কলকাতা, 14 ডিসেম্বর: একজনের বয়স 38 । অন্যজন অষ্টাদশী । সম্পর্কে মা-মেয়ে । গড়িয়াহাটে বৃদ্ধা খুনের দুই মাস্টারমাইন্ড । এই দুজনের সঙ্গেই প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল সৌরভ পুরীর । যে নিজের হাতে বৃদ্ধার দেহ থেকে মাথা আলাদা করেছিল । তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে এমন তথ্যই ।
পঞ্জাব থেকে ধৃত সৌরভের মোবাইল ফোন খতিয়ে দেখে চোখ কপালে উঠেছে গোয়েন্দাদের। একই মোবাইলে দুটি হোয়াটসঅ্যাপ। একটিতে প্রেমালাপ চালাত বৃদ্ধা উর্মিলা কুমারীর বড় বৌমা ডিম্পলের সঙ্গে। অন্যটিতে অষ্টাদশী ডিম্পল কন্যা কনিকার সঙ্গে। আজ পাটিয়ালা আদালতে সৌরভকে পেশ করে কলকাতা পুলিশ। তার পাঁচ দিনের ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এদিকে ডিম্পল এবং কনিকার 24 তারিখ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন আলিপুর আদালতের বিচারক।
12 ডিসেম্বর সকাল সাড়ে 11 টা নাগাদ 2B গরচা ফার্স্ট লেনের বাসিন্দা উর্মিলা কুমারীর গলাকাটা দেহ ঘরের বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন বাড়ির পরিচারিকা । দেহ দেখে শিউড়ে ওঠেন তিনি । চিৎকার করে ডাকেন প্রতিবেশী দেবলিনা দাসের পরিবারকে । দাস দম্পতি ঘরে ঢুকে দেহ দেখার পর গড়িয়াহাট থানায় খবর দেয় । পুলিশ এসে দেহ নিয়ে যায় । শুরু হয় খুনের তদন্ত ।
ছোট ছেলে এবং বৌমার সঙ্গে ভাড়া ঘরে থাকতেন মৃত উর্মিলা কুমারী । তাঁর বড় ছেলের মৃত্যু হয়েছে । উর্মিলা কুমারীর বড় ছেলের স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েরা থাকে রিচি রোডে । মেজো ছেলে পরিবার নিয়ে থাকেন শিলিগুড়িতে । উর্মিলা দেবী মাঝেমধ্যেই পঞ্জাবে আত্মীয়দের বাড়িতে যেতেন । মাসখানেক আগেই পঞ্জাব থেকে গড়চা রোডের বাড়িতে ফেরেন তিনি ।
বুধবার তাঁর ছোট ছেলের পরিবার শিলিগুড়িতে যায় । সেই সুযোগে একমাস আগের পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দেয় ডিম্পল-কনিকা এবং তাদের প্রেমিক সৌরভ । জেরায় ডিম্পল-কনিকারা জানিয়েছে, উর্মিলার কথামত পরিবারকে চলতে হত । তাঁর হাতেই ছিল টাকা-পয়সা সহ অন্য সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ।
বড় ছেলের মৃত্যুর পর তাঁদের পারিবারিক ব্যবসায় লাভের টাকার সমান ভাগ ডিম্পলরা পেত না। তাদের মাসোহারার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন উর্মিলা। সেই বিষয়টি পছন্দ হয়নি ডিম্পলের। ডিম্পল-কণিকারা চাইছিল ওই ব্যবসার লাভের টাকার সমান ভাগ । পাশাপাশি রিচি রোডের ফ্ল্যাটটিও তাঁদের নামে লিখিয়ে নিতে চাইছিল তারা । কিন্তু ডিম্পল-কণিকাদের দাবিতে কর্ণপাত করেননি উর্মিলা । তাদের জয়েন্ট লকারের চাবিও ডিম্পলকে দেননি উর্মিলা । এইসব কারণেই 2014 থেকে একটু একটু করে ক্ষোভ জমছিল ।
স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই সৌরভের সঙ্গে আলাপ হয় ডিম্পলের । সেখান থেকে প্রেম । এরই মধ্যে তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে কণিকাও । মা-মেয়ে দুজনেই বিষয়টি জানত । সৌরভের বয়স 22 বছর । পারিবারিক বিষয়টি তাঁর সামনে বারবার এই বলতো ডিম্পল । সেই সূত্রেই একমাস আগে তৈরি হয় উর্মিলাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক ।
সুযোগ চলে আসে উর্মিলার ছোট ছেলে শিলিগুড়ি যাওয়ায় । ওইদিন ঠাকুমার জন্য ঘুমের ওষুধ মেশানো খাবার নিয়ে আসে কণিকা । সেই খাবার খাইয়ে উর্মিলা ঘুমানো পর্যন্ত সেখান থেকে যায় সে । উর্মিলা ঘুমিয়ে পড়তেই চলে আসে সৌরভ । এর পর ঠাকুমার মুখে বালিশ চাপা দেয় কনিকা । এদিকে ছুরি চালাতে থাকে সৌরভ । কণিকার সামনেই উর্মিলার মৃত্যু নিশ্চিত করতে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দেয় সৌরভ । তারপর দুজনেই ফেরে রিচি রোডের ফ্ল্যাটে ফেরে । পরদিন সকালের ফ্লাইটেই পাঞ্জাব চলে যায় সৌরভ ।