু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য নয় । অন্যান্য শ্রেণির জন্যও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর । শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল প্রি-প্রাইমারি থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত কোনও পড়ুয়াকে ডিটেনশন করা যাবে না । কিন্তু, বাড়িতে বসে একটা মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্কের ব্যবস্থা সব শ্রেণির জন্য চালু করা হচ্ছে । বিদ্যালয় খুললে যা তাদের শিক্ষকদের কাছে জমা করতে হবে । 6 এপ্রিল থেকে এটা চালু করা হবে ।"
কীভাবে এই অ্যাক্টিভিটি টাস্কের ব্যবস্থা করা হবে? শিক্ষামন্ত্রী জানান, একটি করে অ্যাক্টিভিটি টাস্ক বা অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে সব শ্রেণির পড়ুয়াদের । 6 এপ্রিল থেকে বাংলার শিক্ষা পোর্টালে (https://banglarshiksha.gov.in) এবং এডুকেশন হেল্পলাইনে ফোন করে (18001037033) পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির জন্য এই মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক পাওয়া যাবে । বিদ্যালয় শিক্ষকরা প্রয়োজনমতো এই মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক পরিবর্তন করে SMS, ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তা পৌঁছে দেবেন। বাড়িতে বসে সেই টাস্ক সম্পূর্ণ করে বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষকদের কাছে জমা করতে হবে পড়ুয়াদের। তবে, কোনও অবস্থাতেই পড়ুয়ারা যেন বাড়ির বাইরে না বের হন সেই দিকটিও নজরে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, "বিদ্যালয় শিক্ষকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা যেন SMS, ই-মেল, ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং অ্যাক্টিভিটি টাস্ক সম্পূর্ণ করতে তাদের সাহায্য করেন।"
স্কুল শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও দ্রুত এই ধরনের কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে বলে আজ ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী । বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে সমস্ত কলেজ আছে তাঁরা ইতিমধ্যেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্লাস চালু করেছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা খবর পাচ্ছি। বিভিন্ন কলেজ উদ্যোগী হয়ে আরম্ভ করে দিয়েছে। এই বিষয়ে আমরা একত্রিত করে জানাব। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে আছেন তাঁরা যেন খবর নেয় যে, তাঁদের জন্য কিছু করা হয়েছে কি না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও খবর রাখতে বলব। কারণ, বাড়িতে বসেও যতটা সম্ভব শিক্ষা দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা দরকার।"