কলকাতা, 21 জানুয়ারি: রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে শাসক থেকে বিরোধী আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে ধর্ম। বিশেষ করে এ রাজ্যরাজনীতিতে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি যখন হিন্দুত্বে শান দিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করতে চাইছেন, রাজনীতি থেকে প্রশাসন তাঁর অস্ত্র হল সব ধর্মকে সম্মান, সবাইকে নিয়ে চলা।
বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি রাজ্যে ‘দ্বিতীয় মুসলিম লিগের সরকার’ চলছে বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তার জবাব দিতে গিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু পাল্টা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়ে। শুভেন্দু অধিকারীর থেকে তিনি কোনও অংশে হিন্দুত্ব নিয়ে কম জ্ঞান রাখেন না। এই অবস্থায় হিন্দুত্ব অস্ত্রকে সামনে রেখে বিজেপি শুক্রবার রাজভবন যাবে ৷ ঠিক তখন, রাজ্যে একটি নতুন হাসপাতালের উদ্বোধন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ধর্ম নিয়ে এই রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ অব্যাহত রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার নিউটাউনের বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবী শেঠীর উদ্যোগে তৈরি হতে চলা এক বেসরকারি হাসপাতালের উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও একবার সবাইকে নিয়ে চলার বার্তা দিলেন।
হাসপাতালের উদ্বোধনী মঞ্চে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের পোলিও নির্মূল অভিযানের প্রসঙ্গও টানে আনেন। কীভাবে তাঁর সরকার পোলিও নির্মূল অভিযানের সাফল্য পেয়েছেন সেই কথাও শোনান তিনি। তিনি বলেন, "আমি সরকারে এসে ভাবলাম, যদি সকলকে পোলিও টিকা দিতে হয়, তাহলে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে। তখন আমি পুরোহিত থেকে ইমাম, সকলকে বলেছিলাম আপনারা পুজো করুন, রোজা রাখুন, কিন্তু আগে সমাজের দায়িত্ব পালন করুন।"
তিনি আরও বলেন, "অনেকে তখন ভাবত, পোলিও টিকা নিলে কিছু খারাপ হবে। আমি সেই ধারণা ভেঙেছিলাম। পুরোহিত ও ইমামরা এক্ষেত্রে আমাদের খুব সাহায্য করেছিলেন। পরের বছর রাজ্যকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এটা কি আমাদের গর্বের বিষয় নয় ?" মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, কোনও ধর্মকে আক্রমণ নয় বরং সকলে মিলিতভাবে চললেই সমাজ পরিবর্তন সম্ভব।
এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "একবারও ভেবে দেখেছেন, যদি সব মানুষকে নিয়ে কাজ করলে কত ভালো কাজ করা যায় ?" তাঁর সংযোজন, "কে বলেছে আমি আমার ধর্মকে শ্রদ্ধা করি না ? ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।"
প্রসঙ্গত, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর করা 'মৃত্যুকুম্ভ' টিপ্পনি এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে চর্চার বিষয়। কেউ তাঁর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন, আবার কেউ সমর্থন করছেন। এসবের মাঝেই তাঁর এই মন্তব্য ধর্মকে অশ্রদ্ধা করার জন্য নয়, সেটাই স্পষ্ট করতে চাইছেন মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। এদিন মুখ্যমন্ত্রী কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। বরং, রাজ্যের উন্নয়ন ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখাই তাঁর অগ্রাধিকার। রাজ্যের উন্নয়ন তাঁর প্রধান লক্ষ্য।