কলকাতা, 3 জুন : জয়শ্রীরাম বলা ও BJP-র কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করায় রাতারাতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীকে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস থেকে হরিণঘাটার ক্যাম্পাসে বদলির অভিযোগ উঠল।
অভিযোগকারী কর্মচারীর নাম প্রলয় দত্ত। সুরঞ্জন দাশ উপাচার্য থাকাকালীন সময় থেকে 6 বছরের উপর উপাচার্যের অফিসে কাজ করছেন।
প্রলয় দত্তর অভিযোগ, শুক্রবার ষষ্ঠ পে কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রতিবাদে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেছিল BJP কর্মচারী সেল। সেখানে তিনিও অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভ শেষে অফিসে ফেরার পরই তাঁর হাতে বদলির বিজ্ঞপ্তি ধরানো হয় বলে অভিযোগ । যদিও, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বদলির নির্দেশিকাটি 29 মে-র।
প্রলয়বাবু বলেন, " BJP-র কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্যই আমাকে বদলি করা হয়েছে। আমার সঙ্গে আরও 6 জনকে বদলি করা হয়েছে । তাঁদের এই ঘর থেকে পাশের ঘরে বদলি করা হয়েছে । কিন্তু, আমাকে পাঠানো হয়োছে হরিণঘাটায় ।"
তিনি আরও বলেন, " আমি থাকি বেলঘরিয়ায়। আমার বাড়ি থেকে হরিণঘাটা যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। সেই কারণেই আমি আমার সংগঠনের লোকজনকে বললাম। আমার একটাই প্রার্থনা যে উপাচার্য এই সিদ্ধান্ত বিবেচনা করবেন।"
প্রলয়বাবু জানাচ্ছেন, শুক্রবার BJP-র কর্মচারী সংগঠনের সদস্য হিসেবে সংগঠনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি। ওইদিনই বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষের পর তাঁর হাতে ধরানো হয় বদলির নির্দেশ। অথচ, ওই বদলির তালিকায় আরও 6 জনের মধ্যে 5 জনকে এক বিভাগ থেকে আর এক বিভাগে বদলি করা হয়েছে। আর একজনকে সল্টলেকের ক্যাম্পাসে বদলি করা হয়েছে। তবে ওই কর্মচারীর বাড়ি সল্টলেকেই হওয়ায় তাঁর কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
তাঁর অভিযোগ, শুধু তাঁকেই বাড়ি থেকে অতদূরে বদলি করা হয়েছে। তাঁকে কলেজ স্ট্রিটে উপাচার্যের অফিস থেকে বদলি করা হয়েছে হরিণঘাটার রেডিওফিজিক্স ও ইলেকট্রনিকস ক্যাম্পাসে। প্রলয়বাবুর বক্তব্য, রাজনৈতিক অভিসন্ধিতেই তাঁকে বদলি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, " সেটাই হয়েছে। রাজনৈতিক অভিসন্ধিতেই এটা করা হয়েছে। মোট 7 জনকে বদলি করা হয়েছে। তার মধ্যে 6 জনকে এঘর থেকে ওঘর ট্রান্সফার করা হয়েছে। আর আমাকেই এত দূরে বদলি করা হয়েছে। আমি উপাচার্যের ঘরে খুব সুন্দর কাজ করতাম। কোনও গাফিলতি ছিল না।"
বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে BJP-র কর্মচারী সেল ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিস কর্মচারী পরিষদও। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিস কর্মচারী পরিষদের রাজ্য সভাপতি মন্মথ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, " এটা তো বোঝায় যাচ্ছে যে এটা কর্তৃপক্ষের একটা প্রতিহিংসাপরায়ণ সিদ্ধান্ত । তবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে উপাচার্যকে এই কারণে দোষারোপ করছি না যে, তাঁকে কোনও একটা মহল থেকে প্রভাবিত করা হয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমার এটা মনে হয় যে, এই সমস্যাটা মিটে যাবে। লিখিতভাবে আমরা জানিয়েছি এবং কিছু সময়ের মধ্যে আমরা ওনার সঙ্গে বসব। সেক্ষেত্রে এই ট্রান্সফারটা সম্ভবত বাতিল হবে।"
মন্মথবাবুর প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বদলি সংক্রান্ত আইন তৈরি হয়েছিল 2012 সালে। বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণকারী বডি সিন্ডিকেটে বদলির নীতি তৈরির জন্য একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি কোনও রিপোর্ট জমা করেনি। তাহলে কীসের ভিত্তিতে এই বদলি করা হয়েছে?
মন্মথবাবু বলেন, " বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। শুধুই বিরোধী দলের কর্মচারী সংগঠনের উপর আক্রমণ নেমে আসছে। আমরা আশা রাখছি এই মানসিকতা থেকে প্রশাসন সরে আসবেন। আমাদের সদস্যের ট্রান্সফার বাতিল করবেন এ বিশ্বাস আমাদের আছে। আর যদি তা না করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শৃঙ্খলার অবনতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।"